ধাক্কা দিয়ে গন্ডগোল বাধায় চক্রটি, চোখে গুল লাগিয়ে ছিনিয়ে নেয় টাকা: পুলিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ৩০ মে ২০২৪, ০৮: ৪২
Thumbnail image

কোনো ধরনের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নয়, চোখে গুল ছিটিয়ে ছিনিয়ে নেওয়া হয় টার্গেট করা ব্যক্তির সঙ্গে থাকা অর্থকড়ি। পাঁচ থেকে সাতজনের সংঘবদ্ধ চক্রটি আগে থেকেই কাউকে টার্গেট করে ধাক্কা দেয়, এরপর সৃষ্টি করে ঝগড়ার পরিস্থিতি, একপর্যায়ে তাঁকে ঘিরে ধরে ঘটায় ডাকাতি।

ওই চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর তাঁদের বরাতে এসব তথ্য জানিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের লালবাগ জোনের সদস্যরা। পুরান ঢাকার তাঁতিবাজার এলাকার এই চক্রটি সক্রিয় বলে জানিয়েছেন তাঁরা।

গ্রেপ্তারকৃত সদস্যরা হলেন মূল পরিকল্পনাকারী খোকন দাস ওরফে বাইল্যা খোকন, মূল অপারেশনাল সংগঠক রেজাউল করিম এবং নির্ধারিত ব্যক্তির গতিবিধি পর্যবেক্ষণকারী দলের কামাল হোসেন।

গ্রেপ্তারের প্রায় এক মাস আগে মা বুলিয়ান অ্যান্ড সিলভার জুয়েলার্সের কর্মচারী মহিউদ্দিনের কাছ থেকে এই চক্রটি তাঁতিবাজার এলাকা থেকে ৭০ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয় একই কাদায়। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্তে নেমে ডাকাত দলের এই তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়।

আজ বুধবার রাজধানীর মিন্টো রোডের ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন ডিবি লালবাগ বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার মশিউর রহমান।

তিনি বলেন, ‘ঘটনার দিন বিকেলে ইসলামপুরের নবনারায়ণ লেনের প্রবেশমুখে পৌঁছামাত্র একজন টাকা বহনকারী মহিউদ্দিনকে ধাক্কা দিয়ে, উল্টো তাঁর বিরুদ্ধেই ধাক্কা দেওয়ার অভিযোগ করে। এ সময় টাকা বহনকারী মহিউদ্দিন “সরি” বলে ক্ষমা চেয়ে চলে যেতে চায়। তাৎক্ষণিক আশপাশে ওত পেতে থাকা আরও সাত থেকে আটজনজন মহিউদ্দিনকে ধাক্কা দেওয়ার অভিযোগ তুলে কিল–ঘুষি মারতে থাকে। একপর্যায়ে তাঁর চোখে আঙুল দিয়ে গুল লাগিয়ে দেয় এবং টাকাভর্তি ব্যাগটি টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যায়।’

বুধবার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে ডিবি লালবাগ বিভাগের সংবাদ সম্মেলন। ছবি: আজকের পত্রিকাএ পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘অভিযোগ ও মামলার প্রেক্ষিতে গোয়েন্দা দল তদন্তে নেমে ডাকাত দলের সদস্যদের গ্রেপ্তার করে। তাদের কাছে থেকে উদ্ধার করে ডাকাতির ৯ লাখ টাকা। চতুর এই ডাকাত দল গ্রেপ্তার এড়ানোর জন্য নির্দিষ্ট সময় ছাড়া কোনো ধরনের মোবাইল ফোন ব্যবহার করত না।’

তিনি বলেন, ‘এই ডাকাতির ঘটনায় মূল মাস্টারমাইন্ড বাইল্যা খোকন। খোকন পুরান ঢাকায় বসবাস করে। দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় থেকে কোন ব্যবসায়ী কীভাবে টাকা লেনদেন করেন, এই সম্পর্কে ভালো করে জেনে নেয়। অপারেশনাল কমান্ডার রেজাউল করিম একসময় পুরান ঢাকাতেই ব্যবসা করত। খুলনা, বরিশাল, চাঁদপুর, মিরপুর ও ময়মনসিংহ থেকে সমমনা ডাকাতদের ঢাকায় এনে এই ডাকাতি করে তারা। ডাকাতির কাজে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করার জন্য তারা কম দামের বাটন মোবাইল ফোনে নিবন্ধনহীন সিম লাগিয়ে যোগাযোগ রাখে। ঘটনার পরে মোবাইল এবং সিম ভেঙে নদীতে ফেলে দেয়। এরপর বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে–ছিটিয়ে পালিয়ে থাকে।’

এক প্রশ্নের জবাবে মশিউর রহমান বলেন, ‘এই চক্রটিতে বেশ কিছু সদস্য জড়িত। তারা সাধারণ শুক্রবার বা শনিবার ডাকাতি করে। এই সময়ে মানুষ কম থাকে। ডাকাত দলটি লোকজন ভাড়া করে নিয়ে আসে। তারা রেকিসহ কয়েকটি ধাপে কাজ করে। প্রত্যেক গ্রুপে অন্তত পাঁচজন করে সদস্য থাকে। ডাকাতির পরে সবাই টাকা ভাগাভাগি করে নিয়ে যায়। ফলে একজনকে গ্রেপ্তার করলেও সব টাকা পাওয়া যায়নি। ডাকাত দলের সবাই বহুগামী ও জুয়াড়ি। ফলে তারা এই টাকা খরচ করে ফেলেছে। গ্রেপ্তার ডাকাতদের বিরুদ্ধে ডাকাতি এবং ছিনতাইয়ের একাধিক মামলা আছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত