শোলাকিয়ায় ঈদের জামাত সকাল ৯টায়, নাশকতার আশঙ্কা করছে না পুলিশ

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৫ জুন ২০২৪, ১৫: ৫৭
আপডেট : ১৫ জুন ২০২৪, ১৬: ২১

ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহে এবার সকাল ৯টায় ঈদুল আজহার জামাত অনুষ্ঠিত হবে। জামাতে মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদের ইমামতি করার কথা থাকলেও তিনি অসুস্থ হওয়ায় বিকল্প হিসেবে ইমামতি করবেন বড় বাজার মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা শোয়াইব আব্দুর রউফ। 

এটি এই ঈদগাহের ১৯৭তম জামাত। জামাতের জন্য সার্বিক প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন শোলাকিয়া ঈদগাহ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ। 

আজ শনিবার দুপুরে শোলাকিয়া ঈদগাহ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ এবং পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ শোলাকিয়া মাঠের প্রস্তুতি নিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেছেন। পরে র‍্যাব-১৪-এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মো. আলিমুজ্জামান শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের প্রস্তুতির বিষয়ে সাংবাদিকদের জানান।

শোলাকিয়া ঈদগাহ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘দূর-দূরান্ত থেকে যে মুসল্লিরা এখানে নামাজ আদায় করতে আসবেন, তাঁদের জন্য সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। পর্যাপ্ত পরিমাণে অজুর পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। মুসল্লিদের জন্য পর্যাপ্ত ওয়াশরুমের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। মুসল্লিদের যদি কোনো শারীরিক সমস্যা হলে এখানে মেডিকেল ক্যাম্প থাকবে তাৎক্ষণিক চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এখানে কাজ করবেন। ওয়াচ-টাওয়ার ও মাঠের আশপাশে পর্যাপ্তসংখ্যক সিসিটিভি স্থাপন করা হয়েছে যেন নিরাপত্তা বিঘ্নিত না হয়। পর্যাপ্ত পুলিশ, র‍্যাব, আনসারসহ আমাদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা দায়িত্ব পালন করবেন। এ ছাড়া দুই প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হবে।’ 

জেলা প্রশাসক বলেন, ঈদের জামাতে অংশগ্রহণের জন্য মুসল্লিদের জন্য ‘শোলাকিয়া এক্সপ্রেস’ নামে দুটি স্পেশাল ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতে অংশগ্রহণের সুবিধার্থে ভৈরব-কিশোরগঞ্জ-ভৈরব ও ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহ লাইনে শোলাকিয়া এক্সপ্রেস নামে দুটি স্পেশাল ট্রেন চলাচল করবে। শোলাকিয়া এক্সপ্রেস-১ ভৈরব থেকে ছাড়বে সকাল ৬টায়, কিশোরগঞ্জ পৌঁছাবে সকাল ৮টায়, আবার কিশোরগঞ্জ থেকে ছেড়ে যাবে দুপুর ১২টায় ভৈরব পৌঁছাবে বেলা ২টায়।  শোলাকিয়া এক্সপ্রেস-২ ময়মনসিংহ থেকে ছাড়বে সকাল পৌনে ৬টায়, কিশোরগঞ্জ পৌঁছাবে সকাল সাড়ে ৮টায়, আবার কিশোরগঞ্জ থেকে ছেড়ে যাবে দুপুর ১২টায় এবং ময়মনসিংহে পৌঁছাবে বেলা ৩টায়।  

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ বলেন, ‘শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের নিরাপত্তাব্যবস্থা আমরা তিনটি ভাগে বিভক্ত করেছি। প্রথম হচ্ছে ঈদ–পূর্ববর্তী যেটা এখন চলছে। আমরা সে অনুযায়ী কাজ করছি। দ্বিতীয়টা হচ্ছে, ঈদের দিন জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৯টায়। জামাতের জন্য পূর্ণাঙ্গ বিস্তৃত পরিকল্পনা রয়েছে। তৃতীয়টা হচ্ছে, ঈদ–পরবর্তী পরিকল্পনা। ড্রোন ক্যামেরার মাধ্যমে পুরো এলাকার ফুটেজগুলো আমরা সংগ্রহ করব। নিরাপত্তার ব্যাপারে কোনো ধরনের সন্দেহ হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করব। এ ছাড়া প্রত্যেকটি গেটে আর্চওয়ে থাকবে। এর মধ্য দিয়ে এই নিরাপত্তা বলয় পার হয়ে মাঠে প্রবেশ করতে হবে এবং প্রত্যেককে সার্চ করার জন্য মেটাল ডিটেক্টর থাকবে।’ 

পুলিশ সুপার জানান, পুরো মাঠে যে দিক দিয়েই মুসল্লি প্রবেশ করবেন, সেই গেটগুলোতে পর্যাপ্তসংখ্যক নিরাপত্তা ফোর্স দিয়ে চেকপোস্ট ডিউটি করা হবে। এ ছাড়া আশপাশে যেসব স্থাপনা রয়েছে, প্রত্যেকটা স্থাপনাতে পুলিশ ডিউটিতে থাকবে। ইতিমধ্যে পুলিশের গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন সেখানে কাজ করছে। আশপাশের যে হোটেল–রেস্টুরেন্টগুলো রয়েছে, সেগুলোকেও নিরাপত্তার আওতায় আনা হয়েছে এবং সার্চ অব্যাহত রাখা হয়েছে। এ ছাড়া কোনো ধরনের নাশকতার আশঙ্কা নেই বলে জানান এ কর্মকর্তা।

র‍্যাব-১৪–এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মো. আলিমুজ্জামান বলেন, র‍্যাব কর্তৃক বিশদ নিরাপত্তা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এই মাঠে আসা–যাওয়ার গেটগুলো রয়েছে, সেখানে র‍্যাব সদস্যরা মোতায়েন থাকবেন। ওয়াচ-টাওয়ারে স্বয়ংক্রিয় স্নাইপার রাইফেল থাকবে যেন যেকোনো ধরনের নাশকতা প্রতিরোধ করতে পারেন। বেশকিছু প্যাট্রোল কার থাকবে, যেগুলো শহরের বিভিন্ন এলাকায় টহল দেবে। ট্রেনে করে দূর–দূরান্ত থেকে মুসল্লিরা নামাজ আদায় করতে আসেন এখানে, তাই তাঁদের নিরাপত্তার জন্য ভৈরব ও কিশোরগঞ্জ রেলস্টেশনে র‍্যাব মোতায়েন থাকবে বলে জানান এ কর্মকর্তা।

প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মহুয়া মমতাজ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোস্তাক সরকার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মোহাম্মদ নূরে আলম, র‍্যাব-১৪ সিপিসি-২ কিশোরগঞ্জ ক্যাম্পের কোম্পানি অধিনায়ক স্কোয়াড্রন লিডার মো. আশরাফুল কবির, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মনতোষ বিশ্বাস, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তঅ ও ঈদগাহ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. আবু রাসেল, কিশোরগঞ্জ মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা প্রমুখ।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত