স্বতন্ত্র প্রার্থীর বেশি ভোট পাওয়া নিয়ে আ. লীগের ২ নেতার বাগ্‌বিতণ্ডা

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি
Thumbnail image

শেখ রাসেলের জন্মদিন উপলক্ষে দলীয় কার্যালয়ে আজ মঙ্গলবার আলোচনা সভার আয়োজন করে মানিকগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ। এতে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বেশি ভোট পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে কথা বলার একপর্যায়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির সঙ্গে সাধারণ সম্পাদকের বাগ্‌বিতণ্ডা হয়।

এর আগে জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী গোলাম মহিউদ্দীন প্রত্যাশার চেয়ে কয়েক গুন কম ভোট পেয়ে নির্বাচিত হওয়ায় দলীয় কর্মীদের নাম প্রকাশ না করে সমালোচনা করেন। 

জেলা পরিষদ নির্বাচনে মোট ৮৮৯ ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আনারস প্রতীক ৪৫২ ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন গোলাম মহীউদ্দীন। অন্যদিকে তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী চশমা প্রতীকের প্রার্থী কেএম বজলুল হক খান রিপন ৪২৫ ভোট পেয়ে পরাজিত হন।

আলোচনা সভায় সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং সদ্য বিজয়ী জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম মহিউদ্দীন। সভাপতি বক্তব্যে তীব্র ক্ষোভের সঙ্গে নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্য বলেন, ‘আপনাদের প্রচেষ্টায়, আপনাদের সহযোগিতায়, আপনাদের আন্তরিকতায় একটি নাম না জানা অপরিচিত-অখ্যাত লোকের (জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী বজলুল রহমান খান রিপন) সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আমাকে নির্বাচিত হতে হয়েছে। আমার বিজয়ের সব সুনাম আপনাদের।’ 

গোলাম মহিউদ্দীন বলেন, ‘আচ্ছা! ওনার (বজলুল হক খান রিপন) তো কোনো নির্বাচনী অফিস ছিল না, উনি তো কোনো নির্বাচনী ক্যাম্পে ছিল না, ওনার জন্য তো কেউ মিছিল করেনি, ওনার জন্য কেউ মিটিং করেনি, ওনার জন্য বিএনপি, জাসদ ও জাতীয় পার্টি মাঠেও নামেনি। তাহলে কোন শক্তির বলে উনি আমাকে খেয়ে ফেলতে চেয়েছিল?’ 

গোলাম মহিউদ্দীন বলেন, ‘আমাকে খাওয়া মানে এই সভায় যারা উপস্থিত আছেন তাদের সবাইকে খাওয়া। শুধু তাই নয়, যিনি আমাকে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভানেত্রীকে খাওয়ার অপপ্রয়াস চলছে।’ 

গোলাম মহিউদ্দীন নেতা-কর্মীদের প্রশ্ন করে বলেন, ‘প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রিপন যদি খালেদা জিয়ার মনোনীত হতো, বিএনপি বা জাতীয় পার্টি মনোনীত হইলেও হতো? তাহলে কিসের বলে, কোন শক্তির বলে তিনি এত ভোট পেল? এতটুকু বিশ্লেষণ না করতে পারলে তো রাজনীতি করতে পারব না।’ 

গোলাম মহিউদ্দীন আরও বলেন, ‘সত্য হলেও আমাদের মধ্যে মতবিরোধ আছে। ক্ষীণ হলেও আমাদের মধ্যে অনৈক্য আছে। ক্ষীণ, অনৈক্য নিয়ে আমরা কীভাবে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে জাহিদ মালেক স্বপনকে জেতাবো, কীভাবে নাঈমুর রহমান দুর্জয়কে জেতাবো, কী করে মমতাজ বেগমকে জেতাবো। এটা ভাবতেছেন না?’ 

গোলাম মহিউদ্দীন বলেন, ‘এই মুহূর্তে নির্বাচনের ভোটের পরিসংখ্যান মাইকে বলা ঠিক না? সিঙ্গাইরে আমার বিরোধী শক্তি ১১৭ ভোট, আর আমার ভোট ৩৮, সদরে আমার বিরোধী শক্তি ৭১ ভোট, আর আমার ভোট ৭৩ তেমনি সাটুরিয়া আমার বিরোধী শক্তির ৬০ ভোট, আর আমার ভোট ৫৮, হরিরামপুরে আমার বিরোধী শক্তির ৭৩ ভোট আর আমার ৯৫ ভোট।’ 

এই বক্তব্যের পর পর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম কিছু একটা বলে গোলাম মহিউদ্দীনকে থামাতে গেলে দুজন সভায় তর্কবিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। একপর্যায়ে গোলাম মহিউদ্দীন পার্টির জেলা সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালামকে বলেন, ‘আমাকে জ্ঞান দিয়েন না।’ 

তাঁর বক্তব্যের প্রেক্ষিতে সালাম বলেন, ‘এটা জ্ঞানের কথা না।’ এ সময় মহিউদ্দীন বলেন, ‘আপনি রাখেন, স্টপ থাকেন।’ 

এ সময় সালাম বলেন, ‘আপনি ধমক দেন ক্যান।’ এ সময় মহিউদ্দীন টেবিল চাপড়ে সালামকে বলেন, ‘আমি ধমক দিবো না মানে? আপনি কয়দিন পার্টি অফিস করছেন।’ এরপর সালাম টেবিল থেকে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলেন, ‘আস্তে?’ এ সময় একজন আরেকজনকে আঙুল তুলে ধমকের সুরে কথা বলতে থাকেন। 

পরে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুলতানুল আজম খান আপেল এবং সিনিয়র সহসভাপতি আব্দুল মজিদ ফটো উত্তেজিত দুজনকে থামানোর চেষ্টা করেন। এ সময় জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র অনেক নেতা, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের নেতারা চুপ থাকেন। 

ঘটনার সময় উপস্থিত সাংবাদিকেরা তাঁদের বক্তব্য রেকর্ড করতে গেলে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সিফাত কোরাইশী সুমন একটি জাতীয় দৈনিকের জেলা প্রতিনিধিকে পার্টি অফিস থেকে বের করে দেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুমন এর জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। 

এদিকে বক্তব্য শেষে গোলাম মহিউদ্দীন তাঁর বিজয়ের জন্য নিজের ছবি না দিয়ে দলীয় প্রধান এবং মন্ত্রী-এমপিদের ছবি দিয়ে জেলা শহরে আনন্দ শোভাযাত্রা করতে অনুরোধ করেন। 

এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুলতানুল আজম খান আপেল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দলের সেক্রেটারি আব্দুস সালামসহ কিছু নেতার কারণে জেলা পরিষদ নির্বাচনে গোলাম মহিউদ্দীন আশানুরূপ কম ভোট পেয়েছেন। আজ তিনি সভাপতির সাথে যে আচরণ করেছেন তা গ্রহণযোগ্য না।’ 

আর জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি আব্দুল মজিদ ফটো আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দলের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে একটু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। পরে আবার ঠিক হয়ে গেছে। এর বেশি কিছু বলতে পারব না।’ 

আওয়ামী লীগের জেলা সভাপতি গোলাম মহিউদ্দীন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নির্বাচনে এত কম ভোট পেয়ে নির্বাচিত হওয়ার পেছনে দলীয় নেতা-কর্মীদের হাত থাকতে পারে। তবে নির্বাচন নিয়ে চক্রান্ত যাই হোক তা মন্ত্রী জাহিদ মালেক এবং এমপি মমতাজ বেগমের অজান্তে হয়েছে। আওয়ামী লীগের প্রতি মানুষের আস্থা আছে বলে আমি কম ভোট পেলেও বিজয়ী হয়েছি।’ 

প্রসঙ্গত, মানিকগঞ্জ জেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় সমর্থনে আনারস প্রতীক নিয়ে ২৭ ভোট বেশি পেয়ে দ্বিতীয়বারের মতো চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম মহীউদ্দীন। অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী বজলুল হক রিপন গত জেলা পরিষদ নির্বাচনে ৫০টি ভোট পেয়েছিলেন। তিনি সুপ্রিম কোটের আইনজীবী হিসেবে নিয়োজিত আছেন। তাঁর কোনো দলীয় পদ নেই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত