মেডিকেল শিক্ষার্থীর নেতৃত্বে যৌন ব্যবসা, ৭ বছরে আয় শতকোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
Thumbnail image

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উঠতি বয়সী তরুণীদের টার্গেট করে আকর্ষণীয় বেতনে চাকরি, ট্যালেন্ট হান্টিং ও মডেলিংয়ের নামে বিজ্ঞাপন দিয়ে ফাঁদে ফেলতো একটি চক্র। এরপর ব্যক্তিগত ছবি হাতিয়ে নিয়ে ব্ল‍্যাক মেইল করে অনলাইনে দেহ ব্যবসায় বাধ্য করা হতো। এতে গত সাত বছরে আয় করেছে শতকোটি টাকা। 

দীর্ঘদিন ধরে কৌশলে তরুণীদের ফাঁদে ফেলে যৌন কাজে ব্যবহার করার অভিযোগে চক্রের মূল হোতাসহ ৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার। 

আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এতথ্য জানান সংস্থাটির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহম্মদ আলী মিয়া।

এর আগে গতকাল মঙ্গলবার রাজধানী ঢাকা, সাতক্ষীরা, চাঁদপুর ও যশোরে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। 

গ্রেপ্তাররা হলেন- চক্রের মূল হোতা ও মেডিকেল শিক্ষার্থী মো. মেহেদী হাসান (২৫) ও তার প্রধান সহযোগী খালাতো ভাই শেখ জাহিদ বিন সুজন (২৬), মো. জাহিদ হাসান কাঁকন (২৮), তানভীর আহমেদ ওরফে দীপ্ত (২৬), সৈয়দ হাসিবুর রহমান (২৭), শাদাত আল মুইজ (২৯), সুস্মিতা আক্তার ওরফে পপি (২৭) ও নায়না ইসলাম (২৪)। 

তাদের কাছ থেকে পর্নোগ্রাফি তৈরি ও তরুণীদের ব্ল্যাকমেইলে ব্যবহৃত ১২টি মোবাইল ফোন, ২০টি সিম কার্ড, ১টি ল্যাপটপ এবং টাকা লেনদেনে ব্যবহৃত বিভিন্ন ব্যাংকের এটিএম কার্ড ও চেক বই জব্দ করা হয়েছে। 

অতিরিক্ত আইজিপি মোহম্মদ আলী মিয়া বলেন, একটি চক্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুয়া ফেসবুক আইডি ও পেইজ খুলে ফ্রিল্যান্সিং কাজ, লোভনীয় চাকরি, মডেল বানানো, মেধা অন্বেষণের নামে অল্প বয়সী তরুণীদের কাছ থেকে কৌশলে আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও হাতিয়ে নিয়ে তা দিয়ে ব্ল‍্যাক মেইল করে দেহব্যবসায় নামায়। চক্রটি উঠতি বয়সী তরুণীসহ যেসব তরুণীরা পারিবারিক ভাঙনের শিকার ও আর্থিক সমস্যা রয়েছে তাদের টার্গেট করত। ইন্টারভিউয়ের জন্য ডেকে বিভিন্ন বিজ্ঞাপনে সুযোগ দেওয়ার কথা বলে আপত্তিকর ছবি নিত। কাজে আগ্রহী তরুণীদের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতার জন্য তাদের চাহিদা মতো টাকা ও প্রয়োজন মেটাত। 

এরপর ধীরে ধীরে অসামাজিক কাজ করতে বাধ্য করত তারা। এই চক্রের মূল হোতা মেহেদী হাসান এবং তার খালাতো ভাই শেখ জাহিদ বিন সুজন মিলে এই চক্রটি গড়ে তুলেছিল। 

অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেন, তারা দুজনেই মেডিকেল শিক্ষার্থী। চিকিৎসা বিদ্যার আড়ালে অল্প বয়সী তরুণীদের ফাঁদে ফেলে অ্যাডাল্ট কনটেন্ট তৈরি ও টেলিগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ এবং মেসেঞ্জারে নানা অসামাজিক কাজ করতে বাধ্য করত। 

গত ৭ বছরে তারা প্রায় ১০০ কোটি টাকা আয় করেছে। এই টাকা দিয়ে তারা যশোর, সাতক্ষীরা, খুলনা এবং ঢাকায় বিপুল পরিমাণ জমি ক্রয় করেছেন। নির্মাণ করেছে আলিশান বাড়ি। তাদের আত্মীয়-স্বজনের ব্যাংক অ্যাকাউন্টেও বিপুল অর্থ জমিয়ে রাখার তথ্য মিলেছে। 

অতিরিক্ত আইজিপি বলেন, তারা শুরুতে ফেসবুক ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চাকরির বিজ্ঞাপন, কখনো মডেল তৈরি, কখনো বা ট্যালেন্ট হান্ট শীর্ষক প্রতিযোগিতার আয়োজন করে সাড়া পাওয়া তরুণীদের নিয়ে টেলিগ্রামে গ্রুপ খুলত। 

মডেল বানানোর নামে তোলা অর্ধনগ্ন ছবি ভাইরাল করে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে নগ্ন হয়ে ভিডিও কল বা সরাসরি অসামাজিক কাজে বাধ্য করত। চক্রটির টেলিগ্রাম গ্রুপে হাজারো সাবস্ক্রাইবার রয়েছে। চক্রটি ভিডিও কলের সবকিছু ধারণ করে ভুক্তভোগীদের যৌন সম্পর্ক স্থাপনে বাধ্য করত। 

সিআইডি জানায়, বিভিন্ন বয়সী নারীদের ভিডিও কল ও দেহ ব্যবসায় বাধ্য করে এবং গোপনে ধারণকৃত সেসব ভিডিও বিক্রি করে চক্রটি প্রায় ১০০ কোটি টাকা আয় করেছে। 

অর্থ লেনদেনের জন্য তারা ব্যবহার করত এমএফএস বা মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস। এ ছাড়া ক্রিপ্টো কারেন্সিতেও তাদের হাজার হাজার ডলার লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়াতে মোবাইল সিম নিবন্ধনে নিম্ন আয়ের মানুষের এনআইডি ব্যবহার করত। 

সিআইডি প্রধান বলেন, ২০১৭ ও ২০১৮ সাল থেকে গাজীপুরে ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ এবং ইবনে সিনার দুই মেডিকেল শিক্ষার্থী এই চক্রটি গড়ে তুলে। তাদের জিম্মায় টিকটক, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম সেলিব্রেটিসহ কয়েক হাজার নারী রয়েছে। 

অভিযুক্তদের মোবাইল ফোন এবং ল্যাপটপে গোপনে ধারণ করা প্রায় ১০ লাখ ন্যুড ছবি ও ২০ হাজার অ্যাডাল্ট ভিডিও পাওয়া গেছে। তাদের গ্রুপে ১ লাখ ৮ হাজার সাবস্ক্রাইবার রয়েছে। অনেক ভুক্তভোগীর অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে এ সংখ্যাটা এখনই বলা যাচ্ছে না। 

তিনি বলেন, এখানে যারা সার্ভিস নিচ্ছে, এটাও অন্যায় ও বেআইনি। বাংলাদেশের পর্নোগ্রাফি আইন অনুযায়ী এটি অবৈধ। তাদেরকেও আইনের আওতায় আনা হবে। 

গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে পল্টন থানায় পর্নোগ্রাফি আইনে ও সাইবার নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়েছে বলেও জানান সিআইডির এই কর্মকর্তা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত