শিশু সহযোগীকে বাঁচালেও রিজার্ভ ট্যাংকে প্রাণ গেল স্যানিটারি মিস্ত্রির

উত্তরা (ঢাকা) প্রতিনিধি
আপডেট : ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২০: ৫৫
Thumbnail image

রাজধানীর দক্ষিণখানে পানির রিজার্ভ ট্যাংকে আটকে পড়া শিশু সহযোগী দুলাল মিয়াকে (১৫) বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন স্যানিটারি মিস্ত্রি কবীর হোসেন চিশতী (৩৫)। 

আজ শুক্রবার দুপুরে দক্ষিণখানের গণকবরস্থান রোডের কবরস্থানের পশ্চিম পাশের ২৬০ নম্বর প্রফেসরের বাড়িতে এ দুর্ঘটনা ঘটে। পরে ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকর্মীরা মরদেহ উদ্ধার করে। 

নিহত মিস্ত্রি হলেন—পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার লক্ষ্মীপুর গ্রামের মো. হাফেজ উদ্দিনের ছেলে। তিন ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন তিনি। তাঁর ১৬ বছর বয়সী এক ছেলে ও পাঁচ বছর বয়সী এক মেয়ে রয়েছে। বর্তমানে দক্ষিণখান চালাবনের ভাই ভাই মার্কেটের মুন্সিবাড়িতে ভাড়া থাকতেন। 

নিহত স্যানিটারি মিস্ত্রি কবীর হোসেন চিশতীর সহযোগী যুবক দুলাল মিয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সকাল ৯টার দিকে আমরা স্যানিটারি কাজে গিয়েছিলাম। ওই বাড়ির রিজার্ভ ট্যাংকের পাইপ খোলার জন্য নামি। পরে যখন সেলাই রেঞ্জ হাতে নিয়েছিলাম, তখন পড়ে গিয়ে জ্ঞান হারিয়ে নিচে পড়ে যাই। তারপর আর কিছুই বলতে পারি না।’ 

নিহতের কবীর হোসেন চিশতীর ভাগনে মঈনুল হক লিয়ন আজকের পত্রিকাকে বলেন, দুপুর ১টা ৭ মিনিটে একজন ফোন করে বলে, কবীরের কি জানি হইছে, দেইখা আস। এ কথা শুনে সেখানে গিয়ে দেখি রিজার্ভ ট্যাংকের ভেতরে কবীরের লাশ পড়ে আছে। পরে ফায়ার সার্ভিস এসে লাশ উদ্ধার করে। 

মঈনুল হক বলেন, ‘ট্যাংকে আগে পিচ্চি নামছিল। পরে পিচ্চি নেমে আটকা পড়ে গিয়েছিল। পরে কবীর মামা নেমে পিচ্চিকে তুলেছিল। কিন্তু পিচ্চিকে ওঠানোর পর সে আর উঠতে পারেনি। সেখানেই পড়ে সে মারা গেছে।’ 

এ বিষয়ে উত্তরা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সিনিয়র স্টেশন মো. আলম হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, দুপুর ১টা ২৪ মিনিটে দক্ষিণখানের গণকবরস্থান এলাকার একটি বাড়ির রিজার্ভ ট্যাংকে একজন আটকা পড়ার খবর পাই। পরে ফায়ার সার্ভিসের ইমারজেন্সি টেন্ডার গিয়ে কবীর হোসেন নামের একজনের মরদেহ উদ্ধার করে। 

তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে জানা যায়, রিজার্ভ ট্যাংকের চেক বাল্ব মেরামতের উদ্দেশে নিচে নেমে আটকা পড়ে নিহত হন কবীর। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, রিজার্ভ ট্যাংকে জমে থাকা কার্বন মনক্সাইড গ্যাসের কারণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। 

অপরদিকে দক্ষিণখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সিদ্দিকুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে স্যানিটারি কন্ট্রাক্টর মিজানের সঙ্গে কথা বলেন ওই চারতলা বাড়ির মালিক শহিদুল হক। তখন শহিদুল হক মিজানকে বলেন, তাঁর বাড়ির ট্যাংকে পানি কম ওঠে। পরে আজ শুক্রবার সেই কাজ করার জন্য বাড়িটিতে যান কন্ট্রাক্টর মিজান এবং মিস্ত্রি কবীর ও সহযোগী দুলাল। চার তলা বাড়ির ছাদের ওপরে থাকা পানির ট্যাংকে ও মোটর চেক করে সবকিছু ঠিকঠাক পান তাঁরা। তখন পানির রিজার্ভ ট্যাংকের চেক বাল্ব পরীক্ষার জন্য দুলাল প্রথমে নেমে অসুস্থতা বোধ করে। তাঁকে ওঠাতে নিচে নামেন কবীর। তখন তিনিও অসুস্থতা বোধ করলে তাঁকে তোলার চেষ্টা করেন মিজান। কিন্তু তুলতে পারেননি। পরে নিচে পড়ে গিয়ে মারা যান কবীর। খবর পেয়ে পুলিশের সহযোগিতায় মরদেহ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস। 

ওসি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যু মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত