সদরঘাটে উপচে পড়া ভিড়, বাড়ি ফিরতে ছুটছে যাত্রীরা

সাইফুল মাসুম, ঢাকা
প্রকাশ : ০৮ জুলাই ২০২২, ২০: ০০
আপডেট : ০৮ জুলাই ২০২২, ২০: ৫৭

অধিকাংশ লঞ্চে যাত্রীদের চাপে তিল পরিমাণ ঠাঁই নেই। পাটাতন, কেবিনের সামনের খালি জায়গা, এমনকি লঞ্চের ছাদেও চাদর পেতেছেন অনেক যাত্রী। তবু আরও যাত্রী উঠতে মরিয়া লঞ্চগুলোতে। যাত্রাপথ যতই কঠিন হোক, তারা ঈদের সময়টুকু আনন্দে কাটাতে চান প্রিয়জনদের সঙ্গে। ঈদকে সামনে রেখে আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে যাত্রীদের এমন উপচে পড়া ভিড় চোখে পড়েছে। 

ঈদ মৌসুমে বাড়তি যাত্রী চাপের সুযোগ নিচ্ছেন লঞ্চ মালিকেরা। যাত্রীদের অভিযোগ, লঞ্চগুলো স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি টাকা আদায় করছে। 

পরিবারের সঙ্গে ঈদ কাটাতে তাসরিফ-২ লঞ্চে হাতিয়া দ্বীপের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন সৈকত শাহরিয়ার। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘লঞ্চে উঠে কোনো কেবিন খালি পাইনি। এমনকি ডেকে (লঞ্চের ফ্লোর) পর্যন্ত দাঁড়ানোর জায়গা নেই। বাধ্য হয়ে মাস্টার সিটের পাশের জায়গা ভাড়া নিয়েছি ১ হাজার ২০০ টাকায়। সাধারণ সময়ে এই জায়গা অর্ধেক ভাড়ায় পাওয়া যেত।’ 

ঢাকা বেতুয়া রুটে এমভি তাসরিফ-৪ লঞ্চে বাড়ি ফিরছেন শারমিন বেগম। অসুস্থ বাবাকে নিয়ে সামান্য বসার জায়গা পেয়েছেন লঞ্চের ডেকে। শারমিন জানালেন, অন্য সময়ে লঞ্চে সাধারণ টিকিট মূল্য 

শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় চোখে পড়েছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

৪০০ টাকা। এখন ঈদে লঞ্চ স্টাফেরা আরও ১০০ টাকা বাড়িয়ে নিচ্ছে। 

উপকূলীয় নৌ রুটে পদ্মা সেতুর প্রভাব কম
প্রতিদিন ঢাকা সদরঘাট থেকে উপকূলীয় অঞ্চলের ৪৩টি রুটে যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল করে। সদরঘাট সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, পদ্মা সেতুর প্রভাবে বরিশাল, মাদারীপুর, শরীয়তপুরসহ কিছু রুটে যাত্রী চাপ কমলেও, বেশির ভাগ রুটে আগের মতোই যাত্রীদের ভিড় রয়েছে। 

সুন্দরবন-১২ লঞ্চ চলে বরিশাল-ঝালকাঠি রুটে। লঞ্চটির স্টাফ হেলালউদ্দিন জানান, যাত্রী চাপ কিছুটা কমেছে। তবে ঈদ মৌসুমে অনেক যাত্রী গাড়ির টিকিট না পেয়ে লঞ্চে ভরসা করছেন। 

তবে ঝালকাঠি রাজাপুর এলাকার সজীব হোসেন জানালেন, পদ্মার কারণে যতই সময় কমুক, বাস জার্নি বেশ কষ্টকর। লঞ্চে বেশি সময় লাগে, তবুও আরাম করে বাড়ি যাওয়া যায়। 

ঢাকা-ভোলা-হাতিয়া রুটের ফারহান লঞ্চে শুক্রবার দুপুরে ঢাকা ছেড়েছেন দিনাজ উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘সাধারণত এই লঞ্চ বিকেল সাড়ে ৫টায় ছাড়ে। যাত্রী বেশি হওয়ার কারণে দুপুর সাড়ে ১২টায় ছেড়ে দিয়েছে। এই রুটে সন্ধ্যায় আরও লঞ্চ ছাড়বে। এই রুটে পদ্মা সেতুর কোন প্রভাব নেই।’ 

শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় চোখে পড়েছে। ছবি: আজকের পত্রিকাএদিকে পারাবত-১৫ বরিশাল-মাদারীপুর রুটে নিয়মিত চলাচল করে। অনেক বছর ধরে এই রুটে লঞ্চ চালান মাস্টার শামসুদ্দিন। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পদ্মা সেতুর কারণে যাত্রী চাপ কমছে। তবে সিঙ্গেল মানুষেরা বাসেই যাচ্ছেন আর পরিবারসহ অনেক মানুষ এখনো লঞ্চে যেতেই পছন্দ করেন। সাধারণ সময়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় এই রুটের লঞ্চ ছাড়লেও, ঈদ মৌসুমে নির্দিষ্ট সময় বাঁধা নেই। যাত্রী পূর্ণ হলেই প্রশাসন লঞ্চ ছাড়ার নির্দেশ দেয়।’ 

২০ লাখ মানুষ লঞ্চে বাড়ি ফিরবেন
অন্য ঈদের সময় বাড়তি যাত্রীর চাপে ঢাকা সদরঘাটে অনেক দুর্ঘটনা ঘটে। এবার প্রশাসনের ইতিবাচক পদক্ষেপে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের পদযাত্রা নির্বিঘ্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা নদী বন্দরের নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম পরিচালক (বন্দর) মো. আলমগীর কবীর। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ঈদে লঞ্চ দুর্ঘটনা এড়াতে মালবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। দুজন ম্যাজিস্ট্রেট সদরঘাটে রয়েছে, অনিয়ম হলেই সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা। আমরা আশা করছি এবার ঈদে অন্তত ২০ লাখ মানুষ লঞ্চে বাড়ি ফিরবেন। 

আলমগীর কবীর আরও জানান, শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত সদরঘাট থেকে ১০৫টি লঞ্চ ছেড়ে গেছে। রাত পর্যন্ত ১৩০টা যাবে। আরও লঞ্চ রিজার্ভে আছে। চাহিদা অনুসারে লঞ্চ ছাড়ার নির্দেশ রয়েছে। এ ছাড়া লঞ্চে বাড়তি ভাড়া নেওয়া, অতিরিক্ত যাত্রী নেওয়াসহ অন্যান্য নিয়মগুলো মানা হচ্ছে কি না তা মনিটরিং করা হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত