জবাইখানা নাকি প্রস্রাবখানা? 

সাইফুল মাসুম, ঢাকা
প্রকাশ : ২৯ জুলাই ২০২১, ২১: ০২
আপডেট : ৩০ জুলাই ২০২১, ০০: ০০

মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের পূর্ব পাশে লাগোয়া ঘর। ভেজা স্যাঁতসেঁতে মেঝে। ঘরের কোনায় পানির কুয়। এক পাশে দড়িতে বাঁধা একটি সিলমারা গরু। অন্যপাশে জমাট রক্ত আর আবর্জনার স্তূপে ভরা ড্রেন। গতকাল বুধবার দুপুরে সিগারেট হাতে ঘরের ভেতরের ওই ড্রেনে একজনকে প্রস্রাব করতে দেখা গেছে। মিনিট দশেক পর একই কায়দায় প্রস্রাব করলেন আরেকজন। দুজনই কৃষি মার্কেটের মাছ বিক্রেতা, একজনের নাম টিপু অন্যজনের নাম রনি। রনি জানালেন, ফাঁকা সময় পেলে সিগারেট ফুঁকতে আসেন, প্রস্রাবখানা দূরে হওয়ায় কাজটা এখানেই সারেন।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মালিকানাধীন মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের জবাইখানার এমন পরিস্থিতি। দুর্গন্ধময় পরিবেশের কারণে অনেকে এটাকে প্রস্রাবখানা ভেবে ভুল করেন। এই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে প্রতিদিন মোহাম্মদপুর ও ধানমন্ডি এলাকার প্রায় অর্ধশত গরু জবাই করা হয়। জবাই করা এই গরুর মাংস বিক্রি হয় রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজারে।

ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নেওয়ার এক বছর পূর্তিতে গত মে মাসে (২০২১) জানিয়েছিলেন, ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ে মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের জবাইখানা সংস্কারের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এই ঘোষণার তিন মাস পেরিয়ে গেলেও জবাইখানায় প্রকল্পের ছিটেফোঁটাও চোখে পড়েনি।

জবাইখানার ইনচার্জ পরিচয় দেওয়া মোহাম্মদ মুরাদের নিজের মাংসের দোকান রয়েছে মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে। তিনি আজকের পত্রিকাকে জানান, ‘জবাইখানার উন্নয়নে কোনো  প্রকল্পের কাজ এখনো শুরু হয়নি। সনাতনী পদ্ধতিতে এখানে পশু জবাই হয়।’ জবাইখানার ভেতরে কৃষি মার্কেটের দোকানিদের প্রস্রাব করার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সকাল বেলা গরু জবাই হয়, তখন কেউ প্রস্রাব করতে পারে না। দুপুর ও বিকেলে কেউ না থাকার সুযোগে অনেকে সিগারেট খেয়ে প্রস্রাব করে চলে যায়।’

ময়লা জমে থাকে ডিএনসিসির জবাইখানায়রাজধানীতে ডিএনসিসির তিনটি জবাইখানা রয়েছে। এর মধ্যে মহাখালীরটা বন্ধ রয়েছে। চালু আছে মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট ও মিরপুর-১১ নম্বরের নিউ সোসাইটি মার্কেটের পশু জবাইখানা। এই দুটি জবাইখানায় প্রতিদিন সাড়ে তিন শত পশু জবাই করার ব্যবস্থা আছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন প্রতি গরু জবাই করতে ৫০ টাকা, মহিষের জন্য ৭৫ টাকা, ছাগল বা ভেড়ার জন্য ১০ টাকা করে নিয়ে থাকে।

মিরপুর-১১ নম্বরের নিউ সোসাইটি মার্কেটের মাংস বিক্রেতা জামাল মিয়া জানান, ডিএনসিসির মিরপুর জবাইখানায় তিনি প্রায় গরু জবাই করেন। ভেতরে নোংরা পরিবেশ, ময়লা জমে থাকায় গরু জবাইকারীরা অসুবিধায় পড়েন।

জবাইখানার অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের বিষয়টি নজরে রয়েছে জানিয়ে ডিএনসিসির ভেটেরিনারি অফিসার ডা. শারমিন সামাদ বলেন, ‘করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের কারণে মহাখালীর জবাইখানা বন্ধ রয়েছে। মিরপুর ও মোহাম্মদপুর জবাইখানার অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের বিষয়টি আমাদের নজরে রয়েছে। জবাইখানার মান উন্নয়নে বরাদ্দের কথা থাকলেও কোনো  প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়নি। লোকবল কম থাকায় ঠিকমতো তদারকি করা যায় না। এখানে ইজারাদারেরও অনেক দায় রয়েছে। স্বাস্থ্যকর পরিবেশে যাতে পশু জবাই করা হয় লকডাউনের পরে বিষয়টি আমরা নিশ্চিত করব।’

ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সেলিম রেজা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা জবাইখানার পরিবেশকে উন্নত করার চেষ্টা করছি। ইতিমধ্যে সিটি করপোরেশন থেকে কিছু কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। ডিএনসিসির প্রত্যেক অঞ্চলে জবাইখানা করার পরিকল্পনা আমাদের আছে। মোহাম্মদপুর ও মিরপুর জবাই খানা নিয়ে খোঁজ নিচ্ছি, ইতিবাচক পরিবেশ করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত