বড় বোনের সঙ্গে প্রেমে ব্যর্থ হয়ে ছোট বোনকে অপহরণ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ১৯ আগস্ট ২০২২, ১৪: ৩৪
আপডেট : ১৯ আগস্ট ২০২২, ১৪: ৫৫

প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় তরুণীর ছোট বোনকে অপহরণ করেন সায়ের আলম পাভেল (৩৪) নামের এক যুবক। পরে তরুণীর পরিবারের কাছে দাবি করা হয় দেড় লাখ টাকা। এ ঘটনার চার দিন পর গতকাল বৃহস্পতিবার টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থেকে অপহরণের শিকার তরুণীকে উদ্ধারসহ অপহরণের সঙ্গে জড়িত তিনজনকে আটক করেছে তেজগাঁও বিভাগের পুলিশ। 

আজ শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর শ্যামলীতে তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার এইচ এম আজিমুল হক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য দেন। 

উপ-পুলিশ কমিশনার আজিমুল হক জানান, রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ডের রংমিস্ত্রি সায়ের আলম পাভেল (৩৪)। নিজেকে বিবিএ, এমবিএ ডিগ্রিধারী আবার কখনো ম্যাজিস্ট্রেটের ছেলে দাবি করতেন। এই পরিচয় ব্যবহার করে একই এলাকার খাদিজা আক্তার নামের এক তরুণীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করেন। কিন্তু খাদিজা পাভেলের প্রেমে সারা দেননি। দুই-তিন বছর চেষ্টা করে ব্যর্থ হওয়ায় খাদিজার ওপর ক্ষিপ্ত হন তিনি। এরপর পাভেল খাদিজার ছোট বোন আয়েশাকে প্রলোভন দেখান যে তাঁর ছোট ভাই লন্ডনের বড় ব্যবসায়ী। তাঁর সঙ্গে আয়েশার বিয়ে দেবেন এমন প্রলোভন দেখিয়ে গত ১৪ আগস্ট তেজগাঁও থেকে অপহরণ করে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর পরিবারের কাছে দেড় লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন পাভেল। ১৮ আগস্ট অপহরণের শিকার মেয়েটির বাবা তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্ত করতে গিয়ে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থেকে পাভেলের সহযোগী জাহাঙ্গীরের বাসা থেকে অপহরণের শিকার তরুণীকে উদ্ধার ও অপহরণের সঙ্গে জড়িত পাভেল, জাহাঙ্গীর ও তাঁর সহযোগী আলমগীরকে গ্রেপ্তার করেছে তেজগাঁও বিভাগের পুলিশ। 

এই পুলিশ কর্মকর্তা আরও জানান, অপহরণের শিকার তরুণীর বড় বোনের সঙ্গে প্রেমের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে তারই ছোট বোনকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে অপহরণ করে। এরপর মেয়েটিকে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে নিয়ে আটকে রেখে পরিবারের কাছে দেড় লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। পাভেল পেশায় ট্রাকের রংমিস্ত্রি হলেও নিজেকে শিক্ষিত ও ম্যাজিস্ট্রেটের ছেলে বলে পরিচয় দিতেন। অপহরণের শিকার তরুণীকে তাঁর বিদেশে ব্যবসায়ী ছোট ভাইয়ের সঙ্গে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে অপহরণ করেন। পাভেলের স্ত্রী ও এক সন্তান থাকার বিষয়টি গোপন রেখে আয়েশাকে তিনি নিয়ে যান। এরপর পাভেলের শুরু হয় আয়েশার বাবা-মায়ের প্রতি প্রতিশোধ নেওয়ার পালা। জাহাঙ্গীরের মাধ্যমে আয়েশার বাবার (যিনি পেশায় মুদি দোকানি) কাছে দেড় লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। টাকা না দিলে মেয়েকে পতিতালয়ে বিক্রি করে দেবেন বলে হুমকি দেন। এ কথা পুলিশকে জানালে মেয়েকে চিরতরে গুম করে দেবেন বলেও ভয় দেখান। তিন দিন ভয়ের মধ্যে থাকার পর গতকাল বৃহস্পতিবার তরুণীর বাবা তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পরে এদিন তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থেকে আয়েশা আক্তারকে (১৪) উদ্ধার করা হয়। 

সংবাদ সম্মেলনে তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার এইচ এম আজিমুল হকগ্রেপ্তার হওয়া যুবকদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে ডিসি আজিমুল হক জানান, আয়েশার বাবা-মায়ের প্রতি আক্রোশ থেকেই মুক্তিপণ আদায় করে আয়েশাকে কোনো পতিতালয়ে বিক্রি করে দেওয়াই উদ্দেশ্য ছিল। গ্রেপ্তার পাভেলের বিরুদ্ধে জিডি করার তথ্য পাওয়া গেছে। সেই সঙ্গে জাহাঙ্গীর আলমের (৩৫) বিরুদ্ধে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানায় দুটি অপহরণ মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। 

এক প্রশ্নের জবাবে তেজগাঁও বিভাগের ডিসি বলেন, ‘আমরা সন্দেহ করছি, গ্রেপ্তার তিন অপহরণকারী নারী পাচার চক্রের সদস্য। গ্রেপ্তার জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে একাধিক মামলার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে আরও খতিয়ে দেখতে তদন্ত করা হচ্ছে। মেয়েকে অপহরণের সময় যে ছেলের ছবি ব্যবহার করা হয়েছে, তার বিষয় খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে।’ 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত