রেলকর্মীরা মধ্যরাত থেকে কর্মবিরতিতে যাচ্ছেন, ট্রেন চলাচল বন্ধের আশঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮: ৪৭
Thumbnail image
বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহার রেলওয়ে জংশনে বিকল হওয়া বরেন্দ্র এক্সপ্রেস। ছবি: আজকের পত্রিকা

মূল বেতনের সঙ্গে রানিং অ্যালাউন্স (ভাতা) যোগ করে পেনশন প্রদান এবং আনুতোষিক সুবিধা দেওয়ার বিষয়ে জটিলতার নিরসন না হওয়ায় কর্মবিরতিতে যাচ্ছেন রেলওয়ের রানিং স্টাফরা। ফলে আজ সোমবার মধ্যরাত ১২টা থেকে সারা দেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ হতে পারে। এই কর্মসূচি পালন করতে যাচ্ছেন বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী সমিতি।

তবে বিষয়টি নিয়ে রেলপথ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রানিং স্টাফদের দাবির বিষয় নিয়ে তাঁদের সঙ্গে আলোচনা চলছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবুর রহমান বলেন, ‘আমরা ২৭ জানুয়ারি দিবাগত রাত অর্থাৎ ২৮ জানুয়ারির প্রথম প্রহর রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে ট্রেন চালানো বন্ধ রাখব। ট্রেন চালানো বন্ধের বিষয়ে সরে আসতে গেলে অর্থ মন্ত্রণালয়কে স্পষ্টীকরণ চিঠি দিতে হবে। রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে স্পষ্টীকরণ চিঠি দিলে হবে না। এটা নতুন কোনো বিষয় নয়, এটা ১৬০ বছর ধরে চলে আসছে। ১৬০ বছর ধরে চলে আসা একটা নিয়ম হুট করে বন্ধ করে দেবে, এটা তো রেলের কোনো স্টাফ মেনে নিতে পারে না। আমরা ওনাদের বারবার সময় দিয়েছি, বারবার আন্দোলন করেছি, বারবার প্রত্যাহার করেছি। কিন্তু এবার আর কোনো কিছু করার সুযোগ নেই।’

মজিবুর রহমান বলেন, ‘আমাদের মোট ২ হাজার ৩৬ জন রানিং স্টাফ থাকার কথা। কিন্তু সেখানে বর্তমানে আছে ১ হাজার ৩৬ জন। ট্রেনের সময়সূচি ধরে রাখতে গেলে স্বাভাবিকভাবেই আমাদের একজনকে ২ জনের চাকরি করতে হয়। ফলে আমার এখানে মাইলেজের টাকা তো বেশিই হবে। এই টাকা তো আমাকে কষ্ট করে নিতে হয়। গত ১ থেকে ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত যখন আমরা আইনগতভাবে চাকরি করলাম, তখন কিন্তু ট্রেনের সব শিডিউল উলটপালট হয়ে গেল। অনেক ট্রেনের কিন্তু যাত্রাও বাতিল করেছে। কারণ, তখন আমরা একজনের ডিউটি একজনেই করেছি।’

কর্মসূচির কথা জানিয়ে মজিবুর রহমান আরও বলেন, ‘রেলওয়ের কর্মকর্তারা আমাদের ডাকলেন। তারপর ৯ ডিসেম্বর আমরা কর্মসূচি স্থগিত করলাম। তাঁরা আমাদের কাছে ১০ দিন সময় চেয়েছিল। আমি তাঁদের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দিয়েছি। কিন্তু তাঁরা আমাদের জন্য কিছু করতে পারলেন না। পরে ১ জানুয়ারি আমরা জানিয়ে দিলাম, আগামী ২৮ জানুয়ারি থেকে ট্রেন চালাব না।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আজ সোমবার দুপুরে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ফাহিমুল ইসলাম বলেন, ‘তাঁদের সঙ্গে আমাদের আলোচনা চলছে। তাঁরা আন্দোলনে না যাক, সেটা আমরা চাই।’

রেলওয়ের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, নিয়ম অনুযায়ী একজন রানিং স্টাফ (চালক, সহকারী চালক, গার্ড, টিকিট চেকার) ট্রেনে দায়িত্ব পালন শেষে তাঁর নিয়োগপ্রাপ্ত এলাকায় (হেডকোয়ার্টার) হলে ১২ ঘণ্টা এবং এলাকার বাইরে (আউটার স্টেশন) হলে ৮ ঘণ্টা বিশ্রামের সুযোগ পান। রেলওয়ের স্বার্থে কোনো রানিং স্টাফকে তাঁর বিশ্রামের সময় কাজে যুক্ত করলে বাড়তি ভাতা-সুবিধা দেওয়া হয়; যা রেলওয়েতে ‘মাইলেজ’ সুবিধা হিসেবে পরিচিত।

তবে ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয় মাইলেজ সুবিধা সীমিত করতে রেল মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়। ওই চিঠিতে আনলিমিটেড মাইলেজ সুবিধা বাদ দিয়ে তা সর্বোচ্চ ৩০ কর্মদিবসের সমপরিমাণ করার কথা জানানো হয়। এ ছাড়া বেসামরিক কর্মচারী হিসেবে রানিং স্টাফদের পেনশন ও আনুতোষিক ভাতায় মূল বেতনের সঙ্গে পাওয়া কোনো ভাতা যোগ করার বিষয়টি বাদ দেওয়া হয়। এরপরই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন রানিং স্টাফরা।’

মাইলেজ সুবিধা পুনর্বহালের দাবিতে তিন বছরের বেশি সময় ধরে আন্দোলন করছেন রানিং স্টাফরা। কয়েক দফায় অতিরিক্ত কাজ থেকে বিরত থাকাসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছেন তাঁরা। তবে বিভিন্ন সময়ে তৎকালীন রেলওয়ের মহাপরিচালক, রেলসচিব, রেলমন্ত্রীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আশ্বাসে তাঁরা আন্দোলন থেকে সরে আসেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত