বালিয়াকান্দিতে সড়কে অবাধে চলছে অবৈধ যান, আতঙ্কে পথচারী

বালিয়াকান্দি (রাজবাড়ী) প্রতিনিধি
আপডেট : ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৫: ২৯
Thumbnail image

রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দিতে অবাধে চলছে অবৈধ যান। কৃষি জমি থেকে মাটি কেটে এসব যানবাহনে করে নেওয়া হচ্ছে ইটভাটায়। এসব যান সড়কে দ্রুতগতিতে চলাচল করায় দুর্ঘটনার আতঙ্কে থাকেন পথচারীরা। 

জানা গেছে, বালিয়াকান্দির সাত ইউনিয়নে প্রায় ১২টি ইটভাটা রয়েছে। প্রতিটি ইটভাটার মালিকানায় ও ভাড়ায় ৫-১০টি ট্রাক্টর-ডাম্প ট্রাক রয়েছে। এসব গাড়িতে বিভিন্ন মাঠের কৃষিজমি থেকে মাটি তুলে ইটভাটায় আনা হয়। 

কৃষিকাজের জন্য ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আনা ট্রাক্টর স্থানীয়ভাবে কাঠামো তৈরি করে অবৈধ ট্রাক্টরে রূপান্তর করা হয়। এসব গাড়ি চালানোর জন্য নসিমন, করিমন ও ভ্যানচালকদের বেছে নেওয়া হয়। এতে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। অভিযোগ রয়েছে, অধিকাংশ দুর্ঘটনার শিকার ব্যক্তির পরিবারের সঙ্গে গাড়ির মালিকেরা স্থানীয়ভাবে মোটা অঙ্কে দফারফা করেন। 

গত বুধবার বালিয়াকান্দি সদরের চার রাস্তার মোড়, জাবোরকোল, তেঁতুলিয়া, জামালপুর ও কালিবাড়ি গিয়ে দেখা গেছে, কাগজপত্র ছাড়া অবৈধ ট্রাক্টর, নসিমন, ডাম্প ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন সড়ক দিয়ে বেপরোয়া গতিতে ছুটে চলেছে। বেশির ভাগ যানবাহনেই মাটি পরিবহন করায় সড়কে কাদামাটি ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ছে।

একটি ইটভাটার ট্রাক্টরের চালক সবুজ শেখের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘এই গাড়ির কাগজ হয় না। এভাবেই চালাতে হয়। আর আমরা শ্রমিক, এই কাজ না করলে পেটে ভাত জুটবে না।’ 

স্থানীয় বাসিন্দা মজনু মিয়া বলেন, ‘সড়ক দিয়ে হাঁটতেও এখন ভয় হয়। ট্রাক্টর, ডাম্প ট্রাকসহ বিভিন্ন গাড়ির এত গতি থাকে তাতে যখন-তখন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাঁদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’ 

ভালো বেচাকেনার আশায় সড়কের পাশে মুদিদোকান দিয়েছেন ব্যবসায়ী আক্কাস আলম। তিনি বলেন, ‘মাটি টানা গাড়ির কারণে দোকানের মালপত্র সব ধুলোয় একাকার হয়ে যায়। পণ্যসামগ্রী প্রতি বেলায় পরিষ্কার করতে হয়।’ 

মোটরসাইকেল চালক বিপ্লব বিশ্বাস বলেন, ‘প্রতিদিন বাড়ি থেকে বাজার পর্যন্ত বেশ কয়েকবার যেতে হয়। কিন্তু সড়ক দিয়ে চলা এসব অবৈধ যানবাহনের কারণে ভয়ে থাকি। তাঁদের যে বেপরোয়া গতি তা খুবই ভয়ংকর লাগে।’ 

বছরে অন্তত একবার চালকদের গাড়ি চালনার ওপরে সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ দরকার বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি প্রাইভেটকারের চালক। তিনি বলেন, ‘ট্রাক্টরসহ অবৈধ গাড়িচালকদের গতি থাকে খুবই বেশি এতে আমাদের মতো লাইসেন্সধারী চালকদের হিমশিম খেতে হয়।’ 

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) হাসিবুল হাসান বলেন, ‘অবৈধ গাড়ি আটক করে সংশ্লিষ্টদেরকে সতর্ক করি। যেন রাস্তায় আইন মেনে তাঁরা গাড়ি চালান। অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি না চালান।’ 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘জেলা ট্রাফিক বিভাগ এই বিষয়ে কাজ করে। তবে আমাদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাঝেমধ্যেই অভিযান পরিচালনা করেন।’ কৃষি যন্ত্রচালিত গাড়ি সড়কে কীভাবে চলে এবং সেই গাড়ি প্রশাসন ধরলেও ছাড়া পায় কীভাবে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমরা দেখব যেন কোনো অবৈধ গাড়ি ছাড়া না পান।’ 

রাজবাড়ী জেলার পুলিশ সুপার জি এম আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমাদের কিছুটা জনবল সংকটের কারণে নিয়মিত ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয় না। তবে দ্রুতই এসব অবৈধ গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত