ফাঁকা ঢাকায় পুলিশের দুর্বল চেকপোস্ট

শাহরিয়ার হাসান, ঢাকা
প্রকাশ : ১৪ জুন ২০২৪, ০০: ২৫
আপডেট : ১৪ জুন ২০২৪, ০১: ৩৬

ঈদের ছুটিতে রাজধানীর বাসা-বাড়িতে চুরির ঘটনার পেছনে পুলিশের চেকপোস্টের দুর্বলতাকে দায়ী করছেন খোদ ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার। তাঁর মতে, সঠিক সময় চেকপোস্ট না বসানো আর দুর্বল তদারকির ফলে বাসা-বাড়িতে চুরির ঘটনা বেড়েছে। এসব অপরাধ ঠেকাতে না পারার দায় সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার। 

গত ঈদুল ফিতরে দায়ের হওয়া চুরির মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি এবং আসন্ন ঈদুল আজহার ছুটিতে ফাঁকা বাসা-বাড়ি, আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তা নিশ্চিতে পরামর্শ ও কর্মকর্তাদের সতর্ক করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। 

পুলিশ সূত্র বলছে, গত ঈদুল ফিতরের ছুটিসহ এপ্রিল-মে দুই মাসে রাজধানীতে অনন্ত ৯৭টি চুরির ঘটনা ঘটেছে। ঈদুল আজহায় বাসা-বাড়িতে চুরির ঘটনার বাড়ার পাশাপাশি শহরের নানা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চুরির ঘটনার আশঙ্কা করছে পুলিশ। তাই পুলিশ কর্মকর্তাদের নিজ দায়িত্বপ্রাপ্ত এলাকায় থাকা ব্যাংক, বিমা, এটিএম বুথ এবং বাসা-বাড়ি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে বৈঠক করতে বলা হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে ডিএমপির ক্রাইম বিভাগে পাঠানোর কথা রয়েছে। ডিএমপি সদর দপ্তর কেন্দ্রীয়ভাবে ফাঁকা ঢাকার পুলিশি নিরাপত্তা নজরদারি, টহল তদারকি ও সেই সব প্রতিষ্ঠানের খোঁজ রাখবে। 

ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) ড. খ. মহিদ উদ্দিন বলেন, প্রতি বছরই ফাঁকা রাজধানী পাহারা দিতে পুলিশ সদস্যরা সতর্ক থাকে। এর পরেও কিছু ঘটনা ঘটে যায়। এসব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা শূন্যের কোঠায় আনতে আরও সতর্ক থেকে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। 

পুলিশ কর্মকর্তারা বলছে, রাজধানীতে হঠাৎ করেই চুরির ঘটনা বেড়ে গেছে। রাজধানীতে বাসা ফাঁকা পেয়ে দরজা ভেঙে বা গ্রিল কেটে নগদ টাকা বা মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে যাচ্ছে চোরেরা। সম্প্রতি ডিএমপি কমিশনার বিশেষ অপরাধ পর্যালোচনা সভায় সিঁধেল চুরি বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে কড়া নির্দেশনা দেন। পাশাপাশি ছিঁচকে চোরদের তালিকা করে তাদের বিরুদ্ধে অভিযানের নির্দেশ দেন। সভায় টহল টিমের ব্যর্থতার কারণে চুরি ঠেকাতে না পারায় অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেন ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান। 

কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, গত ঈদুল ফিতরে ছুটি ও এর পরে চুরির ঘটনায় পুলিশের চেকপোস্টে সমস্যা ছিল। সঠিকভাবে সঠিক সময়ে চেকপোস্ট করা হয়নি। চেকপোস্টের অফিসার ও ফোর্সকে যথাযথ ব্রিফিং এবং তদারকি করা হয়নি। এটি এসি-ওসিদের ব্যর্থতা। 

পুলিশ সদস্যের যথাসময়ে ও যথাস্থানে পর্যাপ্ত ফোর্স নিয়ে দৃশ্যমান চেকপোস্ট পরিচালনা করতে বলেন কমিশনার। এর বাইরে চেকপোস্টে থাকা পুলিশ সদস্যদের বিশেষ প্রশিক্ষণের বিষয়ে নির্দেশ দেন। 

তবে চেকপোস্টে পুলিশি হয়রানির শিকার হওয়া কেউ কেউ প্রশ্ন তুলছেন, দিনে দুপুরে রাস্তায় যেভাবে পুলিশ তল্লাশি এবং জেরা করে, সেখানে রাতের ডিউটিতে কেন অবহেলা? তাঁদের অভিযোগ, পুলিশ সব সময় চোর ডাকাতদের দিকে নজর না দিয়ে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএমপির অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা বলেন, টহল টিম কাজে ফাঁকি দিয়ে গাড়ি নিয়ে অন্য জায়গায় চলে যায়। পুলিশের ঊর্ধ্বতনরা সেটা বুঝতে পেরে, সকল টহল গাড়িতে জিপিএস ট্যাকার লাগানোর নির্দেশ দিয়েছেন। 

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) বাড্ডা জোনের সহকারী কমিশনার রাজন কুমার সাহা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ফাঁকা ঢাকার নিরাপত্তা নিয়ে পুলিশ কমিশনার নানা রকম নির্দেশনা দিয়েছেন। জোনগুলোতে ফোর্স বানানো হয়েছে। টহল টিম সতর্কতার সঙ্গে কাজ করছে। এলাকা ভিত্তিক হাউজিং ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা কীভাবে নিশ্চিত করা যায় সে বিষয়ে তাঁদের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত