‘আমি কি আপনার কামলা দেই’, পরামর্শ চাইতে আসা কৃষককে কৃষি কর্মকর্তা

ঘিওর (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০২ এপ্রিল ২০২৪, ২১: ০৬
আপডেট : ০৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৯: ৫৫

মানিকগঞ্জের শিবালয়ে পোকার আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে একজন কৃষকের বোরো ধান। প্রতিকার ও পরামর্শ পেতে প্রবীণ কৃষক ফজলুর রহমান (৬৫) পোকা আক্রান্ত সেই একগুচ্ছ ধান নিয়ে গিয়েছিলেন কৃষি অফিসে। সেখানে সমস্যা সমাধানে পরামর্শের বদলে তাঁকে গালাগালি করে অফিস থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।

তবে বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন জেলা কৃষি কর্মকর্তা। আজ মঙ্গলবার দুপুরে এসব ঘটনা ঘটেছে মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয়ে।

ভুক্তভোগী কৃষক ফজলুর রহমান বলেন, ‘এ বছর ৬০ শতাংশ জমিতে বোরো আবাদ করেছি। কিন্তু কিছুদিন ধরে পোকার আক্রমণে কচি ধান মরে যাচ্ছে। কৃষি কর্মকর্তাদের মাঠে থেকে কৃষি ও কৃষকদের সুবিধা-অসুবিধা দেখার কথা থাকলেও তাঁরা মাঠে যান না। তাই আজ বাধ্য হয়ে একগুচ্ছ ধান হাতে নিয়ে উপজেলা কৃষি অফিসে পরামর্শের জন্য আসি। এ সময় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সালাউদ্দিন সুজনকে বিষয়টি জানাই।’

ফজলুর রহমান জানান, এ সময় তিনি তাঁর ধানগুলোর ছবি তুলে রাখার জন্য অনুরোধ করেন এবং জেলার কৃষি অধিদপ্তরের উপপরিচালকের মোবাইল নম্বর চান। আর এতে রেগে যান ওই কৃষি কর্মকর্তা।

কৃষক ফজলুর রহমান বলেন, ‘আমার সাথে খুবই খারাপ আচরণ করেছেন উনি। উনি বলেছেন আমি কি আপনার কামলা দেই। আপনি কি দেশের প্রেসিডেন্ট হয়ে গেছেন। আপনি বললেই মাঠে যেতে হবে। যা পারেন করেন গা। আপনি বেরিয়ে যান। যদি বয়স্ক লোক না হতেন, তাহলে আপনাকে দেখে দিতাম।’ এ সময় উপসহকারী ওই কৃষি কর্মকর্তার সঙ্গে অন্য সহকর্মীরাও যুক্ত হন বলেও জানান তিনি।

এ বিষয়ে জানতে পেরে কৃষক ফজলুর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে পুনরায় কৃষি অফিসে যান স্থানীয় দুজন সাংবাদিক। তাঁরা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাজিয়া তরফদারকে বিষয়টি জানান।

সব শুনে তিনি ভুক্তভোগী কৃষকের সঙ্গেই ধমক দিয়ে কথা বলেন এবং কৃষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন। এ সময় সাংবাদিকেরা প্রতিবাদ করলে তাঁদের ওপরেও চড়াও হন এবং অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন কৃষি কর্মকর্তা।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ফজলুর রহমান। পরে কৃষকের অভিযোগের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক বক্তব্যে কৃষি কর্মকর্তা রাজিয়া তরফদার বলেন, ‘ঘটনাটি আমার সাথে নয়, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার সাথে ঘটেছে। কৃষকের অভিযোগ শুনেছি। যদি উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার কোনো গাফিলতি থাকে, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এ বিষয়ে অভিযুক্ত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সালাউদ্দিন সুজনের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।

তবে শিবালয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. বেলাল হোসেন দুঃখ প্রকাশ করে বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেন।

এ বিষয়ে মানিকগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক রবিআহ নূর আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কৃষি অফিসের দায়িত্বই হচ্ছে কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে কাজ করা। সেখানে কৃষকের অভিযোগের প্রতিকার না করে, অফিসের বাইরে বের করে দেওয়ার ঘটনা খুবই দুঃখজনক। বিষয়টি তদন্ত করে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের বোরো খেত দেখতে আগামীকাল বুধবার জেলা থেকে কর্মকর্তা পাঠানো হবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত