তুরাগে লাশ উদ্ধার: ধর্ম ভাই-বোন পরিচয়ে জড়ান সম্পর্কে, স্বামীর হত্যা মামলা 

নুরুল আমিন হাসান, উত্তরা (ঢাকা) 
Thumbnail image

রাজধানীর তুরাগের একটি ফ্ল্যাটে ‘ধর্ম ভাই-বোন’ পরিচয়ে থাকা মো. ইব্রাহিম হোসেন (২৬) ও মৌসুমি ইয়াছমিন সুমির (৪১) লাশ উদ্ধারের ঘটনায় মামলা হয়েছে। মৌসুমির স্বামী ফারুক বাদী হয়ে হত্যা মামলাটি করেছেন। 

তুরাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবু সাঈদ মিয়া আজ মঙ্গলবার (১২ মার্চ) সন্ধ্যায় আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নিহত মৌসুমির স্বামী ফারুক বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেছেন। ওই মামলায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত আমরা কাউকে আটক বা গ্রেপ্তার করতে পারিনি।’ 

নিহত দুজনের মধ্যে সম্পর্কের বিষয়ে জানতে চাইলে আবু সাঈদ বলেন, ‘তাঁরা ভাই­-বোন পরিচয় দিয়ে সম্পর্কে জড়িয়েছিল।’ 

এর আগে তুরাগ থানাধীন কামারপাড়া ইউসিবি ব্যাংকের সামনের গলির শাহাব উদ্দিনের ৮ নম্বর বাসার ৬ তলা থেকে গতকাল সোমবার (১১ মার্চ) দিবাগত রাতে তাদের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সুমিকে গলা কাটা ও ইব্রাহিমের গলায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়। তারা ধর্ম ভাই-বোন পরিচয় দিলেও তা নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। 

নিহতরা হলেন, ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলার শেখ হাসেমের ছেলে মো. ইব্রাহিম হোসেন (২৬) ও চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার আশ্বিনপুর নায়েরগাঁও গ্রামের গ্রামের মৃত মোশারফ হোসেনের মেয়ে মৌসুমি ইয়াছমিন সুমি (৪১)। 

সরেজমিনে দেখা যায়, গলাকাটা অবস্থায় খাটের বিছানার ওপর পড়ে ছিল ওই নারীর মরদেহ। পাশে ছিল একটি রক্তাক্ত চাকু। অপরদিকে বাসার ফ্লোরের মধ্যে পরে ছিল যুবকের মরদেহ। তার গলার মধ্যে প্লাস্টিকের তার প্যাঁচানো অবস্থায় ছিল। 

এ বিষয়ে তুরাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মোস্তফা আনোয়ার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ওই রুমের দরজাটি ভেতর থেকে লাগানো ছিল। পরে পুলিশ গিয়ে দরজা ভেঙে দুটি লাশ পরে থাকতে দেখে। নারীর মরদেহটির গলা কাটা এবং পুরুষের মরদেহের গলায় দাগ রয়েছে।’ 

এক প্রশ্নের জবাবে ওসি আনোয়ার বলেন, ‘তারা দুজন ধর্মের ভাই-বোন ছিল। একই সঙ্গে দীর্ঘদিন থেকে তাদের মধ্যে যাতায়াত ছিল।’ 

কীভাবে নিহত হয়েছে—এমন প্রশ্নের জবাবে ওসি আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘নারীর মরদেহটি গলা কাটা ছিল। ধারণা করা হচ্ছে গলা কেটে তাকে হত্যা করা হয়েছে। পুরুষের মরদেহটির গলায় দাগ রয়েছে। মনে হচ্ছে তিনি গলায় ফাঁস লাগিয়েছিলেন, পরে রশি ছিঁড়ে পড়ে গেছেন।’ 

নিহত দুজনের মরদেহের সুরতহাল রিপোর্ট এবং তাদের হত্যার আলামত সংগ্রহ শেষে ময়নাতদন্তের জন্য সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। 

নিহত ইব্রাহিমের ভাই আনোয়ার হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা বাড্ডাতে থাকি। ইব্রাহিম ব্যবসা করতেন। তিনি অবিবাহিত ছিলেন। তাই কামারপাড়ার ওই বাড়িতে একাই বসবাস করতেন।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘ইব্রাহিম ও মৌসুমির মধ্যে অনৈতিক সম্পর্ক ছিল। আমরা বিষয়টি বহু আগেই টের পেয়েছি। তাই তাদের দুজনকেই বারবার মানা করেছি। কিন্তু তবুও তারা শুনে নাই।’ 

নিহত মৌসুমির স্বামী ফারুক আখতার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ফারুক ও মৌসুমি ধর্ম ভাই-বোন। তাদের এ সম্পর্ক বছরের পর বছর ধরে। মৌসুমির কাছ থেকে ইব্রাহিম ৩৫ হাজার টাকা নিয়েছিল। সে টাকা চলতি মাসের ১৩ তারিখে দিয়ে দেওয়ার কথা ছিল।’ 

ফারুক আখতার আরও বলেন, ‘আমরা তুরাগের কামারপাড়া থাকি। আমাদের সংসারে দুটি ছেলে রয়েছে। বড় ছেলে একাদশ শ্রেণিতে এবং ছোট ছেলে নবম শ্রেণিতে লেখাপড়া করে। সোমবার বিকেলে ছেলেরা জানিয়েছে, তাদের মা দুপুর ১২টার দিকে বাসা থেকে বের হয়েছে। পরে আর সে বাসায় ফিরে নি। পরে রাতে পুলিশের মাধ্যমে খবর পেয়ে ইব্রাহিমের বাসায় গিয়ে তার গলাকাটা লাশ দেখতে পাই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত