দুস্থদের ত্রাণ দিতে এসে সড়কে ঝরল একটি পরিবার

ফরিদপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬: ১৪
আপডেট : ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬: ৫২

স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গের আশপাশ। কেউ শোকে স্তব্ধ হয়ে আছেন, কেউবা চিৎকার করে কাঁদছেন। ছেলে, তাঁর বউ ও দুই নাতিকে হারিয়ে পাগলপ্রায় বৃদ্ধ তারা মোল্যা। বিলাপ করে বলছেন, ‘আমার তোতা পাখি দুইড্যা চইল্যা গেল রে, ওরে আল্লাহ! কোথায় গেল রে, আমি কী নিয়ে বাঁচব রে।’

আজ মঙ্গলবার সকাল ৮টায় ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ফরিদপুরের শহরতলির কানাইপুরের দিগনগর এলাকায় পিকআপের সঙ্গে একটি বাসের সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলে পিকআপের ১১ যাত্রীসহ ১৪ জন মারা যান। ওই পিকআপে করে কয়েকটি দুস্থ পরিবার ও নিজের পরিবারকে নিয়ে ফরিদপুরে আসছিলেন বোয়ালমারী উপজেলার শেখর ইউনিয়নের সত্তরকান্দা গ্রামের তারা মোল্যার ছেলে রাকিবুল ইসলাম মিলন।

মিলন ঢাকায় অর্থ মন্ত্রণালয়ে চতুর্থ শ্রেণির একজন কর্মচারী ছিলেন। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল জেলা দুর্যোগ ও ত্রাণ অধিদপ্তর থেকে দুস্থদের ত্রাণের ব্যবস্থা করে দিয়ে পরিবার নিয়ে ঢাকায় ফিরে যাবেন। কিন্তু সবকিছুর আগেই মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় দুই শিশু ছেলে রুহান (৮), আবু সিনান (৩) ও স্ত্রী সুমি বেগমসহ (৩৫) পাড়ি জমান না ফেরার দেশে।

ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের পাশে আহাজারি করছেন তারা মোল্যা।খবর পেয়ে সকাল ৯টার দিকে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে ছুটে আসেন বৃদ্ধ তারা মোল্যাসহ স্বজনেরা। এসেই ছেলে, দুই নাতি ও ছেলের বউয়ের লাশ দেখে চিৎকার করে আহাজারি করতে থাকেন। 

তারা মোল্যা বলেন, ‘ঈদের ছুটিতে ওরা বাড়িতে এসেছিল। আজ ওর (মিলন) মা, স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নিয়ে ফরিদপুর সদরে যায়। গরিব মানুষকে নিয়ে যাচ্ছিল টিন দিতে। কাজ শেষে পরিবার নিয়ে ঢাকায় যেতে চেয়েছিল।’ 

খবর পেয়ে ছুটে এসেছেন শেখর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান ইস্রাফিল মোল্যা। তিনি বলেন, এলাকার দুস্থ মানুষকে নিয়ে ত্রাণের মালামাল দেওয়ার জন্য ফরিদপুর সদরে যাচ্ছিল মিলন। সেখানে আলফাডাঙ্গা ও বোয়ালমারী উপজেলার কয়েকটি দুস্থ পরিবারের লোকজন ছিল। কিছুদিন আগে তাঁরা ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হন। 

নিহত রাকিবুল ইসলাম মিলনের চাচাতো ভাই ইমরান মোল্যা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘লাশ বাড়িতে নিয়ে আসা হয়েছে। আজ বাদ মাগরিব পারিবারিক কবরস্থানে তাঁদের দাফন করা হবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত