সোহেল চৌধুরী হত্যা: আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ ৩ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনসহ খালাস ৬

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ০৯ মে ২০২৪, ১৩: ৪১
আপডেট : ০৯ মে ২০২৪, ১৫: ৩১

জনপ্রিয় চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলায় বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ তিন আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২-এর বিচারক অরুণাভ চক্রবর্তী এ রায় দেন। রায়ে শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমনসহ ছয়জনকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে। ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি সাদিয়া আফরিন শিল্পী রায়ের বিষয়টি আজকের পত্রিকাকে নিশ্চিত করেন। 

যাবজ্জীবন সাজা পাওয়া অপর আসামিরা হলেন বনানী ট্রাম্পস ক্লাবের মালিক আফাকুল ইসলাম ওরফে বান্টি ইসলাম ও আদনান সিদ্দিকী। 

তিনজনের প্রত্যেককে কারাদণ্ডের পাশাপাশি ২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানা প্রদানে ব্যর্থ হলে আরও এক মাস কারাভোগ করতে হবে বলে রায়ে বলা হয়েছে। তিনজন পলাতক থাকায় তাঁদের বিরুদ্ধে সাজাসহ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। গ্রেপ্তার হওয়ার পর তাঁদের সাজা কার্যকর হবে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে। 

যাঁদের খালাস দেওয়া হয়েছে তাঁরা হলেন দেশের একুশ শীর্ষ সন্ত্রাসীর একজন সানজিদুল ইসলাম ইমন, আশীষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরী, তারিক সাঈদ মামুন, ফারুক আব্বাসী, সেলিম খান ও হারুন অর রশীদ ওরফে লেদার লিটন ওরফে বস লিটন।

এই ছয়জনের মধ্যে ইমনকে কারাগার থেকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। অন্য কোনো মামলায় প্রয়োজন না থাকলে তাঁকে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। জামিনে থাকা বোতল চৌধুরী আদালতে হাজির ছিলেন। তাঁকে তাৎক্ষণিক মুক্তি দেওয়া হয়। অন্য চারজন পলাতক থাকায় তাঁদের বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা প্রত্যাহার করা হয়। 

১৯৯৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর বনানীর ট্রাম্পস ক্লাবের সামনে গুলি করে হত্যা করা হয় সোহেল চৌধুরীকে। ঘটনার পর সোহেলের ভাই তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী বাদী হয়ে গুলশান থানায় হত্যা মামলা করেন।

১৯৯৯ সালের ৩০ জুলাই ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার আবুল কাশেম ব্যাপারী ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন। বিতর্কিত ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সঙ্গে বাদানুবাদই এই হত্যার নেপথ্য কারণ বলে মামলার অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়।

দীর্ঘদিন ধরে এই মামলার নথি গায়েব ছিল। ২০২২ সালের ২৩ জানুয়ারি দৈনিক আজকের পত্রিকায় ‘নায়ক খুনের মামলা গুম’ শীর্ষক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ছাপা হওয়ার পর বিষয়টি হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়ায়। নথি খুঁজে বের করার দাবিতে রিট আবেদন হয়।

পরে নথি পাওয়া যায়। মামলার বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়। কিন্তু এই মামলার কেস ডকেট (সিডি) খুঁজে না পাওয়ায় কয়েক মাস অতিবাহিত হয়। শেষ পর্যন্ত কেস ডাকেট ছাড়াই সাক্ষ্য গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন ট্রাইব্যুনাল।

এই মামলার ৩৮ সাক্ষীর মধ্যে ১০ জনের সাক্ষ্য নিয়েছেন আদালত। গত ২৮ জানুয়ারি মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। ১১ ফেব্রুয়ারি আসামিরা আত্মপক্ষ সমর্থন করে নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন।

রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষ যুক্তিতর্ক শুনানি শেষ করার পর গত ২৯ এপ্রিল ট্রাইব্যুনাল রায়ের তারিখ ধার্য করেন। সেদিন জামিনে থাকা ও কারাগারে থাকা আসামিদের আদালতে হাজির করা হয় বলে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সাদিয়া আফরোজ শিল্পী জানান।

সোহেল চৌধুরী হত্যার বিচারের আড়াই দশক

রাজধানীর বনানীর ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান ছিলেন চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী। ১৯৯৮ সালের ১৭ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে বনানীর ক্লাব ট্রামসের নিচে গুলি করে হত্যা করা হয় তাঁকে। তাঁর বড় ভাই তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী গুলশান থানায় হত্যা মামলা করেন। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ মামলাটি তদন্ত করে। শুরুতে ক্লাবের ১১ সদস্য-কর্মচারীকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে। ঘটনাস্থল থেকে আটক করা হয় আদনান সিদ্দিকি নামের এক ব্যক্তিকে।

ডিবি পুলিশ তদন্তে নেমে ১৯৯৯ সালের ৩ জানুয়ারি গুলশান থেকে ক্লাব ট্রামসের মালিক বান্টি ইসলামকে গ্রেপ্তার করে। এর তিন দিন পর ৬ জানুয়ারি গুলশান লেডিস পার্কের সামনে থেকে গ্রেপ্তার করা হয় আলোচিত শিল্পপতি আজিজ মোহাম্মদ ভাইকে। গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে আদনান সিদ্দিকি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। তাতে তিনি উল্লেখ করেন, হত্যাকাণ্ডের আগে এক শিল্পপতির ফোন পেয়ে তিনি ঢাকা ক্লাব থেকে ঘটনাস্থলে যান।

এক বছর তদন্তের পর ১৯৯৯ সালের ৩০ জুলাই ডিবি পুলিশের সহকারী কমিশনার আবুল কাশেম ব্যাপারী ৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন। এতে আজিজ মোহাম্মদ ভাই ছাড়াও তারিক সাঈদ মামুন, সেলিম খান, হারুন অর রশীদ ওরফে লেদার লিটন, ফারুক আব্বাসী, আশীষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরী এবং শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমনকে অভিযুক্ত করা হয়।

২০০১ সালের ৩০ অক্টোবর এই মামলার অভিযোগ গঠন করা হয়। এরপর বিচারের জন্য পাঠানো হয় ২ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে। কিন্তু মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আসামি আদনান সিদ্দিকি ২০০৩ সালের ১৯ নভেম্বর হাইকোর্টে রিট করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের বেঞ্চ ২০০৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি রুলসহ আদেশ দেন। এতে বলা হয়, রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মামলার কার্যক্রম নিম্ন আদালতে স্থগিত থাকবে।

এরপর প্রায় ১২ বছর মামলাটির কার্যক্রম স্থগিত থাকে। বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তীর বেঞ্চ শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ৫ আগস্ট রায় দেন। রায়ে রুলটি খারিজ করে দেওয়া হয়। হাইকোর্টের দেওয়া স্থগিত আদেশ প্রত্যাহার করা হয়। এতে মামলার বিচার কার্যক্রম চলতে আইনত আর কোনো বাধা থাকে না। আদালতের আদেশ নিম্ন আদালতে পাঠাতে বলেন হাইকোর্ট। কিন্তু সেই আদেশ আর নিম্ন আদালতে পৌঁছায়নি।

হাইকোর্ট ও নিম্ন আদালতের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই মামলার আসামির তালিকায় একজন শীর্ষ সন্ত্রাসী ও প্রভাবশালী ব্যবসায়ী আছেন। ধারণা করা হচ্ছে, তাঁদের প্রভাবে বিচারকাজ থামিয়ে দিতে উচ্চ আদালতের নথি গায়েব করা হয়।

আরও পড়ুন:

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত