গাজীপুরে ১১ ঘণ্টা ধরে শ্রমিক বিক্ষোভ, মহাসড়কে ১৫ কিমি যানজট

গাজীপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২১: ১৭
Thumbnail image
শ্রমিকদের অবরোধের কারলে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উভয় পাশে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

গাজীপুরে বকেয়া বেতনের দাবিতে মহানগরীর মালেকের বাড়ি এলাকায় টিঅ্যান্ডজেড অ্যাপারেলস লিমিটেড কারখানার শ্রমিকেরা এখনো মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন। আজ শনিবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে অবরোধ শুরু করেন তাঁরা।

গাজীপুর শিল্প পুলিশ ও শ্রমিক সূত্রে জানা গেছে, প্রায় এক মাস ধরে এই কারখানার শ্রমিকেরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিভিন্ন সময় বিক্ষোভ করছে। কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের বেতন-ভাতার বিষয়টি সুরাহা করছে না। ফলে কয়েক দিন পর পর সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন শ্রমিকেরা। ফলে এই মহাসড়কে চলাচলকারী যাত্রী এবং পরিবহন চালকদের প্রায় সময় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

সূত্র আর জানায়, অবরোধের কারণে শনিবার দিনভর (সকাল-সন্ধ্যা) ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ আছে। এতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে উভয় দিকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের টাঙ্গাইলের দিকে ৭ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।

পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন। তারা শ্রমিকদের সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনা করেও তাদের মহাসড়ক থেকে সরে যেতে রাজি করাতে পারেননি।

শ্রমিকদের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ। ছবি: আজকের পত্রিকা
শ্রমিকদের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ। ছবি: আজকের পত্রিকা

সূত্রটি জানায়, গাজীপুর মহানগরীর মালেকের বাড়ি এলাকায় টিএন্ডজেড অ্যাপারেলস লিমিটেড নামের একটি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের বকেয়া বেতন ভাতা না দিয়ে কর্তৃপক্ষ কারখানা বন্ধ করে রেখেছে। ওই গ্রুপের ৬টি কারখানার সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে।

এ নিয়ে শ্রমিকরা দীর্ঘদিন ধরেই তাদের পাওনা বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবি জানিয়ে আন্দোলন করে আসছিল। কিন্তু কারখানা কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এ কারণে শনিবার সকালে শ্রমিকরা কারখানার সামনে জড়ো হয়ে প্রথমে তারা বিক্ষোভ করেন। একপর্যায়ে তারা মালেকের বাড়ির কলম্বিয়া মোড় এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন। খবর পেয়ে শিল্প পুলিশ, মহানগর পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে।

আন্দোলনেরত শ্রমিকরা বলেন, গত এপ্রিল মাস থেকে কারখানা বন্ধ ছিল। পরে কারখানা খুললেও দুই মাসের বেতন না দিয়ে কর্তৃপক্ষ টালবাহানা শুরু করে। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর মাধ্যমে বারবার বেতন পরিশোধের তারিখ দিলেও কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করেনি।

কারখানার শ্রমিক আবুল কালাম বলেন, ‘মালিকপক্ষ আমাদের পাওয়া বেতন না দিয়েই কারখানা বন্ধ রেখেছে। আমরা বেশ কিছুদিন ধরেই বকেয়া পরিশোধের দাবিতে আন্দোলন করছি। আমাদের দাবি মেনে নিলে মহাসড়ক ছেড়ে দিব।’

তবে এ বিষয়ে চেষ্টা করেও টিঅ্যান্ডজেড অ্যাপারেলস লিমিটেড কারখানা কর্তৃপক্ষের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

গাজীপুর মহানগর পুলিশের বাসন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাহেদুল ইসলাম বলেন, ‘টিঅ্যান্ডজেড কারখানার শ্রমিকরা বকেয়া বেতনের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করে রেখেছে। আমরা মালিক ও শ্রমিক উভয় পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যা সামাধানের চেষ্টা করছি। যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।’

গাজীপুর শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খলিলুর রহমান বলেন, শিল্প পুলিশ ও মহানগর পুলিশ, সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে রয়েছে। কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে বেতন সংক্রান্ত সমস্যাটি সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।

গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ-উত্তর) নাজির আহমেদ বলেন, ‘সকাল থেকে এ পর্যন্ত ১০-১২ বার শ্রমিকদের সঙ্গে আমরা দফায় দফায় আলোচনা করেছি। মালিক পক্ষের সাথে আলোচনা করে দ্রুত তাদের বকেয়া বেতন আদায়ের ব্যবস্থা করা হবে বলেও আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অতীতে মালিকপক্ষ কথা রাখেনি-এমন অভিযোগ তুলে শ্রমিকরা প্রথমে বলেছিল দুপুর ২টায় অবরোধ তুলে নেবে, পরে বলেছিল বিকেল ৫টায় অবরোধ তুলে নিবে। কিন্তু তারা অবরোধ তুলে নেয় নি।’

গাজীপুরে ১১ ঘণ্টা ধরে শ্রমিক বিক্ষোভ, মহাসড়কে ১৫ কিমি যানজট
গাজীপুরে ১১ ঘণ্টা ধরে শ্রমিক বিক্ষোভ, মহাসড়কে ১৫ কিমি যানজট

তিনি আরও বলেন, ‘শ্রমিকেরা এখন বলছে, রাত ১০টায় অবরোধ তুলে নেবে। তারপরও আমরা তাদের বোঝানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু তারা কোনো আশ্বাস মানতে রাজি হচ্ছে না। ফলে মহাসড়কের যানজট নিরসন করা সম্ভব হচ্ছে না।’

তিনি আরও বলেন, এ সমস্যাটি সমাধানের জন্য বিজিএমইএ এগিয়ে আসতে পারে। মালিকপক্ষ পুরো বেতন দিতে না পারলেও আংশিক পরিশোধ করলেও শ্রমিকরা হয়তো মেনে নিত।

পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘শ্রমিকদের পাশাপাশি এখন ঘটনাস্থলের উভয় পাশে আটকে পড়া যানবাহনের চালক, হেলপার, যাত্রী, পথচারী এবং বিভিন্ন কারখানা শ্রমিকরা জড়ো হয়েছে। আমরা আশা করছি, আলোচনার মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত