Ajker Patrika

ভুল সেটে পরীক্ষা দিলেন ৪২ শিক্ষার্থী, অতিরিক্ত সময় না পাওয়ার অভিযোগ

শরীয়তপুর প্রতিনিধি
ভুল সেটে পরীক্ষা দিলেন ৪২ শিক্ষার্থী, অতিরিক্ত সময় না পাওয়ার অভিযোগ

শরীয়তপুরে একটি কেন্দ্রে উচ্চমাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষা ভুল প্রশ্নপত্রের সেটে নেওয়া হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সদর উপজেলার ডোমসার জগৎচন্দ্র ইনস্টিটিউট ভেন্যু কেন্দ্রে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ের পরীক্ষায় এই ঘটনা ঘটে। ভুল সেটে ৪২ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিয়েছেন। ১ ঘণ্টা ২০ মিনিট পরে সঠিক সেট পেলেও অতিরিক্ত সময় দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ পরীক্ষার্থীদের। 

এদিকে ভুল সেটে পরীক্ষা নেওয়া ও অতিরিক্ত সময় বাড়িয়ে না দেওয়ার বিষয়ে গতকাল বিকেলে শরীয়তপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অভিযোগ দেন ৪২ জন পরীক্ষার্থী। তাঁরা জেলার নড়িয়া উপজেলার ডগ্রী ইসমাইল হোসেন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী। 

ডোমসার জগৎচন্দ্র ইনস্টিটিউট ভেন্যু কেন্দ্রের সহকারী সচিব রতন চন্দ্র দাস সেট ভুল হওয়ার দায় স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘তাড়াহুড়া করা ও বেশি বয়স হওয়ার কারণে এমন ভুল হয়েছে।’ অতিরিক্ত সময় না দেওয়ার বিষয়ে তিনি মন্তব্য করেননি। 

জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অভিযোগ আসার বিষয়টি নিশ্চিত করেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র। তিনি বলেন, ‘পরীক্ষা শুরু হওয়ার আধা ঘণ্টা আগে শিক্ষার্থীদের সেট কোড পাঠানো হয়। কেন্দ্রে যারা দায়িত্বে ছিলেন তাঁরা তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে সেট-২ ও সেট-৪ এর মধ্যে গরমিল করে ফেলেন। অতিরিক্ত সময় বাড়িয়ে না দেওয়ার বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।’ 

পরীক্ষার্থীদের অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান ইউএনও বিকাশ চন্দ্র। তিনি বলেন, ‘ওই কেন্দ্রে দায়িত্বরতদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ বোর্ডকে অবগত করা হয়েছে। যারা ভুলের শিকার হয়েছেন তাঁদের খাতা আলাদা করে রাখতে বলা হয়েছে। তাঁদের বিশেষ বিবেচনায় পরীক্ষা মূল্যায়ন করা হবে।’ 

ভুক্তভোগী পরীক্ষার্থীদের থেকে জানা গেছে, প্রতিদিনের মতো প্রথমে বহুনির্বাচনী প্রশ্ন (এমসিকিউ) পরীক্ষা শেষে লিখিত পরীক্ষার জন্য প্রশ্ন দেন পরীক্ষার হলে কর্মরত পরিদর্শকেরা। পরিদর্শকদের দেওয়া লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের সেট ভুল ছিল। ভুল সেটে ১ ঘণ্টা ২০ মিনিট পরীক্ষা দেওয়ার পর হলে দায়িত্বরত পরিদর্শকেরা জানান, নতুন সেট দেওয়া হবে। আগের সেটটি ভুল। 

পরীক্ষার্থীরা বেশি সময় দাবি করলে প্রাথমিকভাবে মানা হলেও নির্দিষ্ট সময়ে জোর করে খাতা কেড়ে নেওয়া হয়। পরীক্ষার প্রশ্নের অধিকাংশ উত্তর লিখতে না পারায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা ফলাফলে অকৃতকার্য হবেন বলে আশঙ্কার কথা জানান তাঁরা। 

পরীক্ষার্থী হাবিবাতুস সাদিয়া বলেন, ‘১ ঘণ্টা ২০ মিনিট পার হওয়ার পর শিক্ষকেরা এসে বলে ভুল সেট দেওয়া হয়েছে। নতুন সেটে পরীক্ষা দিতে হবে। প্রথমে তাঁরা অতিরিক্ত সময় দেবে বললেও পরে দেয়নি। প্রশ্নের অধিকাংশ উত্তর লিখতে না পারায় আমরা অকৃতকার্য হতে পারি। বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য বারবার আমাদের ওপর চাপ দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসক স্যারের কাছে অভিযোগ দিয়েছি।’ 

কানিজ ফাতিমা নামের আরেক পরীক্ষার্থী বলেন, ‘অতিরিক্ত সময় না দিয়ে জোর করে খাতা কেড়ে নিয়েছেন শিক্ষকেরা। অতিরিক্ত সময় না দেওয়ার কারণে ফলাফল খারাপ হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য প্রয়োজনীয় নম্বর পাব কিনা তা নিয়ে সন্দিহান আমি।’ 

পরীক্ষার্থী সজল হোসেন বলেন, ‘প্রশ্নপত্রের ভুল সেট দেওয়ার পর কোনো ম্যাজিস্ট্রেট হলে আসেননি। আমাদেরকে হলের পুরোটা সময় বিষয়টি নিয়ে চুপ থাকতে বাধ্য করা হয়েছে। আশা ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হব, কিন্তু ভর্তি-আবেদনের ন্যূনতম পয়েন্ট পেতে কষ্ট হবে। আমরা এই ঘটনার তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি চাই।’ 

ডগ্রী ইসমাইল হোসেন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রভাষক জি এম সামিউল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে অংশ নেওয়া ৪২ জন পরীক্ষার্থীর সবাই ভুল সেটে পরীক্ষা দিয়েছেন। তাঁদের ফলাফল খারাপ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যাদের অসতর্কতার কারণে এমন মারাত্মক ভুল হয়েছে, তাঁদের উপযুক্ত শাস্তি দাবি করছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত