রূপগঞ্জে আইনের ঘরে বেআইনি ভরাট
প্রতিনিধি, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ)
প্রকাশ : ২৭ মার্চ ২০২১, ১৮: ৩১
রূপগঞ্জ থানার সামনে থাকা শতবর্ষী পুরনো সরকারী পুকুরটির একাংশ ভরাট করে ফেলা হয়েছে। থানার সৌন্দর্য্য বর্ধনের জন্যই এমনটা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে থানা কর্তৃপক্ষ।
থানা পুলিশ বলছে, থানার সামনের জায়গা বড় করার জন্যই পুকুরের একাংশ ভরাট করা হচ্ছে। তাতে থানার সৌন্দর্য্য আরও বাড়বে। তবে স্থানীয়রা বলছেন, পুকুরের একাংশ ভরাটের কারণে সৌন্দর্য্য নষ্ট হচ্ছে রূপগঞ্জ থানার। জলাধার অথবা পুকুর অনুমতি ছাড়া ভরাট করা যে বেআইনী সেটার তোয়াক্কা না করে কেবল মৌখিক অনুমতিতে ভরাট করা হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী পুকুরটি।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, শতবর্ষী পুকুরটির একাংশ থানার সৌন্দর্য্য বৃদ্ধির জন্য ভরাট করা হয়েছে। যুগ যুগ ধরে পুকুরটি এলাকার মানুষ নানা কাজে ব্যবহার করে আসছে। দেশের প্রচলিত আইনে জলাশয় ভরাট দণ্ডনীয় অপরাধ। পুকুর ভরাটের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অনুমতি নেওয়া হয়েছে কিনা সেটা জানেন না থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, রূপগঞ্জ থানার সামনে থাকা ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন পুকুরটির একাংশে বাঁশের খুঁটি পুঁতে বেড়া দেওয়া হয়েছে। পুকুরের পশ্চিমাংশ বালু দিয়ে ভরাট করে ফেলা হয়েছে। চতুর্ভুজ আকৃতির এ পুকুরটি স্থানীয়দের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক থানার সামনে গড়ে উঠা কয়েকজন দোকান মালিক বলেন, থানার পশ্চিমাংশের টাইলস করা ঘাটে আশপাশের লোকজন গোসল করতো। থানায় আসা আগন্তুকরা বসে সময় কাটাতও।
উল্লেখ্য পরিবেশ সংরক্ষণ আইন (২০১০ সালে সংশোধিত) অনুযায়ী, যেকোনো ধরণের জলাধার বা পুকুর ভরাট সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং ভরাটকারীর বিরুদ্ধে আইনের ৭ ধারায় প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য ও জীব বৈচিত্র্য নষ্ট করা পরিবেশগত ক্ষতি ও বিধ্বংসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের বিধান রয়েছে। জলাধার সংরক্ষণ আইন-২০০০ অনুযায়ী, কোনও পুকুর, জলাধার, নদী-খাল ইত্যাদি ভরাট করা বেআইনি। ওই আইনের ৫ ধারা মতে, জলাধার হিসেবে চিহ্নিত জায়গার শ্রেণী পরিবর্তন করা যাবে না।
বক্তব্য নিতে পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুনের মুঠোফোনে কয়েক দফা ফোন দেওয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আতিকুল ইসলাম বলেন, আমি সদ্য যোগদান করেছি। পুকুর ভরাট করা বা শ্রেণী পরিবর্তন করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এক্ষেত্রে অনুমতি নেওয়া হয়েছে কিনা আমার জানা নেই।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহ নুসরাত জাহান বলেন, পুকুর ভরাট কিংবা শ্রেণী পরিবর্তন করতে হলে জেলা প্রশাসকের অনুমতি প্রয়োজন। আমাদের কাছে একটা আবেদন এসেছে। তবে ডিসি স্যারের অনুমতি নেওয়া হয়েছে কিনা সেটা জানা নেই।
রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মহসিনুল কাদির বলেন, আমি এখানে আসার আগে এটা করা হয়েছে। তবে থানার সৌন্দর্য্য বাড়াতেই পুকুরের কিছু অংশ ভরাট করা হয়েছে। এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তর বা জেলা প্রশাসকের অনুমতি নেয়া হয়েছে কি না তা আমি সঠিক জানি না।