Ajker Patrika

দুই শিল্প গ্রুপেই তছরুপ ৩৫ হাজার কোটি টাকা

  • এমডি, পরিচালকসহ ৬ শতাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সম্পৃক্ততার প্রমাণ
  • অর্থ লুটপাটে দায়ীদের চাকরিচ্যুতির সুপারিশ নিরীক্ষা কমিটির
  • জরুরি বোর্ড সভায় অভিযুক্তদের চাকরি অবসানে এমডির অনীহা
জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা 
আপডেট : ০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১৬: ৫৭
দুই শিল্প গ্রুপেই তছরুপ ৩৫ হাজার কোটি টাকা

চট্টগ্রামভিত্তিক এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের বিতরণ করা মোট ঋণের পরিমাণ ৬০ হাজার ২৭২ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকার ঋণই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় চলে গেছে। ব্যাংকের এক অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, এসব ঋণের ৩৩ হাজার ৭৯১ কোটি টাকাই বের করে নেওয়া হয়েছে চট্টগ্রাম উত্তর ও দক্ষিণ আঞ্চলিক কার্যালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন ২৪টি শাখা থেকে। এস আলম গ্রুপের স্বার্থসংশ্লিষ্ট নামী-বেনামি প্রতিষ্ঠান এই টাকা তুলে নেয়। এ ছাড়া ঢাকার কয়েকটি শাখা থেকে সিকদার গ্রুপ এবং তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন গ্রাহক বের করে নিয়েছে ১ হাজার ২৫ কোটি টাকা।

ব্যাংকটির অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা প্রতিবেদন বলছে, এই বিপুল পরিমাণ অর্থ তছরুপের মদদদাতা ছিলেন ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ ওয়াসেক মো. আলী। এ কাজে তাঁর সহচর ছিলেন ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (পদত্যাগ করা) মো. মোস্তফা খায়ের, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) মো. মাসুদুর রহমান শাহ, চট্টগ্রাম উত্তর কার্যালয়ের তৎকালীন আঞ্চলিক প্রধান ও ইভিপি মোহাম্মদ হাফিজুর রহমান, চট্টগ্রাম দক্ষিণ কার্যালয়ের তৎকালীন আঞ্চলিক প্রধান ও ইভিপি মো. কামাল উদ্দীন, ব্যাংকের কোম্পানি সচিব অলি কামাল এফসিএ এবং এমডির পিএস মিজানুর রহমান। বিশেষভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত ৬ শতাধিক কর্মকর্তাও এতে জড়িত ছিলেন।

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ঋণ বিতরণে অনিয়ম তদন্তে ব্যাংকটির ইন্টারনাল কন্ট্রোল অ্যান্ড কমপ্লায়েন্স বিভাগের গঠন করা ছয়টি কমিটি গত ১০ সেপ্টেম্বর থেকে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালনা করে। পরিদর্শনে উঠে আসে, উত্তর ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের ২৪টি শাখা থেকে ৩৩ হাজার ৭৯১ কোটি টাকার নামে-বেনামে অর্থছাড় করা হয়। মূলত ৮৯টি বাই মুরাবাহ (হাইপো) এবং ৬৯টি বাই মুরাবাহ বিনিয়োগে নিয়ম না মেনে নানা চতুরতার আশ্রয় নেওয়া হয় এসব ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে।

গত ১০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ব্যাংকের ২৭৩তম পরিচালনা পরিষদে এসব অনিয়ম নিয়ে পর্যালোচনা হয়। সেখানে ১৫৮ জন গ্রাহকের বিনিয়োগ সীমার অতিরিক্ত বিনিয়োগ, নবায়ন, বর্ধিতকরণ, সময়বৃদ্ধির মতো অনিয়মের বিষয়টি উঠে আসে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিনিয়োগের ক্ষেত্রের গুরুতর অনিয়মগুলো হলো সীমার অতিরিক্ত বিনিয়োগ বিতরণ, সহায়ক জামানতের মূল্য বাড়িয়ে দেখানো, চতুরতার মাধ্যমে ভুল তথ্য দিয়ে বিনিয়োগ নবায়ন, বৃদ্ধিকরণ, বিনিয়োগ আদায়ে শিথিলতা, সমন্বয়ে কারচুপি এবং আইনি পদক্ষেপ এড়াতে খেলাপিকে নিয়মিত হিসাবে দেখানো। আর এই কাজে সরাসরি মদদ ছিল ব্যাংকটির এমডির।

ব্যাংকটির তদন্ত কমিটির একজন জ্যেষ্ঠ সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, চট্টগ্রামের অন্তত ২৪টি শাখায় ব্যাংকিং নিয়মাচার মানা হয়নি। ব্যাংকের এমডি সৈয়দ ওয়াসেক আলী বিশেষ তাগাদা দিয়ে গ্রাহকদের অর্থছাড় করিয়েছেন। এসব কাজ তত্ত্বাবধান করেছেন তাঁর পিএস মিজানুর রহমান। আর ব্যাংকিং নিয়মাচারবহির্ভূত আর্থিক অনিয়মের জন্য দায়ী অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (পদত্যাগ করা) মো. মোস্তফা খায়ের, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) মো. মাসুদুর রহমান, চট্টগ্রাম উত্তরের তৎকালীন আঞ্চলিক প্রধান ও ইভিপি মোহাম্মদ হাফিজুর রহমান, চট্টগ্রাম দক্ষিণের তৎকালীন আঞ্চলিক প্রধান ও ইভিপি মো. কামাল উদ্দীন। তাঁরা ব্যাংকটির নিয়মবহির্ভূত ৩৩ হাজার ৭৯১ টাকার ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগের দায় কোনোভাবে এড়াতে পারেন না। তাঁদেরকে সহযোগিতা করেছেন এস আলমের আমলে নিয়োগ পরীক্ষা ছাড়া বিশেষ তদবিরে নিয়োগপ্রাপ্ত ৬ শতাধিক কর্মকর্তা।

ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ইন্টারনাল কন্ট্রোল অ্যান্ড কমপ্লায়েন্স বিভাগ কর্তৃক গঠিত নিরীক্ষা দল গত ১২ ডিসেম্বর পরিচালনা পর্ষদের অডিট কমিটির কাছে সুপারিশসহ অনিয়মের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরে। সেখানে শাখা, অঞ্চল এবং প্রধান কার্যালয়ের সবার দায়িত্বে অবহেলার বিস্তারিত বর্ণনা এবং অপরাধ তুলে ধরে অভিযুক্তদের শাস্তির সুপারিশ করা হয়েছে। গত শনিবার অভিযুক্ত ৬ শতাধিক কর্মকর্তার চাকরিচ্যুতির প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। কিন্তু এমডি ওয়াসেক আলী তাতে স্বাক্ষর করতে অপারগতা জানান। পরে বোর্ড তাঁকে ওই দিনই তিন মাসের জন্য ছুটিতে পাঠায়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যাংকটির এমডি (এখন ছুটিতে) সৈয়দ ওয়াসেক আলী বলেন, বিনিয়োগের জন্য শাখা থেকে প্রস্তাব আসে। তা আঞ্চলিক পর্যায় থেকে প্রধান কার্যালয়ে যাচাই-বাছাই করা হয়। আর বড় বিনিয়োগের অর্থছাড়ে বোর্ডের অনুমোদন লাগে। সেখানে সবার দায়িত্ব থাকে।

অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা প্রতিবেদন বলছে, চট্টগ্রাম উত্তরের আঞ্চলিক কার্যালয়ের অধীন জুবিলী রোড শাখা গ্রাহক মেসার্স বাণিজ্য বিতান করপোরেশনসহ ২৫ গ্রাহকের কাছে নানা অনিয়মের মাধ্যমে বিপুল বিনিয়োগ করে ব্যাংক। একইভাবে আন্দরকিল্লা শাখার এহসান, হুদা এন্টারপ্রাইজসহ ১০ গ্রাহক, কদমতলী শাখার লিনিয়েজ বিজনেসসহ ১১ গ্রাহক, পাহাড়তলী শাখার হারমোনিয়াস বিজনেস হাউসসহ তিন গ্রাহক, ফতোয়াবাদ শাখার দুই গ্রাহক, খাতুনগঞ্জ শাখার ২০ গ্রাহক, হাটহাজারী শাখার তিন গ্রাহক, রাহাত্তারপুল শাখার চার গ্রাহক, হালিশহর শাখার এক গ্রাহক, বন্দরটিলা শাখার আট গ্রাহক, দোভাসী শাখার চার গ্রাহক, কুমিরা শাখার চার গ্রাহক, সদরঘাট শাখার সাত গ্রাহক এবং চকবাজার শাখার চার গ্রাহককে ব্যাপক অনিয়মের মাধ্যমে ঋণ বিতরণ করা হয়।

একই প্রতিবেদনে বলা হয়, চট্টগ্রাম দক্ষিণ আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রবর্তক মোড় শাখার আট গ্রাহক, বোয়ালখালী শাখার তিন গ্রাহক, মোহরা শাখার দুই গ্রাহক, আগ্রাবাদ শাখার পাঁচ গ্রাহক, চন্দনাইশ শাখার তিন গ্রাহক, পটিয়া শাখার দুই গ্রাহক, পটিয়া মহিলা শাখার তিন গ্রাহক, পাঁচলাইশ শাখার পাঁচ গ্রাহক, বহদ্দারহাট শাখার ১৫ গ্রাহককে অনিয়মের মাধ্যমে ঋণ দেওয়া হয়েছে, যার দায় এড়াতে পারেন না ইভিপি মো. কামাল উদ্দিন।

এসব অনিয়মের বিষয়ে জানতে ব্যাংকটির কোম্পানি সচিব অলি কামালের (এফসিএ) সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিনিয়োগ নিয়ম মেনে হয়েছে। তবে কিছু ত্রুটি থাকতে পারে। এতে আমার সংশ্লিষ্টতা নেই।’

যোগাযোগ করা হলে ব্যাংকটির উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) মো. মাসুদুর রহমান শাহ বলেন, নিয়ম ছাড়া ব্যাংকে বিনিয়োগ করা যায় না। বড় বিনিয়োগ তো পর্ষদ অনুমোদন দেয়।

এ ছাড়া ছুটিতে থাকা এমডির পিএস তাঁর অনিয়মে যুক্ততার বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, ‘এ বিষয়ে এমডির কাছে জানতে চান।’ এই বলে ফোন কেটে দেন তিনি।

শুধু চট্টগ্রাম নয়, ব্যাংকটির ঢাকার বিভিন্ন শাখাতেও ঋণ বিতরণে বড় অনিয়ম হয়েছে। নথিপত্র অনুযায়ী, ব্যাংকটির ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের দিলকুশা, বনানী, ধানমন্ডি, সেনানিবাস ও কারওয়ান বাজার শাখা থেকে বড় অঙ্কের ঋণ নেয় সিকদার গ্রুপ এবং তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান। গত ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত এসব প্রতিষ্ঠানে ব্যাংকটির মোট ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ ছিল ১ হাজার ২৫ কোটি টাকা, যার দায়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২৫৪ কোটি টাকা।

ব্যাংকটির চলতি দায়িত্বে (সিসি) এমডি আবু রেজা মো. ইয়াহিয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, ব্যাংকের কিছু সন্দেহভাজন শাখায় সম্পদ ঝুঁকি নিরূপণ করেছে তদন্ত দল। এটা মূলত বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় করা হয়েছে। সেখানে বিশাল অঙ্কের বিনিয়োগ ঝুঁকি হিসেবে দেখানো হয়েছে। আর বিভিন্ন শাখা কর্মকর্তা, আঞ্চলিক কর্মকর্তা, প্রধান কার্যালয়ের এমডিসহ অনেকের সম্পৃক্ততা উঠে এসেছে। এসব বিষয়ে পরে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ব্যাংকে ভূরি ভূরি অনিয়ম হয়েছে। চট্টগ্রামে বেশি হয়েছে; ঢাকাতেও হয়েছে। তখনকার এমডিসহ কোনো কর্মকর্তা অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেননি। এতে ব্যাংকের অর্থ তছরুপ হয়েছে। ব্যাংকের এমন বিনিয়োগের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করা হয়েছে। তাঁদের দায় এড়ানোর সুযোগ নেই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বাণিজ্য থমকে আছে রেললাইনের অভাবে

  • ২০১৩ সালে সম্ভাব্যতা যাচাই করে মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দেয় অস্ট্রেলিয়ার কোম্পানি
  • সম্ভাব্যতা ম্যাপে ৯৮ কিলোমিটার রেললাইনে ৮টি স্টেশনের প্রস্তাব রাখা হয়
আবুল কাসেম, সাতক্ষীরা 
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

সাতক্ষীরার বহুল প্রতীক্ষিত রেললাইনের নির্মাণকাজ এগোচ্ছে কচ্ছপগতিতে। এক যুগ আগে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের পর গেল মাসে যশোরের নাভারণ থেকে সাতক্ষীরা পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণের ডিপিপি প্রণয়ন করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

সাতক্ষীরাবাসী বলছে, শত বছরের প্রতীক্ষিত রেললাইন নির্মিত হলে একদিকে যেমন সুন্দরবনকেন্দ্রিক পর্যটন বিকশিত হবে, অন্যদিকে পণ্য পরিবহনে খরচ কমায় ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারিত হবে।

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন ও অন্যান্য সূত্রে জানা যায়, ১৯১৪ সালে ব্রিটিশ ভাইসরয় সাতক্ষীরাকে রেললাইনে সংযুক্ত করে সুন্দরবন পর্যন্ত সম্প্রসারণের নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই নির্দেশনা বাস্তবায়িত হয়নি। ১৯৫৮ সালে সাতক্ষীরা-ভেটখালি সড়ক নির্মাণের সময় জমি অধিগ্রহণ করেও নির্মিত হয়নি রেললাইন।

দীর্ঘকাল পরে ২০১০ সালে সাতক্ষীরার শ্যামনগরে এক জনসভায় তৎকালীন সরকারপ্রধান নাভারণ-সাতক্ষীরা-মুন্সিগঞ্জ রেললাইন নির্মাণের ঘোষণা দেন। ২০১৩ সালে সম্ভাব্যতা যাচাই করে মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দেয় অস্ট্রেলিয়ার ক্যানারেইল কোম্পানি লিমিটেড। সম্ভাব্যতা যাচাই করতে খরচ হয় ১১ কোটি টাকা। সম্ভাব্যতা ম্যাপে ৯৮ কিলোমিটার রেললাইনে ৮টি স্টেশনের প্রস্তাব রাখা হয়।

এরপর আবারও থেমে যায় রেললাইন নির্মাণের উদোগ। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর রেললাইন স্থাপনের দাবিতে সাতক্ষীরায় বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের ব্যানারে আন্দোলন শুরু হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে নাভারণ-সাতক্ষীরা রেললাইন স্থাপনের উদ্যোগের অংশ হিসেবে যশোর রেলওয়ের পক্ষ থেকে সরেজমিন পরিদর্শন করা হয়। এরপর গত মাসে যশোরের নাভারণ থেকে সাতক্ষীরা পর্যন্ত ৫টি স্টেশনযুক্ত ৪২ কিলোমিটার রেললাইনের ডিপিপি প্রণয়ন করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে জেলা প্রশাসনের একটি সূত্র।

সাতক্ষীরার বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের শেষ জেলা সাতক্ষীরায় ২২ লাখের বেশি মানুষের বাস। এ জেলা থেকে দেশের অন্যান্য স্থানে যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম সড়কপথ। সুন্দরবন, চিংড়ি, আম ও ভোমরা বন্দরের কারণে অর্থনৈতিকভাবে ক্রমেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠায় সাতক্ষীরায় রেললাইন নির্মাণ এখন সময়ের দাবি।

জেলা চিংড়ি চাষি সমিতির সাধারণ সম্পাদক ডা. আবুল কালাম বাবলা বলেন, নৌপথ ও আকাশপথে যাতায়াতের কোনো সুযোগ নেই জেলাবাসীর। রেললাইন নির্মিত হলে মৎস্য খাতের নতুন দিকের সূচনা হবে।

সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলী নূর খান বাবুল বলেন, ‘সাতক্ষীরা থেকে আমরা যে পরিমাণ রাজস্ব সরকারকে দিই, সে ধরনের উন্নয়ন চোখে পড়ে না।’

ভোমরা সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আবু মুসা বলেন, কলকাতা থেকে ভোমরা স্থলবন্দরের দূরত্ব মাত্র ৬০ কিলোমিটার। তাই রেললাইন হলে ভোমরায় ব্যবসা-বাণিজ্যের চিত্র পাল্টে যাবে।

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক আফরোজা আখতার বলেন, ‘জিআই পণ্য আম, চিংড়ি এবং ভোমরা স্থলবন্দরের পণ্য পরিবহনের জন্য সাতক্ষীরায় রেললাইন নির্মাণ জরুরি। আমি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে রেললাইন নির্মাণের জন্য যত প্রচেষ্টা রয়েছে, সেটা করব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া:সেতুর খুঁটি নির্মাণেই মেয়াদ শেষ

  • আমুয়া ইউনিয়নে ধোপাবাড়ির খালের ওপর সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০২২ সালে মে মাসে
  • প্রথম দফায় ৫ কোটি ৪৩ লাখ টাকা বরাদ্দ এবং ওই বছরে ২০২৩ সালের অক্টোবরে কাজ শেষ করার কথা ছিল
  • নকশা পরিবর্তনের কারণে বরাদ্দ বাড়িয়ে ৬ কোটি ১৩ লাখ টাকা করা হয় এবং মেয়াদ শেষ হয় গত জুনে
  • ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির মালিকেরা জেলহাজতে এবং তাঁদের সব ব্যাংক হিসাব স্থগিত রয়েছে
আরিফ রহমান, ঝালকাঠি
ঝালকাঠির কাঁঠালিয়ার আমুয়া ইউনিয়নে ধোপাবাড়ির খালের ওপর নির্মাণাধীন সেতু। খুঁটি নির্মাণের পর কাজ বন্ধ রয়েছে। ছবিটি সম্প্রতি তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঝালকাঠির কাঁঠালিয়ার আমুয়া ইউনিয়নে ধোপাবাড়ির খালের ওপর নির্মাণাধীন সেতু। খুঁটি নির্মাণের পর কাজ বন্ধ রয়েছে। ছবিটি সম্প্রতি তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া উপজেলার আমুয়া ইউনিয়নে হাসপাতালসংলগ্ন ধোপাবাড়ির খালের ওপর সেতুর নির্মাণ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও কাজ শেষ হয়নি। দুই পাড়ে খুঁটি (পিলার) নির্মাণ করে বন্ধ রয়েছে কাজ। এতে পাশের ঝুঁকিপূর্ণ কাঠের সেতু ব্যবহার করতে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ নড়বড়ে ও ভাঙাচোরা ওই সেতু দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। এতে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছে শিক্ষার্থী, নারী, শিশু ও হাসপাতালে আসা রোগীরা।

উপজেলা প্রকৌশল কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সুপ্তি কনস্ট্রাকশন এবং কবির ট্রেডার্স যৌথভাবে ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রকল্পটির কার্যাদেশ পায়। সেতুটি নির্মাণে ৫ কোটি ৪৩ লাখ ১৯ হাজার ৬৮০ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। নির্মাণকাজ ২০২২ সালের মে মাসে শুরু হয়। ২০২৩ সালের অক্টোবরের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সেতুর নকশা পরিবর্তনের কারণে প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়ে ৬ কোটি ১৩ লাখ ২৫ হাজার ৪৪৭ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এ জন্য মেয়াদ নির্ধারণ করা হয় চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত। কিন্তু প্রায় ছয় মাস আগে মেয়াদ শেষ হলেও নির্মাণকাজ খুঁটি পর্যন্তই আটকে আছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির মালিকেরা জেলহাজতে থাকা এবং তাঁদের সব ব্যাংক হিসাব স্থগিত রয়েছে। এ কারণে নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছে। ঠিকাদারদের পক্ষ থেকে বারবার প্রতিশ্রুতি দিলেও কার্যক্রম শুরু করতে পারছে না।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে প্রকল্প প্রকৌশলী মিলন ঘরামি ও ব্যবস্থাপক মো. বাহাদুর হাওলাদার জানিয়েছেন, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে কাজ পুনরায় শুরু করা হবে এবং তিন থেকে চার মাসের মধ্যে শেষ করা হবে।

প্রকল্পের অগ্রিম কোনো বিল তোলা হয়েছে কি না জানতে চাইলে উপজেলা উপসহকারী প্রকৌশলী মো. জিয়াউর রহমান বলেন, এখন পর্যন্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অগ্রিম কোনো বিল তোলেনি। তবে কাজের বেশ কয়েকটি মেমো তাঁদের কাছে আছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, ধোপাবাড়ির খাল অনেক প্রশস্ত। এ জন্য স্থানীয়দের কাছে এটি নদী হিসেবে পরিচিত। খালটি বিষখালী নদীর সঙ্গে যুক্ত। খালের ওপর দীর্ঘদিন ধরে একটি কাঠের সেতু রয়েছে। এটি দিয়ে যানবাহন চলাচল করতে পারে না। নড়বড়ে হওয়ায় পথচারীরাও অনেক ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন। সেতুটি শুধু আমুয়া ইউনিয়নের নয়, বরং পুরো কাঁঠালিয়া উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগমাধ্যম। সেতুটিকে কেন্দ্র করে রয়েছে ৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, উপজেলার একমাত্র আমুয়া হাসপাতাল, আমুয়া বন্দর ও তিনটি বড় বাজার। প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ এই সেতু ব্যবহার করছে, যার মধ্যে শিক্ষার্থী, রোগী, ব্যবসায়ী, নারী ও শিশু রয়েছে। বর্ষা মৌসুমে নদীর পানি বাড়লে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরে সেতুর কাজ বন্ধ থাকায় স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। স্কুলশিক্ষার্থীরা আতঙ্ক নিয়ে কাঠের সেতু পার হয়। রোগী নিয়ে হাসপাতালে যেতে গিয়ে পরিবারগুলোর দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।

আমুয়ার জনপ্রতিনিধি নকিরুল ইসলাম বলেন, ‘সেতুটি আমাদের এলাকার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বছরের পর বছর কাজ বন্ধ হয়ে আছে।’

শেখ ফজিলাতুন্নেছা ভোকেশনাল ইনস্টিটিউটের প্রধান শিক্ষক মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন ভাঙাচোরা কাঠের সেতু দিয়ে স্কুলে আসা-যাওয়া করে। যেকোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে দ্রুত কাজ শেষ করা প্রয়োজন।’

কাঁঠালিয়া উপজেলা প্রকৌশলী মো. গোলাম মোস্তফা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য নিয়মিত তাগিদ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি না থাকায় কাজ বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে।’

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের ঝালকাঠির জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শহীদুল ইসলাম সরকারের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি সাড়া দেননি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ময়মনসিংহের নান্দাইল: নদীর জায়গা দখল করে আ.লীগ নেতার মার্কেট

  • নরসুন্দা নদীর পাড় দখলের অভিযোগ
  • কর্তৃপক্ষ বলছে, সওজের জমি। নিজস্ব সম্পত্তি দাবি বাচ্চুর
নান্দাইল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
নরসুন্দা নদীর পাড় দখল করে নির্মাণ করা হচ্ছে দ্বিতল ভবন। ময়মনসিংহের নান্দাইলের তারের ঘাট বাজার এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
নরসুন্দা নদীর পাড় দখল করে নির্মাণ করা হচ্ছে দ্বিতল ভবন। ময়মনসিংহের নান্দাইলের তারের ঘাট বাজার এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

ময়মনসিংহের নান্দাইলে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নেতা হাবিবুর রহমান বাচ্চুর বিরুদ্ধে নরসুন্দা নদীর পাড় দখল করে পাকা ভবন নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। মুশুল্লি ইউনিয়নের তারের ঘাট বাজারসংলগ্ন নদীর জায়গা দখল করে দোতলা মার্কেট নির্মাণ করছেন তিনি।

হাবিবুর রহমান বাচ্চু মুশুল্লি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। তিনি তারের ঘাট বাজার পাথর ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক।

সরেজমিনে দেখা যায়, তারের ঘাট বাজারে নরসুন্দা নদীর ওপর সড়ক ও জনপথ বিভাগের একটি সেতু রয়েছে। সেতুর পশ্চিম পাশে নদীর উপরে নির্মাণ হচ্ছে পাকা ভবন। সাংবাদিকেরা ছবি তুলতে গেলে হাবিবুর রহমান বাচ্চুর ছেলে মো. ফয়সাল ছবি তোলার কারণ জানতে যান। এ সময় তিনি দাবি করেন, নদীর ওপর কোনো মার্কেট নির্মাণ করা হচ্ছে না। নিজেদের জায়গায় নির্মাণ করা হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়রা জানান, আওয়ামী লীগ আমলে সাবেক এমপি তুহিনের প্রভাব খাটিয়ে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করেছেন হাবিবুর রহমান বাচ্চু। অবৈধভাবে পাথর ব্যবসার পাশাপাশি দখল করেছেন সরকারি জায়গা। ইউপি নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে চেয়ারম্যান হতে চেয়েছিলেন। তবে সরকার পতনের পর ভোল বদলে ফেলেন।

নদীর জায়গায় ভবন নির্মাণের বিষয়ে হাবিবুর রহমান বাচ্চু বলেন, ‘এই জমি আমার নিজস্ব সম্পত্তি। নদীর পাড়ের ভেতরে আমার আরও প্রায় ৫০ ফুট জমি আছে।’ তবে মুশুল্লি ইউনিয়নের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) মো. মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘নির্মাণাধীন স্থাপনাটি কোনো ব্যক্তিগত জমিতে নয়। এটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধিগ্রহণ করা জমির মধ্যে পড়ে। কর্তৃপক্ষের নির্দেশে নির্মাণকাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

কিশোরগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী বিজয় চন্দ্র বসাক বলেন, ‘সড়ক ও সেতুর দুই পাশে সওজের নিজস্ব জমি রয়েছে। সওজের জায়গায় স্থাপনা নির্মাণ করা হলে তদন্তের মাধ্যমে অপসারণ করা হবে।’

নান্দাইলের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাতেমা জান্নাত বলেন, অভিযোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আপাতত নির্মাণকাজ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কোন্দল, তবু আশাবাদী বিএনপি

  • চার আসনের দুটিতে বিভক্ত বিএনপি
  • ভোটারদের কাছে ছুটছেন বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর সম্ভাব্য প্রার্থীরা
  • তৎপর এনসিপি, গণঅধিকার পরিষদ, খেলাফত মজলিস, ইসলামী আন্দোলন
  • এবারও স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ
হাসান মাতুব্বর, ফরিদপুর
কোন্দল, তবু আশাবাদী বিএনপি

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফরিদপুরের চারটি আসনের সব কটিতে প্রাথমিক মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। নেতা-কর্মীদের নিয়ে এলাকায় ব্যাপক প্রচার চালাচ্ছেন উভয় দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। তৎপর এনসিপি, গণঅধিকার পরিষদ, খেলাফত মজলিস, ইসলামী আন্দোলন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মতো দলগুলোও। আগামী নির্বাচনে জেলায় অন্তত ৩০ জন প্রার্থী হবেন। তাঁদের মধ্যে হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদসহ অন্তত ছয়জন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন।

চার আসনের দুটিতেই বিএনপির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল। তবে চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে ওঠার ব্যাপারে আশাবাদী জেলা বিএনপির সদস্যসচিব এ কে এম কিবরিয়া স্বপন। তিনি বলেন, ‘অভ্যন্তরীণ কোন্দলে ভোটে প্রভাব ফেলবে না। বিভেদ ভুলে

সবাই ধানের শীষের পক্ষেই কাজ করবে।’ জামায়াতে ইসলামীর জেলা আমির মুহাম্মাদ বদরুদ্দীন বলেন, ‘চার আসনেই আমাদের ভালো অবস্থান রয়েছে। এখন ইসলামি সমমনা ৮ দলের বিষয়ে কেন্দ্র যে সিদ্ধান্ত দেবে, সেটি মেনে নেওয়া হবে।’

ফরিদপুর-১

আলফাডাঙ্গা, বোয়ালমারী ও মধুখালী উপজেলা নিয়ে ফরিদপুর-১ আসন। তিন উপজেলার মধ্যে বোয়ালমারী ও মধুখালীতে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের ভোট প্রায় সমান। আলফাডাঙ্গায় প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ আওয়ামী লীগ সমর্থক। ৫ আগস্টের পর বিএনপির প্রভাব বাড়লেও দলটির অভ্যন্তরীণ কোন্দল চরমে। উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি শামসুদ্দিন মিয়া ঝুনুর সঙ্গে কৃষক দলের সহসভাপতি খন্দকার নাসিরুল ইসলামের বিবাদে নেতা-কর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়েন। গত ৭ নভেম্বর উপজেলা সদরে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ রণক্ষেত্রে রূপ নেয়। এর মধ্যে ৪ ডিসেম্বর সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে খন্দকার নাসিরুল ইসলামের নাম ঘোষণা করে বিএনপি। এ ঘোষণায় ক্ষুব্ধ শামসুদ্দিন মিয়া ঝুনুর সমর্থকেরা।

খন্দকার নাসিরুল ইসলাম বলেন, ‘দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে বহুদিন পরে গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগের সুযোগ এসেছে। এটি কাজে লাগাতে দলে কোনো ভেদাভেদ না রেখে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার চেষ্টা করছি।’ শামসুদ্দীন মিয়া বলেন, ‘খন্দকার নাসিরকে মনোনয়ন দিয়ে জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ধ্বংস করা হয়েছে। তাঁর কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই, এলাকায় তাঁর কোনো ভোট নেই। যারা দলকে আজকের পর্যায়ে এনেছে, তাদের মূল্যায়ন করা হয়নি। সমর্থকদের নিয়ে বসে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে।’

জামায়াতে ইসলামীর সম্ভাব্য প্রার্থী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মো. ইলিয়াস মোল্যা। নেতা-কর্মীদের নিয়ে এলাকায় ব্যাপক গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। দলের জেলা আমির মুহাম্মদ বদরুদ্দীন বলেন, একজন হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে এলাকায় ইলিয়াস মোল্যার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। ভোটারদের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া মিলছে।

জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম থেকে মুফতি মো. জাকির হুসাইন কাসেমী, খেলাফত মজলিস থেকে মুফতি শারাফাত হুসাইন ও ইসলামী আন্দোলন থেকে ওয়ালিউর রহমান প্রার্থী হতে পারেন। এনসিপির মনোনয়ন পেতে পারেন হাসিবুর রহমান অপু। সাবেক ছাত্রদল নেতা আবুল বাসার খান ও সাংবাদিক আরিফুর রহমান দোলন স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

ফরিদপুর-২

সালথা ও নগরকান্দা উপজেলা নিয়ে ফরিদপুর-২ আসন। ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে এখান থেকে নির্বাচিত হন বিএনপির সাবেক মহাসচিব কে এম ওবায়দুর রহমান। এবার বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়ন পেয়েছেন তাঁর মেয়ে শামা ওবায়েদ। নির্বাচনী প্রচারে বাবার উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী নগরকান্দা উপজেলা আমির সোহরাব হোসেন। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের প্রার্থী হতে পারেন শাহ আকরাম আলী। ফরিদপুরে তিনি সর্বজনশ্রদ্ধেয় মুরব্বি হিসেবে পরিচিত। ইসলামি বক্তা হিসেবেও তাঁর জনপ্রিয়তা রয়েছে। শাহ আকরাম আলী বলেন, ‘আমাদের এলাকায় আলেম-ওলামাদের সমর্থক বেশি। সেই হিসেবে চেষ্টা করছি ইসলামি দলগুলোর একক প্রার্থী হতে। সভা-সমাবেশে যেভাবে সাড়া পাচ্ছি, তাতে আমি বিজয়ী হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী।’

ফরিদপুর-৩

ফরিদপুর সদর উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন এবং একটি পৌরসভা নিয়ে ফরিদপুর-৩ আসন। ১৯৯১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত আসনটি ছিল বিএনপির সাবেক মন্ত্রী চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফের দখলে। এবার এখানে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী তাঁর মেয়ে চৌধুরী নায়াব ইউসুফ। তবে তাঁকে মেনে নিতে রাজি নন আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মোদাররেছ আলী ইছার অনুসারীরা। চৌধুরী নায়াব ইউসুফের প্রাথমিক মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে সমাবেশও করেছেন তাঁরা। চৌধুরী নায়াব ইউসুফ বলেন, ‘আমার বাবা এখান থেকে বারবার নির্বাচিত হয়েছেন। এটা প্রমাণিত যে ফরিদপুর সদরের মানুষ বিএনপিকে ভালোবাসে। মানুষ গত ১৫ বছর ভোট দিতে পারেনি। তারা আবার বিএনপির শাসন ফেরাতে চায়।’

জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী আবদুত তাওয়াব নেতা-কর্মীদের নিয়ে এলাকায় ব্যাপক প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রচারে দখল বাণিজ্য ও চাঁদাবাজিমুক্ত একটি বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন তিনি। স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ। স্বতন্ত্র হলেও তাঁকে শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। ২০২৪ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তিনি প্রায় ৬০ হাজার ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করেন। তবে গত ১৯ অক্টোবর তাঁর গণসংযোগে বিএনপি সমর্থকদের হামলার পর তাঁকে আর মাঠে দেখা যায়নি।

খেলাফত মজলিস থেকে আমজাদ হোসাইন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম থেকে কামরুজ্জামান ও ইসলামী আন্দোলন থেকে কে এম সারোয়ার মনোনয়ন পেতে পারেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন মোর্শেদুল ইসলাম আসিফ নামের এক তরুণ। হাতেনাতে চাঁদাবাজ ধরে পুলিশে সোপর্দ করে এলাকায় আলোচনার জন্ম দিয়েছেন তিনি। ফরিদপুর পৌরসভায় নিজ উদ্যোগে মশকনিধন কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।

ফরিদপুর-৪

ভাঙ্গা, চরভদ্রাসন ও সদরপুর উপজেলা নিয়ে ফরিদপুর-৪ আসন। এখানে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবলু। তাঁর পৈতৃক বাড়ি ফরিদপুর-২ আসনে হলেও দল তাঁকে এখানে প্রাথমিক মনোনয়ন দিয়েছে। তাঁর বিভিন্ন সমাবেশ ও উঠান বৈঠকে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের পদধারী নেতাদের দেখা গেছে। জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী ভাঙ্গা উপজেলা আমির সরোয়ার হোসেন। সভা-সমাবেশের মাধ্যমে ভোটারদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছেন তিনি। খেলাফত মজলিসের প্রার্থী হতে পারেন মো. মিজানুর রহমান মোল্যা। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রচার চালাচ্ছেন স্থপতি মুজাহিদ বেগ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত