স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হলে সবার আগেই শিক্ষাকে স্মার্ট করতে হবে: শিক্ষামন্ত্রী

গাজীপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৭ ডিসেম্বর ২০২২, ২১: ১৩

ডিজিটাল বাংলাদেশকে স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে হলে, সবার আগে শিক্ষাকে স্মার্ট করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। আজ মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গাজীপুর মূল ক্যাম্পাসে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ মন্তব্য করেন তিনি।

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ২০০৮ সালে বলেছিলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কথা। ২০২২ সালে এসে তিনি বলেছেন, ডিজিটাল বাংলাদেশকে একটি উদ্ভাবনীর দেশ হিসেবে, স্মার্ট বাংলাদেশ করে গড়ে তুলবেন। আমাদের প্রাত্যহিক আলাপ আলোচনায় স্মার্ট শব্দটির বহু ব্যবহৃত অর্থ রয়েছে। কিন্তু তিনি যে অর্থে ব্যবহার করেছেন সেটি হলো—আমরা সকলে সবদিক থেকে চৌকস হয়ে গড়ে উঠব। আমাদের শিক্ষা হবে স্মার্ট, আমাদের অর্থনীতি হবে স্মার্ট, আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য হবে স্মার্ট, আমাদের গভর্নেন্স হবে স্মার্ট-এই সবকিছুর মধ্য দিয়ে আমরা একটা স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলব। সেই স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হলে, সবার আগেই শিক্ষাটাকে স্মার্ট করতে হবে। শিক্ষাটাকে স্মার্ট বানাবার জন্যই আমরা গত ক’বছরে নিরন্তর চেষ্টা করে চলেছি।’ 

দীপু মনি আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা এ লক্ষ্যে এবারে চলমান তিন মেয়াদে এবং তার আগের মেয়াদে শিক্ষাকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন। ঠিক যেভাবে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন শিক্ষাকে প্রাধান্য দিতে হবে। আমাদের যতগুলো প্রতিষ্ঠান রয়েছে, আমাদের এই শিক্ষাকে একটা স্বাধীন সার্বভৌম দেশের উপযোগী করে দেশকে এগিয়ে নেবার জন্য, তার সমস্ত সম্ভাবনাকে বিকশিত করার জন্য, যে রকম একটি শিক্ষা ব্যবস্থা দরকার সে রকম। সেই ঔপনিবেশিক শিক্ষা নয়, কেরানি পয়দা করার শিক্ষা নয়! একটা স্বাধীন দেশের উপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করার জন্য বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।’ 

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল হয়েছে, আমাদের নানা রকম নীতিমালা বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। শিক্ষক নিয়োগের নতুন নীতিমালা প্রণীত হয়েছে এবং সেটা বাস্তবায়নের কাজ চলছে। এ রকম নানাবিধ এবং আমাদের উচ্চ শিক্ষায়ও আমাদের বিভিন্ন নীতিমালা অনুসরণ করে চলেছি। আমাদের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কিছু লক্ষ্য রয়েছে সেগুলো আমাদের পূরণ করতে হবে আর টেকসই উন্নয়নের যে লক্ষ্য আন্তর্জাতিকভাবে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ।’ 

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক এমপি। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। অত্যন্ত সফলভাবে তারা সারা দেশের অধিভুক্ত কলেজগুলোর শিক্ষার মান উন্নয়নসহ শিক্ষা প্রশাসন পরিচালনা করছে। যদিও এই কাজ অত্যন্ত কঠিন এবং চ্যালেঞ্জের। দেশের ২ হাজার ২৫৭টি কলেজের শিক্ষাব্যবস্থাপনা, পরিচালনা পর্ষদ গঠন, মান উন্নয়নসহ নানাবিধ কাজ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে সামলাতে হয়। তবে আমাদের দেশের সাধারণ শিক্ষার চেয়ে কারিগরি শিক্ষা, কর্মমুখী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়ানো উচিত। কারণ এসব ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের সুযোগ বেশি সৃষ্টি হয়।’

এর আগে দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে উদ্যাপন করা হয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। গাজীপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে একাডেমিক ভবনের সামনে সকাল সাড়ে ১০টায় পায়রা এবং বেলুন উড়িয়ে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধন শেষে একাডেমিক ভবনের সামনে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমানের নেতৃত্বে আনন্দ র‍্যালি বের হয়। র‍্যালিটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে নতুন ডরমিটরি ভবনের সামনে অনুষ্ঠানস্থলে গিয়ে শেষ হয়। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন—বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমান। ৩০ পাউন্ড ওজনের কেক কেটে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপন করা হয়। 

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর মো. মশিউর রহমানের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন—বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সিমিন হোসেন রিমি এমপি, বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকি এমপি, শামসুন্নাহার ভূঁইয়া এমপি, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ উপাচার্য অধ্যাপক নিজাম উদ্দিন, ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. হাবিবুর রহমান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ উপাচার্য প্রফেসর ড. নিজামউদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ উপাচার্য প্রফেসর ড. নাছিমা বানু। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মোল্লা মাহফুজ আল-হোসেন। 

অনুষ্ঠান শেষে জাতীয় সংসদ সদস্য ও সংগীত শিল্পী মমতাজ বেগম, সরকারি সংগীত কলেজসহ জাতীয় পর্যায়ের শিল্পীদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত