ইজতেমার চাপে টঙ্গীর চারপাশে তীব্র যানজট

উত্তরা (ঢাকা) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১২ জানুয়ারি ২০২৩, ১৬: ৫২
আপডেট : ১২ জানুয়ারি ২০২৩, ১৭: ৩৮

গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে বিশ্ব ইজতেমাকে ঘিরে সড়কে মুসল্লিদের ঢল নেমেছে। দেশের নানা প্রান্ত থেকে বিভিন্ন যানবাহনে করে বিপুল এ লোকসমাগমের কারণে মহাসড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। তাতে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে সাধারণ মানুষ ও রোগীদের।

বিশ্ব ইজতেমাকে কেন্দ্র করে গতকাল বুধবার মধ্যরাত থেকে আজ বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বিশ্বরোড থেকে টঙ্গী পর্যন্ত তীব্র যানজট দেখা যায়। এ ছাড়া ঢাকা-টাঙ্গাইল সড়কের আব্দুল্লাহপুর থেকে বাইপাইল পর্যন্ত এবং ময়মনসিংহ-ঢাকা মহাসড়কের গাজীপুরের বোর্ডবাজার থেকে স্টেশন রোড পর্যন্ত একই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।

সরেজমিন ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।

ময়মনসিংহ থেকে বিশ্ব ইজতেমায় যোগ দিতে আসা সাদ্দাম হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিশ্ব ইজতেমায় সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। তাই দুই দিন আগে বুধবার মধ্যরাতে রওনা হয়েছি। কিন্তু গাজীপুরে ঢুকেই যানজটের মুখে পড়তে হয়েছে। দীর্ঘ সময় গাজীপুরের বোর্ডবাজার এলাকায় একই জায়গায় কেটে গেছে।’

টঙ্গীর চারপাশে তীব্র যানজটতুরাগের ধউর এলাকায় টাঙ্গাইলের কালিহাতী থেকে আসা কর্মজীবী রাসেল খান বলেন, ‘আমি ছুটি নিয়ে বাড়ি গিয়েছিলাম। ছুটি শেষে আজ (বৃহস্পতিবার) আমার অফিসে যোগদান করার কথা ছিল। কিন্তু তীব্র যানজটের কারণে আমি সময়মতো অফিসে যোগদান করতে পারিনি।’

উত্তরার এয়ারপোর্ট, আজমপুর, আব্দুল্লাহপুর ও কামারপাড়া মোড় এলাকায় কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা আজকের পত্রিকাকে জানিয়েছেন, ‘ইজতেমামুখী মহাসড়কে যানজট একটু বেশিই লেগে আছে। কারণ, মুসল্লিরা বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ইজতেমায় যোগ দিতে গাড়ি নিয়ে এসেছেন। যে কারণে সড়কটিতে গাড়ির চাপ বেড়েছে। আবার সেসব গাড়ি ইজতেমার আশপাশের এলাকায় পার্কিং করছেন। যে কারণে সড়কে চলাচলের গতি কমে গেছে।’

এদিকে মহাসড়কে তীব্র যানজটের কারণে আশপাশের অনেক মুসল্লিকে রেললাইনে হেঁটে টঙ্গীর দিকে যেতে দেখা গেছে। তাঁরা বলেন, ‘সড়কে যে যানজট, এর চেয়ে হেঁটেই আগে যেতে পারব। তাই রেললাইন ধরে হেঁটেই রওনা হয়েছি।’

টঙ্গীর চারপাশে তীব্র যানজট।উত্তরার বিমানবন্দর, রাজলক্ষ্মী ও খিলক্ষেত এলাকায় ঢাকাগামী সড়ক ফাঁকা থাকলেও গাজীপুরগামী সড়কে তীব্র যানজট দেখা গেছে। যানজটে আটকে থাকা এক যাত্রী বলেন, ‘১০ মিনিটের রাস্তার জন্য এক ঘণ্টা ধরে বাসে বসে আছি। কিন্তু গাড়ি নড়ছেই না। অনেকেই গাড়ি থেকে নেমে হেঁটেই গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন।’

এ সময় বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ডে অনেক যাত্রীকে গাড়ির অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। খিলক্ষেত এলাকায় নাজমিন জান্নাত মুন্নি নামের এক ছাত্রী বলেন, ‘বাসে ওঠার জন্য ঘণ্টাখানেক সময় ধরে অপেক্ষা করছি। কিন্তু মহাসড়কে অনেক যানজট, আবার বাসগুলোও যাত্রীতে ভরা। তাই বাসে উঠতে পারছি না।’

এ বিষয়ে উত্তরার আজমপুর ট্রাফিক পুলিশ বক্সের টিআই (ট্রাফিক ইন্সপেক্টর) কাজী মিজান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের এখানে কোনো সমস্যা নেই। সমস্যা হচ্ছে টঙ্গী এলাকায়। ইজতেমায় আসা মুসল্লি বহনকারী গাড়িগুলোর কারণে টঙ্গীতে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।’

টঙ্গীর চারপাশে তীব্র যানজট।আবদুল্লাহপুরে কর্মরত ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মুসল্লিদের নিয়ে আসা পরিবহনগুলো টঙ্গীতে থামছে। সেখানে মুসল্লিদের নামানো হচ্ছে। আবার টঙ্গীগামী সড়কে অনেক মুসল্লি হেঁটে ইজতেমায় যাচ্ছেন। যে কারণে টঙ্গী এলাকায় যানবাহনগুলো অনেক ধীর গতিতে চলছে। ফলে আশপাশের এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।’

অপর দিকে ট্রাফিক পুলিশের উত্তরা পশ্চিম জোনের সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মো. সাইফুল মল্লিক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিশ্ব ইজতেমায় গত রাত (বুধবার) থেকে মুসল্লিরা আসতে শুরু করেছেন। এখনো অনেকেই আসছেন। যে কারণে গাড়ির চাপ বেড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।’

কাল শুক্রবার শুরু হয়ে আগামী রোববার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে এবারের প্রথম পর্বের (জুবায়েরপন্থী) ইজতেমার সমাপ্তি ঘটবে। মাঝে চার দিন বিরতি দিয়ে ২০ জানুয়ারি শুক্রবার দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাজের অনুসারী (সাদপন্থী) মুসল্লিরা বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে অংশ নেবেন।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত