ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার সবাইকে ঈদের আগে মুক্তি দেওয়ার দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ২২ জুন ২০২৩, ১৯: ২৫
আপডেট : ২২ জুন ২০২৩, ১৯: ৪৪

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার সবাইকে ঈদের আগে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন ডিএসএ ভিক্টিমস নেটওয়ার্কের নেতারা। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নসরুল হামিদ মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করা হয়। 

সংবাদ সম্মেলনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধন নয়, আইনটি বাতিলের দাবি জানান ডিএসএ ভিক্টিমস নেটওয়ার্কের নেতারা। একই সঙ্গে ঈদের আগেই শিক্ষার্থী খাদিজা, ইছমাইল, তারিকুলসহ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কারাবন্দী সবার নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান তাঁরা। 

সংবাদ সম্মেলনে অবিলম্বে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ সব নিপীড়নমূলক আইন বাতিল, সব ক্ষতিগ্রস্তকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ, মিথ্যা মামলাকারীদের উপযুক্ত শাস্তি এবং সরকারের এমন নিপীড়নমূলক আইন বানানোর একচ্ছত্র ক্ষমতার জবাবদিহি নিশ্চিতের দাবি জানানো হয়। 

সংগঠনটির আহ্বায়ক গোলাম মাহফুজ জোয়ারদারের সভাপতিত্বে সংগঠনের সদস্য দিদারুল ভূঁইয়ার সঞ্চালনায় লিখিত বক্তব্য পেশ করেন ডিএসএ ভিক্টিমস নেটওয়ার্কের সদস্যসচিব প্রীতম দাশ। 

সংবাদ সম্মেলনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কারাগারে থাকা খাদিজাতুল কুবরার বোন সিরাজুম মুনিরা, এ মামলায় ভুক্তভোগী এন ইউ আহমেদ, সোনিয়া আক্তার স্মৃতি, শেখ রিয়াদ মোহাম্মদ নুর, ওয়াসিম ইফতেখারুল হকসহ বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী তাঁদের বর্তমান অবস্থা ও কষ্ট এবং হয়রানির চিত্র তুলে ধরে বক্তব্য দেন। 

লিখিত বক্তব্যে প্রীতম দাশ বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের কোনো ধরনের নিরাপত্তা বিধান করছে না। বরং এই আইনের মাধ্যমে বিরুদ্ধ মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে মারাত্মকভাবে খর্ব করা হচ্ছে। এই আইন হয়ে দাঁড়িয়েছে সরকারের লুটপাট, পাচার ও জুলুমের নিরাপত্তার বর্ম। রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, শিক্ষার্থীসহ সাধারণ নারী-পুরুষ এমনকি শিশুরাও এই আইনে আক্রান্ত হচ্ছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাংলাদেশের সব মানুষকে অনিরাপদ করে তুলেছে এবং সব নাগরিকের মাঝে ভয়ের সংস্কৃতি জোরদার করেছে। 

প্রীতম দাশ জানান, সরকারি তথ্য অনুযায়ী ২০২৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ৭ হাজার ১টি মামলা করা হয়েছে। ডিএসএ ভিক্টিমস নেটওয়ার্ক সর্বশেষ ১ হাজার ৩৩১টি মামলার তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে দেখেছে এই মামলাগুলোতে ৪ হাজার ১৬৯ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ মামলা হয়েছে রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে ৪৩১টি, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ৩৬৮টি এবং শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ১৩৪টি। 

প্রীতম দাশ আরও বলেন, এ থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়, রাজনৈতিক কর্মী, সাংবাদিক, সমাজকর্মী এমনকি ছাত্রছাত্রী ও সাধারণ নাগরিকদের ওপর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন দমন-পীড়নের অন্যতম হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। সরকার ডেটা প্রটেকশন অ্যাক্টসহ নিপীড়নমূলক একাধিক নতুন আইন বানানোর উদ্যোগ নিয়েছে। এর আগের তথ্যপ্রযুক্তি আইনেও অনেকে এখনো জুলুমের শিকার হচ্ছেন। 

সংবাদ সম্মেলনে অন্য বক্তারা বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করা হয়েছে। ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে প্রীতম দাশ ও ঝুমন দাশ আপনকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা ও গ্রেপ্তার করা হয়। একইভাবে সারা দেশের বিভিন্ন জায়গায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার তথাকথিত অভিযোগে মুসলমান সম্প্রদায়ের অনেকের ওপর এই আইনে মামলা ও গ্রেপ্তার করা হয়। এই আইন দ্বারা সাংবাদিক, নারী, শিক্ষার্থীদেরও নাজেহাল ও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। 

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে অনেককে নাজেহাল করা হচ্ছে দাবি করে তাঁরা বলেন, র‍্যাব হেফাজতে মারা যাওয়া সুলতানা জেসমিনের ওপর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়েছিল। এ আইনে দীর্ঘ ১০ মাস বিনা বিচারে আটক থাকা অবস্থায় জেলে মারা গেছেন লেখক মুশতাক আহমেদ। সংবাদপত্রে মাছ, মাংস ও চালের স্বাধীনতাবিষয়ক প্রতিবেদন করার কারণে সাংবাদিক শামসুজ্জামান শামসকে ডিএসএ মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। এই আইনে দীর্ঘ ১০ মাস ধরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরা কারাগারে আটক রয়েছেন। উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থী মো. ইছমাইল, মো. তরিকুল ইসলামসহ অসংখ্য মানুষ দীর্ঘদিন ধরে নির্যাতনের শিকার হয়ে কারাগারে আটক রয়েছে। ঈদের আগেই কারাবন্দী সবার নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান তাঁরা। 

দাবি মানা না হলে অবিলম্বে সারা দেশে এই আইনের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত সবাইকে নিয়ে বৃহত্তর কর্মসূচির ডাক দেওয়া হবে বলেও জানান নেতারা।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত