পুরো ভবন ছিল আবদ্ধ, দেয়ালে দেয়ালে মানুষের হাতের ছাপ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০১ মার্চ ২০২৪, ১৯: ৩৫
Thumbnail image

বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ভবনটি ছিল আবদ্ধ। আলো-বাতাসের জায়গা ছিল না। আটকা পড়া ব্যক্তিদের অনেকেই আশ্রয় নিয়েছিলেন তৃতীয় তলার একটি কক্ষে। আপ্রাণ চেষ্টা করেও তাঁরা বের হতে পারেননি। কক্ষ থেকে উদ্ধার হয় ৯ জনের মরদেহ। অধিকাংশই মারা গেছেন ধোঁয়ায়। ধোঁয়া থেকে বাঁচতে জানালা খুঁজেছিলেন তাঁরা। দেয়ালে দেয়ালে রয়েছে তাঁদের হাতের ছাপ। 

আজ শুক্রবার সকালে ওই ভবন থেকে বেরিয়ে এমন বর্ণনা দেন স্থপতি ইকবাল হাবিব। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন সঙ্গে তিনি ওই ভবন পরিদর্শন করেন। 

ইকবাল হাবিব আজকের পত্রিকাকে বলেন, পুরো ভবন আবদ্ধ, আলো-বাতাসের কোনো জায়গা ছিল না। ২০ ভাগ মানুষ আগুনে পুড়ে আর ৮০ ভাগ মানুষ ধোঁয়াতে মারা গেছে। এটা হয়েছে, কারণ বের হয়ে যাওয়ার কোনো পথ ছিল না। 

ইকবাল হাবিব আরও বলেন, ‘আমি যে কক্ষে গেছি সেখানে ফায়ার সার্ভিস আমাকে দেখাল, এখানে ৯টা মরদেহ পড়েছিল। ওই রুমের বিভিন্ন জায়গায় খামচির দাগ ছিল। তাঁরা কোনো না কোনো একটা জানালা-দরজা খোলার চেষ্টা করেছিল, বাতাস নেওয়া জন্য। এটা ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড। আশপাশে ওয়ালে তাঁরা জানালা খুঁজেছেন, কিন্তু কিছুই নাই।’ 

তিনি বলেন, ‘ভবনে ভেন্টিলেটর না থাকা একটা চূড়ান্ত অপরাধ। এই ঘটনা আমাদের নতুনভাবে ভাবতে শুরু করেছে।’ 

স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, এটি মূলত ছয়টি মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সংস্থার দীর্ঘদিনের অবহেলা। তাদের অধীনস্থ আইন ও বিধিমালা না মেনে অমার্জনীয় অপরাধের মতো কাজ করে গেছে। কোনো রকম কার্যক্রম তারা পরিচালনা করেনি। তারা দায়িত্বশীল আচরণ না করার জন্য এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। 

এই স্থপতি বলেন, ‘যে ভবনে আগুন লেগেছে, এটাকেও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে ফায়ার সার্ভিস ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে। আমি যখন ভেতরে যাই ফায়ার সার্ভিসের ডিজির সঙ্গে, তিনি তখন আমাকে বলেছেন, এই ভবনের লাইসেন্স দেওয়ার জন্য মালিক একজন মুক্তিযোদ্ধা সংবাদ সম্মেলনে হুমকি দিয়ে এই অনুমোদন নিয়েছেন তিন মাসের শর্ত সাপেক্ষে। হুমকি দিলেই কী অনুমোদন দেওয়া হবে। তাহলে এই মৃত্যুর দায় কেন নেবে না।’ 

ইকবাল হাবিব বলেন, তিন মাসের মধ্যে সব ঠিক করা হবে—এমন শর্তে অনুমোদন নেওয়া। একই সঙ্গে এই কার্যক্রমে রাজউক একবার এসে পরিদর্শন করেনি যে অফিসের জন্য একটা ভবনে একের পর এক রেস্টুরেন্ট হলো। রেস্টুরেন্টের যে কিচেন, সেটি কিন্তু সাধারণ বাসাবাড়ির কিচেন না। এর জন্য বিশেষ ডিজাইন করতে হয়। সেই রকম কিচেনের সিলিন্ডার রাখার জন্য যে জায়গা দরকার তা নেই। সব রাখা হয়েছে সিঁড়িতে। একটি মাত্র সিঁড়ি।

তিনি বলেন, একটা টাস্কফোর্স গঠন হয়েছিল গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে। কিন্তু পরে আর কাজ করেনি। এই ছয় সংস্থার বিরুদ্ধে বিচার বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

আরো পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত