আলোর ঝরনায় বর্ষবরণ দুর্ঘটনায় বিষাদের ছোঁয়া

  • পটকা, আতশবাজি, ফানুসে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা।
  • ৩ শিশুসহ দগ্ধ পাঁচজন, দুই জায়গায় অগ্নিকাণ্ড।
  • ৯৯৯ নম্বরে ১ হাজার ১৮৫টি কল।
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
Thumbnail image
ফাইল ছবি

খ্রিষ্টীয় নববর্ষের আগের রাতটি সারা বিশ্বের ইংরেজিভাষীদের কাছে ‘নিউ ইয়ার্স ইভ’। বাংলাদেশে এটি পরিচিতি পেয়েছে ‘থার্টি ফার্স্ট নাইট’ হিসেবে। তা নাম যা-ই হোক, এ রাতে নানা আয়োজনে পুরোনো বছরকে বিদায় আর নতুন বছরকে স্বাগত জানানো অনেকের কাছেই এখন অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। সে অনুযায়ী রাজধানীবাসী মঙ্গলবার রাতে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনায় উদ্‌যাপন করেছে নববর্ষের আগমনের প্রথম প্রহর। তবে গত কয়েক বছরের মতো এবারও আনন্দের মধ্যে ছায়া ফেলেছে আগুনে পোড়ার মতো দুর্ঘটনা। পটকা ও বাজির শব্দ কষ্ট দিয়েছে শিশু ও অসুস্থদের।

রাজধানীজুড়ে বিভিন্ন স্থানে ও বাসার ছাদে ছাদে ছিল নতুন বর্ষবরণের নানা আয়োজন। রাত ১১টার কিছু পর থেকেই আতশবাজির আলোর বিচ্ছুরণে রঙিন হয়ে ওঠে ঢাকার আকাশ। পুলিশ ও পরিবেশ অধিদপ্তরের নিষেধাজ্ঞার পরও পটকা, আতশবাজির তেমন কমতি দেখা যায়নি। ফানুসের আগুনে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় ৩ শিশুসহ পাঁচজন দগ্ধ হয়েছে, পুড়েছে দোকানও। পটকা, আতশবাজি, ক্লাস্টার বোমা, রকেট বোমার শব্দে বয়স্ক ও শিশুরা কাটিয়েছে আতঙ্কে।

রাজধানীর সুপ্রশস্ত সড়ক মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ, হাতিরঝিল এলাকা, ধানমন্ডি, গুলশান, বনানী, ৩০০ ফুট নামে পরিচিত পূর্বাচলগামী এক্সপ্রেসওয়ে, উত্তরার দিয়াবাড়িসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় ছিল উদ্‌যাপনের নানা আয়োজন। রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকায় নববর্ষ উদ্‌যাপনে আসা শাহরিয়ার হাসান বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার কারণে অনেকটা লুকোচুরি করেই থার্টি ফার্স্ট নাইট ও ইংরেজি নববর্ষ উদ্‌যাপন করতে হয়েছে নগরবাসীকে। রাত ১২টার পরই সড়কের সব বাতি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মোড়ে মোড়ে তল্লাশি করা হয়।’

রাজধানীর পুরান ঢাকাসহ প্রায় প্রতিটি এলাকায় বাসার ছাদেও ছিল নানা আয়োজন।

ঢাকার বিভিন্ন স্থানে নানা আয়োজন থাকলেও বিধিনিষেধের বেড়াজালে এবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে বর্ষবরণে তারুণ্যের সেই উদ্দামতা দেখা যায়নি। সন্ধ্যা থেকেই ক্যাম্পাসের প্রবেশমুখগুলোয় তল্লাশিচৌকি বসিয়ে বহিরাগতদের প্রবেশ বন্ধ করা হয়।

থার্টি ফার্স্ট নাইট ও খ্রিষ্টীয় নববর্ষ উপলক্ষে ঢাকা মহানগর এলাকায় যেকোনো ধরনের আতশবাজি, পটকা ফোটানো ও ফানুস ওড়ানো নিষিদ্ধ করেছিল ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। অনুমতি ছাড়া উন্মুক্ত স্থানে কোনো ধরনের অনুষ্ঠান, সভা-সমাবেশ, গণজমায়েত, নাচ, গান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, র‍্যালির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল।

আনন্দের মধ্যে কিছু দুর্ঘটনা মন খারাপ ও ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় ৩ শিশুসহ পাঁচজন দগ্ধ হয়ে জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসা নেন। আতশবাজি ও ফানুস ওড়াতে গিয়ে তারা দগ্ধ হয়েছে বলে জানা গেছে। হাসপাতালটির জরুরি বিভাগের আবাসিক সার্জন ডা. শাওন বিন রহমান জানান, দগ্ধ হয়ে আসা পাঁচজনের মধ্যে এক শিশুকে ভর্তি করা হয়েছে।

রাজধানীর মিরপুর ১১ নম্বরে ডাস্টবিনের আবর্জনায় ও ধানমন্ডির ল্যাবএইড হাসপাতালের পেছনে গাড়ির যন্ত্রাংশের দোকানে দুটি অগ্নিকাণ্ডের সংবাদ পায় ফায়ার সার্ভিস। নিয়ন্ত্রণকক্ষের ডিউটি অফিসার রাফি আল-ফারুক জানান, ফানুস থেকে এ আগুনের সূত্রপাত হয়ে থাকতে পারে।

গভীর রাতে উচ্চ শব্দের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল করেছে অনেকেই। উচ্চ শব্দে গানবাজনা, হইহুল্লোড়, আতশবাজিসহ শব্দদূষণের প্রতিকার চেয়ে ৯৯৯ নম্বরে মোট ১ হাজার ১৮৫টি কল আসে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত