রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে জমি নিয়ে বিরোধে জখমের পর মজনু শেখ (৪৫) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। একই ঘটনায় জখম তাঁর ভাই নজরুল শেখও ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের নাসির মাতুব্বর পাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। মজনু শেখ ও নজরুল ওই এলাকার আকবর শেখের ছেলে। 

মজনু শেখের পরিবার ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৭বছর আগে প্রতিবেশী লালন দেওয়ানের কাছ থেকে কৃষক আকবর আলী শেখ এক বিঘা কৃষিজমি কেনেন। এর পর ওই জমির দখল বুঝিয়ে দিতে একাধিকবার তাগিদ দেওয়া হলেও লালন দেওয়ান দেননি। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে আকবর দুই ছেলে মজনু ও নজরুলকে নিয়ে ওই জমিতে পেঁয়াজ রোপণ করতে ট্রাক্টর দিয়ে মাটি প্রস্তুত করছিলেন। এ সময় পাশের তারা দেওয়ানের জমির কিছু অংশ ভেঙে যায়। এতে তারা দেওয়ানের ছেলে লতিফ দেওয়ান সেখানে এসে আকবর ও তাঁর ছেলেদের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়ান।

একপর্যায়ে লতিফ ও পরিবারের অন্য সদস্যেরা মিলে ধারালো অস্ত্র দিয়ে নজরুল ও মজনুর ওপর হামলা চালান। ছেলেদের রক্ষা করতে গেলে আকবর আলীকেও মারধর করা হয়। এ সময় তাঁদের চিৎকারে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে গেলে হামলাকারীরা পালিয়ে যান। পরে গুরুতর অবস্থায় আহতদের উদ্ধার করে প্রথমে গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় রাতে মজনু ও নজরুলকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানেই রাতে মজনু মারা যান। নজরুল ইসলামকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে একটি বেসরকারি হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষণকেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে।  তবে অভিযুক্ত লতিফ দেওয়ানের পরিবার সবাই পলাতক। তাই এ বিষয়ে তাঁদের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। 

মজনুর বাবা আকবর আলী বলেন, ‘লালন দেওয়ানের কাছ থেকে জমি কেনার বিষয়টি লতিফ ও তাঁর বাবা তারা বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি। এ নিয়ে উজানচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে জমি মাপজোখের ব্যাপারে আবেদন করেছিলাম। গতকাল ওই জমি চাষ করতে গেলে ঝগড়া করে আমাদের ওপর হামলা চালান তাঁরা।’ 

উজানচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলজার হোসেন মৃধা বলেন, ‘বিরোধের কারণে জমিটি মাপার জন্য আকবর আলী শেখ আবেদন করেছিলেন। এ বিষয়ে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে দেওয়ানের পরিবারকে নোটিশ দেওয়া হলেও তাঁরা ইউনিয়ন পরিষদে আসেননি।' 

গোয়ালন্দ ঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) স্বপন কুমার মজুমদার বলেন, ‘রাত ১২টার দিকে মজনুর মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে আকবর আলী শেখ ১২ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন। তবে তদন্তের স্বার্থে আসামিদের নাম প্রকাশ করা হচ্ছে না। অভিযুক্ত পরিবারের সবাই পলাতক থাকায় এখনো কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। এ দিকে নিহত ব্যক্তির মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির পর ময়নাতদন্তের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।’