Ajker Patrika

মেলা যেন বাহারি মানুষের হাট

শরীফ নাসরুল্লাহ, ঢাকা
আপডেট : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৭: ৩০
প্রিয় লেখকের বই দেখছেন কয়েকজন। গতকাল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অমর একুশে বইমেলা প্রাঙ্গণে। ছবি: আজকের পত্রিকা
প্রিয় লেখকের বই দেখছেন কয়েকজন। গতকাল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অমর একুশে বইমেলা প্রাঙ্গণে। ছবি: আজকের পত্রিকা

মোহাম্মদ, আব্দুল্লাহ, বায়জিদ, কেফায়াতুল্লাহ—চার তরুণ। রাজধানীর কাকরাইল মসজিদ মাদ্রাসা থেকে তাঁরা এসেছেন। বইমেলায় ঘুরছেন, দেখছেন। বই তখনো কেনেননি। পছন্দ হলে তবে কিনবেন। আব্দুল্লাহ বললেন, ‘আমাদের পরীক্ষা ছিল। এ কারণে এত দিন আসতে পারিনি। আজ শেষ হয়েছে, তাই চলে এলাম।’

মাদ্রাসাশিক্ষার্থী এই তরুণেরা কী ধরনের বই পছন্দ করেন? কথা বলে জানা গেল, সৃজনশীল বইয়ের কাতারে উপন্যাসই তাঁদের পছন্দ। প্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদ।

বইমেলা মানেই থরে থরে সাজানো বই। পাঠকের জন্য অপেক্ষা। বিক্রয়কর্মীদের তোড়জোড়। নানা প্রান্ত থেকে রকমারি পাঠকের মিলনমেলা। তাঁরা দেখেন, কেনেন, বই নিয়ে চলে আড্ডা। শুধু বই কিনতেই কি আসে সবাই? না, তা নয়। কেউ বাহারি নকশার স্টলের সামনে তোলেন সেলফি, কারও স্রেফ ঘুরতে আসা, কেউ সঙ্গ দেন বইপ্রেমীর; কেউ আঁকে মানুষের মুখ, কেউ বেচে ফুল। বইমেলা তাই হয়ে ওঠে যেন বাহারি মানুষের হাট।

মরিয়ম খাতুন আর তাঁর নাতির বয়সী আঁখি গোলাপ আর টায়রা বিক্রি করে বইমেলায়। ফুল বিক্রি করে চলে তাদের সংসার। বইমেলা তাদের কাছে উপার্জনের এক সুযোগ। তবে এবার বিক্রির কাটতি মন্দের দিকে। মরিয়ম জানান, মেলায় ফুল বিক্রি সুবিধার না। গতকাল বিক্রি করেছেন মোটে ৩০০ টাকা। তাঁর ভাষ্য, ‘মাইনষের কাছে মনে হয় ট্যাকা নাই। তাই কিনতাছে না।’

বইমেলার এক দারুণ অনুষঙ্গ মানুষের মুখের ছবি আঁকা। বাগেরহাটের মোহাম্মদ নিয়াজ তেমন শিল্পী। তিনি বসে আছেন কারও মুখ আঁকার অপেক্ষায়। পেছনে ঝুলছে তাঁরই আঁকা কিছু মানুষের মুখ—সেলেনা গোমেজ, সালমান শাহ, লিওনেল মেসি, এস এম সুলতান, জেমস, ঐশ্বরিয়া রাই, ম্যারাডোনা। খানিক গল্প হয় তাঁর সঙ্গে। ২০০৫ সালের কথা। নিজের ছোট বোন একটি স্টলে কাজ করেন। ছোট বোনকে মেলায় নিয়ে আসেন তিনি। বোন কাজ করেন, এই সুযোগে তিনি ঘুরে দেখেন মেলা। হঠাৎ একদিন চোখ যায় মেলার এক কোণে বসা শিল্পীর দিকে। তিনি মেলায় আসা মানুষের মুখ আঁকছেন। নিয়াজের বেশ পছন্দ হয় কাজটি। আগেই আঁকিবুঁকি করতেন। এবার বাসায় গিয়ে শুরু হলো অনুশীলন। একদিন নিজের বাবার একটি ছবি এঁকে ফেলেন। ব্যস, আত্মবিশ্বাস বেড়ে গেল। বাবার সেই ছবিই ২০০৫ সালে মেলা শেষ হওয়ার ঠিক তিন দিন আগে মেলার এক কোণে টানিয়ে দেন। একজন আসেন তাঁর বাচ্চা মেয়ের ছবি আঁকাতে। নিয়াজ আঁকেন। বেশ ভালো হয় ছবিটি। তার পর থেকে প্রতিবার মেলায় মানুষের মুখ এঁকে যান নিয়াজ।

এমন নানা মানুষ আর পাঠকের এই মেলা ক্রমেই জমে উঠেছে।

নতুন বই

পাঞ্জেরি পাবলিকেশনস নিয়ে এসেছে নির্বাচিত ১৪টি সুইডিশ ছোটগল্প ‘প্যারিসের প্রতিবিম্ব’। সুইডিশ থেকে ভাষান্তর করেছেন লিয়াকত হোসেন।

তালুকদার সারোয়ার জাহান আরেফিন নিয়ে এসেছেন ‘ভাটিবাংলার লোককাহিনি ও লোকসংস্কৃতি’। বইটি নিয়ে জানা গেছে, ভাটিবাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চল, হাওর, বাঁওড় এলাকার নদীবিধৌত এক উপদ্বীপ, বর্ষায় চারদিকে শুধু পানি আর পানি, ধারা অঞ্চলের লোককাহিনি আর লোকসংস্কৃতি উঠে এসেছে বইটিতে। বইটি নিয়ে এসেছে বিভাস।

অন্তিক মাহমুদের ক্রাইম থ্রিলার ‘ভুল’ বের করেছে অধ্যয়ন। বইয়ের ফ্ল্যাপে লেখা হয়েছে, উগ্রবাদীদের হাতে জিম্মি থাকা মানুষকে বাঁচাতে এক ডিটেকটিভের কাহিনি নিয়ে বইয়ের আখ্যান।

বাংলা একাডেমি জানিয়েছে, গতকাল নতুন বই এসেছে ৮৪টি। মোট বই এসেছে ৭৩৭টি।

আয়োজন

গতকাল বিকেল ৪টায় বইমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘ড. মনিরুজ্জামানের সময়রেখা: ভাষাবিজ্ঞানের ত্রিকালদর্শী পরিব্রাজক’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মাশরুর ইমতিয়াজ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন সালমা নাসরীন ও মামুন অর রশীদ। সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক মনসুর মুসা।

মাশরুর ইমতিয়াজ বলেন, ড. মনিরুজ্জামান ভাষাবিজ্ঞানের দুরূহ পথে শুধু সরলরৈখিকভাবেই পরিভ্রমণ করেননি, বরং নজর দিয়েছেন অতীতের ভাষিক নিরীক্ষায় এবং ভবিষ্যতের ভাষা-গবেষণার সুলুকসন্ধানে। প্রতিভার মৌলিকত্বে তিনি তাঁর স্বকীয় অবস্থান নিশ্চিত করেছেন।

গতকাল ‘লেখক বলছি’ মঞ্চে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কুদরত-ই-হুদা ও হিজল জোবায়ের। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ছিল মো. আনোয়ার হোসেনের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘আরশিনগর বাউল সংঘ’, সানজিদা আহমেদ লাবণ্যের পরিচালনায় নৃত্যসংগঠন ‘নৃত্য সংসদ’ এবং মজিবুর রহমান বিরহীর পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘বিরহী শিল্পীগোষ্ঠী’-এর পরিবেশনা।

আজ মঙ্গলবার। অমর একুশে বইমেলার ১১তম দিন মেলা শুরু হবে বেলা ৩টায় এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত