যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে রোহিঙ্গা কিশোর-কিশোরীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ১৫ মে ২০২৪, ২১: ০৩

কক্সবাজার এবং ভাসানচরের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া কিশোর-কিশোরীরা যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে। তবে সম্মানহানির ভয়ে তারা এগুলো নিয়ে অভিযোগ করতে চায় না। ক্যাম্পে থাকা ২৫ শতাংশ কিশোরী এবং ১৮ শতাংশ কিশোর জানিয়েছে তারা অযাচিত যৌন সংস্পর্শের (সেক্সুয়াল কন্টাক্ট) শিকার হয়। আর ২০ বছরের আশেপাশে থাকা ৪৪ শতাংশ তরুণী এবং ৩৩ শতাংশ তরুণও একই অভিজ্ঞতার কথা জানায়।  

জেন্ডার অ্যান্ড এডোলেসেন্স গ্লোবাল এভিডেন্স (গেজ) প্রোগ্রামের আওতায় করা এক গবেষণায় এ সব তথ্য উঠে এসেছে। 

আজ বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে ব্র‍্যাক ইনস্টিটিউট অব গভার্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, ব্র‍্যাক জেমস পি গ্রান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথ এবং ব্র‍্যাক বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত ‘লার্নিং ফ্রম রিসার্স অন এডোলেসেন্ট ওয়েলবিয়িং ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক কর্মশালায় এই গবেষণার তথ্য উপস্থাপন করা হয়। 

আয়োজকেরা জানান, গবেষণার অংশ হিসেবে কক্সবাজার ও ভাসানচরে আশ্রয় নেওয়া বিভিন্ন বয়সী কিশোর-কিশোরী ও নারী-পুরুষের ওপর জরিপ পরিচালনা করা হয়। যৌন হয়রানি বিষয়ক জরিপে অংশ নেন ৯০৭ জন।

গবেষণায় দেখা যায়, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোয় মোবাইলে নারীদের আপত্তিকর ভিডিও ছড়িয়ে দিয়ে হয়রানির ঘটনা ঘটে থাকে। কিশোরীরা বাসার বাইরে বের হলে বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হয়।

কর্মশালায় বয়ঃসন্ধীকালীন কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বাল্যবিয়ে ও দক্ষতা উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা করা হয়। উন্নয়নকর্মী, বিশেষজ্ঞ ও সরকারি কর্মকর্তারা বলেন, বাংলাদেশে বাল্যবিয়ে একটি বড় সমস্যা। যৌন হয়রানি বাল্যবিয়ের একটি কারণ। বিভিন্ন নীতি ও পদক্ষেপ থাকা সত্ত্বেও বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোয়ও বাল্যবিয়ে কিশোরীদের স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অতিরিক্ত পররাষ্ট্রসচিব ড. মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বাংলাদেশের জন্য বোঝা। তাদের দ্রুত প্রত্যাবাসন প্রয়োজন।’ কিশোর-কিশোরীদের সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘বয়ঃসন্ধিকালের ছেলে-মেয়েদের মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক সুস্থতার একটি গুরুতর সমস্যা রয়েছে। কারণ এই সময়ে তারা শরীর ও মনের পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য, সুশিক্ষা এবং অন্যান্য দিক নিশ্চিত করতে হবে, যাতে আমরা বড় হওয়ার ইতিবাচক অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করতে পারি।’ 

মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কেয়া খান বলেন, ‘বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু আমাদের ডেটার কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বাল্যবিয়ের খবর পেলে সেখানে যায় এবং বাল্যবিয়ে বন্ধ করে। অভিভাবকদের শাস্তি দেয়। কিন্তু শাস্তি দেওয়া বাল্যবিয়ে প্রতিরোধের পথ হতে পারে না।’

ইউএনএফপিএ এর ন্যাশনাল প্রোগ্রাম অফিসার মুহাম্মদ মুনির হোসেন বলেন, ‘মেয়েরা মাধ্যমিকে ভালো করছে। ছেলেরা পিছিয়ে পড়ছে। অনেকেই অর্থনৈতিক কারণে পড়াশোনা ছেড়ে কাজে যুক্ত হচ্ছে। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগেই তার হাতে টাকা আসতে শুরু করছে। তখন সে বিয়ে করছে। আর পাত্রী হিসেবে অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোরী মেয়েদের বেছে নিচ্ছে। এটাও বাল্যবিয়ের একটা কারণ হতে পারে। এটা নিয়েও কাজ করা দরকার।’

কর্মশালায় বক্তারা কিশোর-কিশোরীদের শিক্ষা, সুস্বাস্থ্য ও সুন্দর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত