Ajker Patrika

কাজ না করলে খামু কি?

আব্দুর রাজ্জাক, ঘিওর (মানিকগঞ্জ)
আপডেট : ০১ মে ২০২৩, ১৯: ৪১
Thumbnail image

মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার গোয়ালডাঙ্গী গ্রামের মো. চুন্নু একজন নির্মাণ শ্রমিক। ব্যাগ ভর্তি যন্ত্রপাতি নিয়ে সকালে কাজে বের হয়েছেন। সঙ্গে দুই সহকারী। সিমেন্ট আর বালুর মিশ্রণ কাজে ব্যস্ত তাঁরা। কুশল বিনিময় করার পর জিজ্ঞেস করলাম, আজ মে দিবস। শ্রমিকদের দিবস, আজ কাজ করতে এসেছেন কেন? জবাবে চুন্নু মিয়া বলেন, ভাইজান, মে দিবস কি আমাগো খাইবার দিবো? কাজ না করলে পরিবার নিয়ে খামু কি?

মে দিবসের দুপুর বেলা। প্রচণ্ড রোদ। ঢাকা আরিচা মহাসড়কের পাশে পুখুরিয়া এলাকার চাক-খুঁটি নির্মাণ শ্রমিক তোরাব ও আয়নাল কাজ করছেন। গরমে ঘম ঝরছে শরীরে ধুলার আস্তরণ। মে দিবস সম্পর্কে জানতে চাইলে একযোগে তাঁরা বললেন, ‘মে দিবস আছে হুনছি (শুনছি), কিন্তু ওই দিন কি অয় (হয়), কেন অয়? তা জানি না বাপু। আমরা গরিব মানুষ, কাম (কাজ) না করলে পেটে দানা পানি পড়বো না।’

চুন্নু, তোরাব, আয়নালের মতো প্রত্যন্ত এলাকার হাজারো শ্রমিক জানেন না মে দিবস কি? জানেন না তাঁরা এই দিবসের পটভূমি, কর্মসূচি ও অধিকার। তারা বোঝেন, একদিন কাজ না করলেই না খেয়ে থাকতে হবে। জীবন-জীবিকার টানে কেউ মাটি কাটছেন, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গড়ে তুলছেন সুউচ্চ অট্টালিকা। আবার কেউ ইটভাটায় আগুনের পাশে থেকে সংগ্রাম করছেন। এরকম নানা কষ্টকর ও ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় শ্রমিকেরা দিয়ে যাচ্ছেন তাঁদের অক্লান্ত শ্রম। মে দিবস তাঁদের কাছে আর দশ দিনের মতোই একটি দিন। তাই মে দিবসেও তাঁরা পেটের তাগিদে কাজ করে যাচ্ছেন। 

আজ সোমবার বিকেলে কথা হয় বানিয়াজুরী এলাকার এন.বি ইটভাটার নারী শ্রমিক জমিলা বেগমের সঙ্গে। তাঁর বয়স প্রায় ৬০। জোকা এলাকায় থাকেন বাবার বাড়িতে। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, স্বামী মানিক মিয়া বহু আগে তাঁকে ছেড়ে অন্যত্র বিয়ে করে সংসার করছেন। তার আর কোনো খোঁজ নেননি। দুই মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে তিনি বাবার বাড়ি বসবাস করছেন ২৫ বছর ধরে। মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেছে। ছেলেও বিয়ে করে অন্যত্র থাকে। খোঁজ নেয় না বৃদ্ধা মায়ের। ধুলো মাখা গাল বেয়ে ঘাম ঝরছে। জানালেন, মায়ের পরিচয় দিতে খুব লজ্জা লাগে তাঁর ছেলের। তবুও দোয়া করি আল্লায় যেন ওদের সুখে রাখে। এই বয়সে আর শরীরে সয় না। এমন কপাল যেন আর কারও না হয়।

মানিকগঞ্জ নির্মাণ শ্রমিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শ্রমিকদের পরিশ্রমের ফলে এই দেশ আজ উন্নত। সেই শ্রমিকদের দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজের পারিশ্রমিকে যে বৈষম্য রয়েছে তা দূর করতে হবে।’

উপজেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি মো. ছানোয়ার হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মহান মে দিবসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনুধাবন করে শ্রমিকদের উপযুক্ত মজুরি, নিরাপত্তা ও সম্মান দিতে হবে।’

ঘিওর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান হাবিব আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মে দিবস যায়, মে দিবস আসে। শ্রমিকদের ভাগ্য আর পরিবর্তন হয় না। পালনের জন্য মে দিবস পালন না করে মে দিবসের প্রকৃত তাৎপর্য কার্যকর নিশ্চিত করতে হবে। তবেই এগিয়ে যাবে দেশ ও অর্থনীতি। পাশাপাশি তাদের কাজের ও জীবনের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করতে হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নারী সহকর্মীর সঙ্গে রাতযাপন: হাইটেক পার্কের ডিডি আতিক বরখাস্ত

বাংলাদেশসহ ৩ দেশে উন্নয়ন সহায়তা বন্ধের সিদ্ধান্ত সুইজারল্যান্ডের

পদ্মা সেতু ও ড. ইউনূসকে নিয়ে ভারত থেকে শেখ হাসিনার ভাষণ! ভাইরাল ভিডিওর পেছনের ঘটনা জানুন

বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিনের পদত্যাগ

২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের ফেসবুক প্রোফাইল পিকচার পরিবর্তন কর্মসূচি শুরু

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত