Ajker Patrika

বাংলাদেশে প্রতি ৩ শিশুর মধ্যে ২ জনই সুষম খাদ্য সংকটের সম্মুখীন: ইউনিসেফ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
বাংলাদেশে প্রতি ৩ শিশুর মধ্যে ২ জনই সুষম খাদ্য সংকটের সম্মুখীন: ইউনিসেফ

প্রারম্ভিক শৈশবে পুষ্টি বঞ্চনা শীর্ষক ইউনিসেফের নতুন এক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে পাঁচ বছরের কম বয়সী প্রতি তিন শিশুর মধ্যে দুজনই সুষম খাদ্য সংকটের মধ্যে বসবাস করে। এর অর্থ হলো—পর্যাপ্ত পুষ্টির জন্য ইউনিসেফ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) পর্যাপ্ত পুষ্টি নিশ্চিত করার জন্য ন্যূনতম যে পাঁচ ধরনের (গ্রুপের) খাদ্য গ্রহণের সুপারিশ করেছে, বাংলাদেশের প্রায় ১ কোটি শিশু তা থেকে বঞ্চিত। 

আজ বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছে ইউনিসেফ। 

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, শৈশবকালীন পর্যাপ্ত সুষম খাবারের ঘাটতি সব শিশুর ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে; তবে এর বিশেষ প্রভাব দেখা যায় শিশুর প্রারম্ভিক বিকাশে। উদ্বেগজনক ব্যাপার হলো, বাংলাদেশে পাঁচ বছরের কম বয়সী প্রতি পাঁচ শিশুর মধ্যে একজন সুষম খাদ্যের তীব্র সংকটের মধ্যে বাস করে, যারা দিনে মাত্র এক বা দুই ধরনের খাবার খেয়ে বেঁচে থাকে। যেসব শিশুরা নিয়মিত এই পাঁচ ধরনের খাবার খেতে পারে না তাঁদের অপুষ্টির একটি মারাত্মক ধরন-শীর্ণকায় (উচ্চতার তুলনায় কম ওজন)-এর শিকার হওয়ার ঝুঁকি ৫০ শতাংশ বেশি থাকে। 

বিশ্বব্যাপী সুষম খাদ্য সংকটের শিকার শিশুদের মোট সংখ্যার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশের (৬৫ শতাংশ) বাস যে ২০টি দেশে, বাংলাদেশ তার একটি। এর পরিণাম সারা জীবনের জন্য স্থায়ী হতে পারে। শৈশবে ভালো পুষ্টি থেকে বঞ্চিত শিশুরা সাধারণত স্কুলে কম ভালো করে, কর্মজীবনে কম উপার্জন করে এবং দারিদ্র্য ও বঞ্চনার চক্রে আটকে থাকে। 

বাংলাদেশে ইউনিসেফের রিপ্রেজেনটেটিভ শেলডন ইয়েট বলেন, ভালো পুষ্টি শিশুদের বেঁচে থাকা, বৃদ্ধি ও বিকাশের ভিত্তি। শিশুদের জন্য পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে পরিবারের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ; কিন্তু তাদের একার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এ বিষয়ে পরিবারগুলোকে সহায়তা করার জন্য প্রয়োজন সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা, যার আওতায় পুষ্টি, সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম ও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে বিদ্যমান সেবাগুলোকে আরও উন্নত ও সহজলভ্য করা হবে; সঙ্গে আরও প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং সুপরিকল্পিত বিনিয়োগ। বাংলাদেশে বৈচিত্র্যময় ও স্বাস্থ্যকর খাবারগুলোকে সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী করার মাধ্যমে দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনা সম্ভব; এভাবে প্রতিটি শিশুর জন্য স্বাস্থ্যকর ও সুন্দর সূচনা নিশ্চিত করা সম্ভব। 

ইউনিসেফ মনে করে, বাংলাদেশে শৈশবকালীন সুষম খাদ্যের সংকট বৃদ্ধির পেছনের কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে—পুষ্টিকর খাদ্য কেনায় পরিবারের অক্ষমতা, শিশুকে পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানো সম্পর্কে বাবা-মায়েদের সচেতনতার অভাব, অপুষ্টিকর অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবার ও চিনি মিশ্রিত কোমল পানীয়ের ব্যাপক বিপণন ও এসব খাবার খাওয়ার বদভ্যাস এবং জলবায়ু পরিবর্তন জনিত দুর্যোগের ব্যাপকতা বৃদ্ধি যা খাদ্য ব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। জলবায়ু পরিবর্তন জনিত বিপর্যয়, বিশেষ করে, সতেজ খাবারের প্রাপ্যতা ও কৃষিক্ষেত্রে উৎপাদনশীলতা কমিয়ে দেয় এবং খাদ্যের দাম রেকর্ড-উচ্চতায় নিয়ে যায়। 

শৈশবকালীন সুষম খাদ্যের সংকট ও অপুষ্টি দূর করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সেবা প্রদানে ইউনিসেফ বাংলাদেশ সরকারকে সহায়তা করছে। শিশুদের খাবার ও যত্ন বিষয়ে বাবা-মা ও পরিবারগুলোকে সঠিক পরামর্শ দিতে ইউনিসেফ কমিউনিটি স্বাস্থ্য ও পুষ্টি কর্মীদেরও (হেলথ ও নিউট্রিশন ওয়ার্কার) সহায়তা করছে। পাশাপাশি, নগদ অর্থ ও খাদ্য সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা আরও সক্রিয় করতেও ইউনিসেফ কাজ করে চলেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত