পঞ্চমের আগেই ৮ম শ্রেণি পাস, জালিয়াতি করে চাকরি বাগিয়ে নেওয়ার অভিযোগ

শিবালয় (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৬ অক্টোবর ২০২২, ২১: ৪৩

মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার ষাইটঘর তেওতা উচ্চ বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী (পরিচ্ছন্নকর্মী) পদে শিক্ষা সনদ জালিয়াতি করে চাকরি বাগিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ফরিদুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। 

এ বিষয়ে বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীরা মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও শিবালয় নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর পৃথক দুটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। এরই মধ্যে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল লতিফ। 

বঞ্চিত চাকরি প্রার্থীরা লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেন, ষাইটঘর উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও অফিস সহায়কের যোগসাজেই ঘুষ দুর্নীতির মাধ্যমে সনদ ছাড়া অযোগ্যদের নিয়োগ দিয়েছেন। 

উল্লেখ্য, চলতি মাসের ২ অক্টোবর নিয়োগ কমিটির মাধ্যমে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষা শেষে ফরিদুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তিকে নিয়োগ দেওয়া হয়। বিধি অনুযায়ী চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী (পরিচ্ছন্নকর্মী) পদে প্রার্থীদের জেএসসি বা অষ্টম শ্রেণি পাসের শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদসহ আবেদন করতে বলা হয়। ২০০৯ সালে জাফরগঞ্জ কাজী সফিউদ্দিন মাদ্রাসা থেকে অষ্টম শ্রেণি পাস করার সনদসহ আবেদন করেন ফরিদুল ইসলাম। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফরিদুল ইসলাম শিবালয় উপজেলার নিহালপুর-২ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ২০১৫ সালে পিইসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ ২.৫০ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। যার তথ্য উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে রয়েছে বলে জানান ওই বিদ্যালয়েরই শিক্ষক আব্দুস সালাম। পরে আর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি না হয়ে ২০০৯ সালে জাফরগঞ্জ কাজী সফিউদ্দিন মাদ্রাসা থেকে অষ্টম শ্রেণি পাস করা সনদ দিয়ে আবেদন করেন ফরিদুল ইসলাম। অর্থাৎ তথ্য অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে, পঞ্চম শ্রেণি পাসের আগেই অষ্টম শ্রেণি পাস করেছেন তিনি! 

জাফরগঞ্জ কাজী সফিউদ্দিন দাখিল মাদ্রাসায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নিয়োগপ্রাপ্ত ফরিদুল ইসলাম উক্ত মাদ্রাসায় কখনো ভর্তি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পাসের আগে অষ্টম শ্রেণি পাসের সনদ কীভাবে পেলেন জানতে চাইলে উক্ত মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক আফজাল হোসেন কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। তবে তিনি বলেন, এ রকম অষ্টম শ্রেণির সনদ বিশেষ কারও অনুরোধে বা মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য অনেক সময় দেওয়া হয়েছে। 

ষাইটঘর তেওতা উচ্চ বিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও নিয়োগ কমিটির অন্যতম সদস্য মো. আতোয়র রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, সনদের তথ্য গোপন রেখে চাকরি নিলে অবশ্যই তা বিধি মোতাবেক বাতিল করা হবে। সনদসহ অন্যান্য কাগজ যাচাই-বাছাইয়ের সময় যে তথ্য পেয়েছি তার ভিত্তিতেই নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করেছি।

 নিয়োগপ্রাপ্ত ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি চতুর্থ শ্রেণিতে ফেল করে ৫ম শ্রেণিতে না পড়েই ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে জাফরগঞ্জ কাজী সফিউদ্দিন মাদ্রাসায় ভর্তি হই।’ তবে ২০০৯ সালে জেএসসি পাসের জোর দাবি করেন তিনি। 

২০১০ সালে প্রথম জেএসসি পরীক্ষার কারিকুলাম প্রচলন হলেও তার এক বছর আগেই জেএসসি কীভাবে পাস করলেন জানতে চাইলে তিনি সদুত্তর দিতে পারেননি। আর ২০১৫ সালে পিইসি পাসের কথা অস্বীকার করেন তিনি। 

এ বিষয়ে মানিকগঞ্জ জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার রেবেকা জাহান বলেন, ‘জেলা প্রশাসক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছে এক ব্যক্তি। বিষয়টি নিয়ে আমাকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। এরই মধ্যে আমি তদন্তে কাজ শুরু করেছি।’ 

মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল লতিফ বলেন, ‘অভিযোগপ্রাপ্তির প্রেক্ষিতে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে এ বিষয়ে তদন্তের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’ 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত