তেজগাঁওয়ে গাড়ি থামিয়ে গুলির ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুন ও ইমনের নাম

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৬: ৫৯
আপডেট : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৭: ৫৯

রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের বিজি প্রেস এলাকায় প্রাইভেট কার থামিয়ে এলোপাতাড়ি গুলির ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমন জড়িত থাকতে পারেন বলে জানিয়েছেন ডিবিপ্রধান হারুন অর রশিদ। আজ মঙ্গলবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান তিনি।

গতকাল সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এতে ভুবন চন্দ্র শীল (৫৫) নামে এক পথচারী গুলিবিদ্ধ হন। তাঁর মাথার পেছনে গুলি লেগেছে। আহত হন আরও দুজন। আহত বাকি দুজন হলেন মামুন (৫৪) ও আরিফুল হক ইমন (৩০)। এর মধ্যে আরিফুল পথচারী ছিলেন। আর মামুনকে লক্ষ্য করেই হামলা চালানো হয়েছিল।

ডিবি জানায়, এই মামুনের পুরো নাম তারিক সাঈদ মামুন। তিনি চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলার আসামি। ওই মামলায় প্রায় ২০ বছর কারাভোগের পর জামিনে বের হন তিনি। শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনও সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলার আসামি। ইমন বর্তমানে কারাগারে আছেন।

ডিবিপ্রধান বলেন, জেলে থাকা অবস্থায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে হুমকি দিয়েছিলেন ইমন। ইমনের লোকজন মামুনের ওপর হামলা করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনায় বিস্তারিত তদন্ত হচ্ছে। তদন্তে সবকিছুই আসবে।

তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলাম জানান, গতকাল রাতে মগবাজার এলাকার পিয়াসী বার থেকে বের হয়ে তারিক সাঈদ মামুন (৫৪), খোকন (৩৭) ও মিঠু (৫২) প্রাইভেট কারে মামুনের তল্লাবাগের বাসায় যাচ্ছিলেন। পথে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকার সিটি পেট্রলপাম্প ও বিজি প্রেসের মাঝামাঝি পৌঁছালে চারটি মোটরসাইকেলে করে সাত-আটজন তাঁদের থামিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি করেন। মামুনসহ অন্যরা তাৎক্ষণিক প্রাইভেট কার থেকে নেমে পড়লে মোটরসাইকেলে থাকা ব্যক্তিরা মামুনের পিঠে ও ঘাড়ে কুপিয়ে আহত করেন।

ওসি বলেন, মামুন ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছেন। বর্তমানে কোথায় আছেন তিনি জানেন না। মামুনের বাবার নাম এস এম ইকবাল। গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার শমসেরাবাদ। মামুন প্রায় ২০ বছর জেল খেটে কয়েক মাস আগে জামিনে বেরিয়েছেন। তাঁর দুই সহযোগীকে নিয়ে প্রাইভেট কারে যাওয়ার সময় অন্য সন্ত্রাসী গ্রুপ তাঁদের ওপর হামলা করে থাকতে পারে। ঘটনাস্থলের ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

আহত ভুবন চন্দ্র শীলের ভাবি জয়শ্রী রানী জানান, তাঁদের বাড়ি নোয়াখালীর সদর উপজেলায়। বর্তমানে মতিঝিলের আরামবাগে একটি মেসে থাকেন তিনি। তাঁর পরিবার গ্রামের বাড়িতে থাকেন। রাতে পুলিশের মাধ্যমে তাঁরা খবর পান, ভুবন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা ঢাকা মেডিকেলে গিয়ে ভুবনকে মুমূর্ষু অবস্থায় দেখতে পান। তখন তাঁকে ধানমন্ডির পপুলার হাসপাতালের আইসিইউতে নিয়ে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে তাঁকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে।

তেজগাঁও বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) এইচ এম আজিজুল হক বলেন, ‘এ ঘটনায় বেশ কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে। আমরা তদন্তের পাশাপাশি জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রেখেছি।’

আদালতের সংশ্লিষ্ট মামলার আইনজীবী সূত্রে জানা গেছে, তিন মাস আগে সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলা থেকে জামিনে বের হন মামুন। তাঁর বিরুদ্ধে আলোচিত আরও যেসব মামলা রয়েছে সেগুলো হলো হিমেল মার্ডার, রহিম মার্ডার, আদালত চত্বরে মোর্শেদ হত্যাকাণ্ড। এর মধ্যে মোর্শেদ খুনের মামলায় মামুনের ফাঁসির আদেশ হয়েছিল। পরে তিনি উচ্চ আদালত থেকে খালাস পান।

১৯৯৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর বনানীর ট্রাম্পস ক্লাবের সামনে গুলি করে হত্যা করা হয় সোহেল চৌধুরীকে। ঘটনার পর সোহেলের ভাই তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী বাদী হয়ে গুলশান থানায় হত্যা মামলা করেন। ১৯৯৯ সালের ৩০ জুলাই ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার আবুল কাশেম ব্যাপারী ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ নয়জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন। বিতর্কিত ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সঙ্গে বাদানুবাদই এ হত্যার নেপথ্য কারণ বলে মামলার অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত