অপ্রতুল চিকিৎসায় আশঙ্কার পর্যায়ে শিশুদের ক্যানসার

আজাদুল আদনান, ঢাকা
প্রকাশ : ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১২: ০৪
আপডেট : ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৩: ০৫

দেশে বেড়েই চলেছে ক্যানসারের প্রকোপ। প্রতিদিন নতুন করে যত মানুষ ক্যানসারে আক্রান্ত হয়, তাদের বড় একটি অংশ শিশু। বছরে প্রায় ২০ হাজার শিশু এই মরণব্যাধির শিকার হচ্ছে। কিন্তু অপ্রতুল চিকিৎসাব্যবস্থায় ৭৫ শতাংশই থাকছে চিকিৎসার বাইরে। 

আড়াই মাস ধরে রক্তের ক্যানসারে ভুগছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হুমায়রা। শুরুর দিকে পা ব্যথা, জ্বর, কালো পায়খানা হতো দুই বছরের এই শিশুর। তবে স্বাভাবিক মনে করে তেমন গুরুত্ব দেননি হুমায়রার মা-বাবা। দেড় মাস পর বমির সঙ্গে রক্ত এলে নেওয়া হয় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালে। কিন্তু ততক্ষণে তাঁর শরীরে ক্যানসার গভীরভাবে বাসা বেঁধেছে। পরে পাঠানো হয় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ)। বর্তমানে এই হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন হুমায়রা। 

হুমায়রার মা ঝিনুক আক্তার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা বুঝতে পারিনি। এক মাসের বেশি সময়ে মেয়ের পেছনে প্রায় ২ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। ডাক্তার বলছেন, আরও অন্তত তিন বছর চিকিৎসা নিতে হবে, তাহলে ৮০ ভাগ ভালো হবে। কিন্তু ততক্ষণে সন্তানের চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে গিয়ে সবকিছু হয়তো খোয়াতে হবে।’ 

বিএসএমএমইউর শিশু হেমাটোলজি ও অনকোলজি বিভাগের চিকিৎসকেরা বলছেন, দেশে শিশু ক্যানসার রোগীর সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। কিন্তু সেই তুলনায় চিকিৎসাব্যবস্থা অনেক কম। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালসহ রাজধানীর কয়েকটি হাসপাতালে এর চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ঢাকার বাইরে চিকিৎসার ব্যবস্থা না থাকায় আসতে হয় রাজধানীতে। এতে করে চিকিৎসার পাশাপাশি যাতায়াত ব্যয় মিলিয়ে অনেক খরচ মেটাতে হয়। বিভাগীয় পর্যায়ে সেবা নিশ্চিত করা গেলে এই সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে। 

বিএসএমএমইউর শিশু হেমাটোলজি ও অনকোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক এ টি এম আতিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা দেখি যে ক্যানসার চিকিৎসায় উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে অনুন্নত দেশগুলোর অনেক অসমতা ও বৈষম্য রয়েছে। উন্নত বিশ্বে আক্রান্ত ৮০ শতাংশই ভালো হয়। কিন্তু দরিদ্র দেশগুলোতে সেটি ২০ শতাংশ। এই বৈষম্য দূর করতে ৯৩টি দেশে দিবসটি পালিত হয়।’  

আতিকুর রহমান বলেন, ‘দেশের শিশু ক্যানসার চিকিৎসায় সফলতাকে উন্নত বিশ্বের কাছাকাছি নিয়ে যাওয়ার জন্য আমরা চেষ্টা করছি। আমাদের শিশু হেমাটোলজি ও অনকোলজি বিভাগ শুধু শিশুদের ক্যানসার চিকিৎসা করে না, চিকিৎসকদের ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থাও করে থাকে। এখানে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চিকিৎসকগণ সারা দেশের মেডিকেল কলেজগুলোতে চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন, ফলে ক্যানসারে আক্রান্ত একটা শিশুর পরিবার যদি চিকিৎসায় লেগে থাকে, তাহলে বিএসএমএমইউতেই আক্রান্তদের মধ্যে ৬০-৭০ ভাগ ভালো হয়।’  

তবে দেশে কতসংখ্যক শিশু ক্যানসার রোগী আছে, সেই তথ্য নেই সরকারের কাছে। ২০২০ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেওয়া তথ্যমতে, দেশে প্রতিবছর দেড় লাখের বেশি মানুষ ক্যানসারে আক্রান্ত হয়। তাদের মধ্যে ২০ হাজারই শিশু। 

ক্যানসার চিকিৎসায় দেশের একমাত্র ও সবচেয়ে বড় চিকিৎসাকেন্দ্র জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে প্রতিদিন যত ক্যানসার রোগী সেবা নিতে আসে, তাদের আড়াই শতাংশ শিশু।

তাদের মধ্যে চিকিৎসার আওতায় আসছে মাত্র ২০ থেকে ২৫ শতাংশ, আর সঠিক সময়ে চিকিৎসা না পেয়ে মারা যাচ্ছে বাকিরা। 

এমন সংকটাবস্থা নিয়েই বিশ্বের ৯৩টি দেশের মতো বাংলাদেশেও আজ মঙ্গলবার পালিত হচ্ছে শিশু ক্যানসার দিবস। 

দিবসটি পালনে আজ সকালে র‍্যালি ও আলোচনা সভার আয়োজন করে বিএসএমএমইউ। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আগে ভাবা হতো, ক্যানসার হলেই মৃত্যু, কিন্তু চিকিৎসার মাধ্যমে তা ভুল প্রমাণিত হযেছে। আমাদের এখানে ২ হাজার রোগীকে সুস্থ করা হয়েছে, যদিও তা রোগীর তুলনায় অনেক কম। শুধু চিকিৎসকেরা এগিয়ে এলেই হবে না, সব শ্রেণিপেশার মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে।’ 

ক্যানসার বিশেষজ্ঞ ডা. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘জনসংখ্যাভিত্তিক কোনো জরিপ না থাকায় কতসংখ্যক শিশু ক্যানসারে ভুগছে, তার প্রকৃত চিত্র উঠে আসছে না। ফলে চিকিৎসায় সে অনুযায়ী গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। ঢাকাসহ অন্যান্য বিভাগে ক্যানসার ইনস্টিটিউট নেই। যেগুলো হচ্ছে, সেগুলোর বাস্তবায়িত হতে সময় লাগবে আরও আড়াই থেকে তিন বছর।’  

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পোশাক রপ্তানিতে নতুন সুযোগের দরজা খুলছে

রাতারাতি ফেরানো যাবে না হাসিনাকে

বেতন-ভাতা নিয়ে ক্ষোভে জাহাজের মাস্টারকে হত্যা, তথ্য ফাঁসের ভয়ে আরও ৬ খুন: র‍্যাব

জনপ্রশাসন সংস্কার: দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে প্রশাসন ক্যাডারদের সভা

লাঞ্ছিত মুক্তিযোদ্ধার ১০০ কোটি টাকার মানহানির মামলা, শীর্ষ ২ আসামি জামায়াতের বহিষ্কৃত সমর্থক

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত