যে কারণে গানের অনুষ্ঠানে বক্তা হতে চান না আসাদুজ্জামান নূর

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১৭ নভেম্বর ২০২৩, ২৩: ০৯
Thumbnail image

কীর্তনীয়া সুবল চন্দ্র বসাকের প্রদীপ প্রজ্বালনের মাধ্যমে উদ্বোধন হলো ত্রয়োদশতম রাধারমণ লোক সংগীত উৎসব। আজ শুক্রবার বিকেল থেকে উৎসব শুরু হয়েছে। আগামীকাল শনিবার পর্যন্ত চলবে দুই দিনব্যাপী এই আয়োজন। আয়োজনে বাংলার লোক সংস্কৃতি তুলে ধরবেন বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা লোকশিল্পীরা।

রাজধানীর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে এ আয়োজনে প্রধান অতিথি ছিলেন সাবেক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর।

এ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব বলেন, ‘কেন আমি গানের অনুষ্ঠানে বক্তা হতে চাই না, তার একটা গল্প আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তখনকার সরকার–বিরোধী সব ছাত্র সংগঠন মিলে ফেব্রুয়ারিতে একুশের অনুষ্ঠান হবে পল্টন ময়দানে। সেখানে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা থাকবে। সব ছাত্র সংগঠনের মধ্যে একটা প্রতিযোগিতা কাজ করত। কার দল থেকে কতজন আছে। আমি তখন ইকবাল হলে থাকি। আমি স্নান করে একটু গুনগুন করছি। তখন আমার হাত খপ করে ধরে এক ছাত্র নেতা বলেন, এইতো গায়ক পেয়েছি।’

আসাদুজ্জামান নূর বলেন, ‘আমরা আলতাফ মাহমুদদের মতো শিল্পীদের সামনে কোনোমতে কোরাস গাইছি। আমি ছোটখাটো লোক ছিলাম। মঞ্চে আমাকে প্রথম দিকে বসানো হলো। সেই ছবি ছাপা হলো পত্রিকায়। বাবা আমাকে দেখে একটি চিঠি লিখে বললেন, “দেখিলাম ঢাকায় তুমি গান গাহিয়া বেড়াইতেছ। তাতে বোঝা যায়, ঢাকার গানের কী অবস্থা!” সেই থেকে আমি আর গান করার চেষ্টা করিনি।’

প্রধান অতিথি বর্তমান সময়ের সংস্কৃতি চর্চার অবস্থা নিয়ে বলেন, ‘আজকে লোক সংগীতের দুটো সমস্যা আছে। এক, চর্চার অভাব, দুই, সেটা ধারণ করার অভাব। আমাদের ভেতর থেকে সুকুমার বৃত্তিগুলো ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে। শিশুরা রোবটের মতো বড় হচ্ছে। তারা বইয়ের মধ্যে আটকে গেছে। খেলাধুলা নেই, সুকুমার বৃত্তি চর্চা নেই। আমি দায়ী করি বাবা-মাদের আর শিক্ষকেরাও দায়ী।’ 

তিনি বলেন, ‘ছেলেমেয়েদের গান নাচে নিরুৎসাহিত করছেন অভিভাবকেরা। কারণ এখানে নম্বর নেই। নম্বর না হলে জিপিএ ফাইভ পাওয়া যাবে না। তবে শিক্ষাক্রম নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। রাতারাতি তো আর চেঞ্জ করা যায় না। শুরু হচ্ছে। কিন্তু দেখলাম এটা নিয়ে অভিভাবকেরা, শিক্ষকেরা মন খারাপ করছেন।’ 

শিল্পকলা একাডেমিতে শুরু হয়েছে ত্রয়োদশতম রাধারমণ লোক সংগীত উৎসব। ছবি: আজকের পত্রিকারাধারমণ সংস্কৃতিচর্চা কেন্দ্রের আয়োজনে কেন্দ্রের সভাপতি মহমুদ সেলিমের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য দেন সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ রায়। বক্তব্য দেন কেন্দ্রের সহসভাপতি ঝুনা চৌধুরী। সঞ্চালনায় ছিলেন রুপা চক্রবর্তী। 

দুই দিনব্যাপী উৎসবে রাধারমণ, সৈয়দ শাহনূর, হাসন রাজা, জালাল খাঁ, উকিল মুন্সী, মনমোহন দত্ত, শেখ ভানু, ফকির দীন হীন, শাহ আরকুম আলী, দীন শরৎ, শাহ আবদুল করিম, দুরবিন শাহ, কালা শাহ—এর গান ও বাণী পরিবেশিত হবে। 

উৎসবে ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ বিভিন্ন জায়গার শতাধিক শিল্পী অংশ নিচ্ছেন। 

শুধু গানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে না আয়োজন, থাকছে পিঠা উৎসবও। এ ছাড়া শনিবার জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘কারার ওই লৌহকপাট’ গান ‘পিপ্পা’ ছবিতে বিকৃতভাবে উপস্থাপনের প্রতিবাদ জানানো হবে শুদ্ধস্বরে গানটি গেয়ে। গাইবেন বাংলাদেশ সংগীত সংগঠন সমন্বয় পরিষদ, রাধারমণ সংস্কৃতিচর্চা কেন্দ্র ও আমার একাত্তরের শিল্পীরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত