দেশে নয়, বিদেশে বাড়ছে পাটপণ্যের চাহিদা 

ফরিদপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ১১ জুন ২০২৪, ১৭: ০৯
Thumbnail image

সোনালি আঁশ খ্যাত পাটের নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। যা বহির্বিশ্বে ঠাঁই করে নিচ্ছে। পাট থেকে উৎপাদিত বস্ত্রের পাশাপাশি দখল নিচ্ছে বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী। যা থেকে দুই শর অধিক পণ্যসামগ্রী উৎপাদিত হচ্ছে এ দেশের উদ্যোক্তা ও কারিগরি শিল্পের হাত থেকে। তবে এসব পণ্যের চাহিদা দেশে কম থাকলেও ব্যাপকভাবে চাহিদা বাড়ছে বিদেশে। ইউরোপসহ অন্তত ৫০টি দেশে যাচ্ছে এসব পাটপণ্য। পাটপণ্য তৈরিকারক উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য উঠে এসেছে। 

দেশের পাটের রাজধানী খ্যাত ফরিদপুর জেলায় ৮ জুন জেলা প্রশাসনের আয়োজনে তিন দিনব্যাপী বসে পাটপণ্য মেলা। জেলা প্রশাসক কার্যালয় চত্বরে মেলার উদ্বোধন করেন পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক। এ মেলায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ২৫টি স্টলে বসে আকর্ষণীয় পাটপণ্যের সমাহার। 

মেলা ঘুরে দেখা যায়, পাট থেকে তৈরি হয়েছে বিভিন্ন ধরনের ব্যাগ, বাস্কেট, মাদুর, বেণি, লন্ড্রি বাস্কেট, পাপস, টিস্যু বক্স, রসই, বিভিন্ন ধরনের শৌখিন সামগ্রীসহ দুই শর অধিক পাটপণ্য। যা রীতিমতো মানুষকে আকর্ষণীয় করে তুলেছে। তবে মেলায় এসে উদ্যোক্তারা আশাহত। তাঁরা বলছেন, পাটপণ্য কেনায় মানুষের আগ্রহ কম। দেশের বাজারের চেয়ে বিদেশে পাটপণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে বলে দাবি তাঁদের। 

তাঁরা বলছেন, আমেরিকা, কানাডা, চীন, ইতালি, জার্মান, নেদারল্যান্ডস, দুবাইসহ ইউরোপের দেশগুলোতে এসব পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এসব দেশসহ কমপক্ষে ৫০টি দেশে তাঁদের তৈরি পণ্য যাচ্ছে বলে মেলায় আসা উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। 

গত পাঁচ বছর ধরে ফরিদপুর থেকে নিজের তৈরি পাটপণ্য শুধু চীনে পাঠাচ্ছেন আলেয়া জুট প্রোডাক্টস অ্যান্ড হ্যান্ডিক্র্যাফটের উদ্যোক্তা আলেয়া বেগম। এই উদ্যোক্তা বলেন, ‘দেশের বাইরে ভারতেও পাটপণ্য মেলায় অংশ নিই। কিন্তু সেখানে এর চাহিদা থাকলেও আমাদের দেশে তেমন নেই। ফরিদপুর শহরে একটি দোকানও নিয়েছিলাম, কিন্তু চাহিদা কম থাকায় সেটি ছেড়ে দিয়েছি। তবে আমার তৈরি পণ্য বিদেশে চাহিদা থাকায় প্রতিষ্ঠানটি ঘুরে দাঁড়িয়েছে।’ 

এই উদ্যোক্তা বলেন, ‘আমাদের দেশে প্রচার-প্রচারণা কম থাকায় এসব পণ্য কিনতে মানুষের আগ্রহ কম রয়েছে। এ ছাড়া তারা শুধু দাম শুনেই চলে যায়। কিন্তু আমি কয়েক বছর যাবৎ চীনে প্রায় এক শ ধরনের পণ্য পাঠাচ্ছি। সেখানে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বছরে তিন থেকে চারবার সেখানে আমার পণ্যগুলো বায়ার এসে নিয়ে যায়। তবে অন্য দেশগুলোতে আমার যোগাযোগব্যবস্থা না থাকায় সেখানে দিতে পারছি না। এ জন্য আমি সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা কামনা করছি।’ 

মেলায় এসেছিল রাজবাড়ী থেকে এলিট জুট প্রোডাক্ট। তাদের তৈরি পাটপণ্য অন্তত ৩৫টি দেশে যাচ্ছে বলে দাবি করেন। এই প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ইয়াছিন খান জানান, তাঁরা মূলত বাইরের দেশের জন্য পণ্য তৈরি করে থাকেন। দেশে চাহিদা কম রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। 

ইয়াছিন খান বলেন, ‘আমাদের কারখানায় প্রায় দুই শর অধিক পণ্য তৈরি করে থাকি। এর মধ্যে বাস্কেট, ফ্লোর ম্যাট, ব্যাগ, নার্সারি পটসহ এ জাতীয় পণ্যের অনেক চাহিদা রয়েছে ইউরোপের দেশগুলোতে।’ 

জেলা প্রশাসক কার্যালয় চত্বরে পাটমেলা। ছবি: আজকের পত্রিকাশুধু ব্যাগ তৈরি করে থাকেন ইজমা ব্র্যান্ড নামে একটি প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানটিতে ৭০টির বেশি নকশার ব্যাগ তৈরি হয়। তাদের তৈরি ব্যাগগুলো আমেরিকা ও দুবাইয়ে বছরে দুবার পাঠিয়ে থাকেন। প্রকৃতি নামে অপর একটি প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ জানায়, তাদের তৈরি পাটপণ্য যাচ্ছে ইতালি, জার্মানি, নেদারল্যান্ডসসহ ১০টি দেশে। এ ছাড়া মেলায় আসা স্টল ঘুরে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এসব পাটপণ্য প্রায় ৫০টি দেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। 

তবে আন্তর্জাতিক বাজারে এসব পণ্যের চাহিদা, পরিচিতি আরও বাড়াতে সরকার ও সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান উদ্যোক্তারা এবং তাঁদের অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতা করার কথাও জানান। 

এ মেলার উদ্বোধনী দিনে ফরিদপুরে পাট খাত সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেছেন, ‘পাটপণ্য বিশ্ববাজারে অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছে। আমাদের ছোট ছোট উদ্যোক্তা বিশ্ববাজারে তাদের তৈরি পণ্য রপ্তানি করছে। তাদের মাধ্যমে দেশে বৈদেশিক মুদ্রা আসছে। ইনশাল্লাহ আমরা পাটপণ্যেও বিশ্ববাজার দখল করব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কারা পরিদর্শক হলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক

ট্রাম্পের অভিষেক: সি আমন্ত্রণ পেলেও পাননি মোদি, থাকছেন আরও যাঁরা

ট্রাম্পের শপথের আগেই বার্নিকাটসহ তিন কূটনীতিককে পদত্যাগের নির্দেশ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে: সলিমুল্লাহ খান

সংস্কারের কিছু প্রস্তাবে মনঃক্ষুণ্ন বিএনপি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত