Ajker Patrika

জাবি ছাত্রলীগের দুই নেতার বিরুদ্ধে ডিশ ব্যবসায়ীর কাছে চাঁদা দাবির অভিযোগ

জাবি প্রতিনিধি
আপডেট : ০৯ মে ২০২৩, ১৯: ৫২
জাবি ছাত্রলীগের দুই নেতার বিরুদ্ধে ডিশ ব্যবসায়ীর কাছে চাঁদা দাবির অভিযোগ

স্থানীয় এলাকার ডিশ ব্যবসায়ীর কাছে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করার অভিযোগ উঠেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) ছাত্রলীগের দুই নেতার বিরুদ্ধে। চাঁদার টাকা না দেওয়ায় ডিশের ব্যবসা বন্ধ রাখা এবং জীবননাশেরও হুমকি দেন বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী। একই সঙ্গে দুই লাখ টাকার সরঞ্জাম ও লাইনম্যানকে মারধর করা নিয়ে থানায় অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী।

গতকাল সোমবার রাতে আশুলিয়া থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী ডিশ ব্যবসায়ী মমিনউল্লাহ মমিন।

এ ঘটনায় অভিযুক্তরা হলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের ত্রাণ ও দুর্যোগবিষয়ক সম্পাদক শান্ত মাহবুব এবং উপ-দপ্তর সম্পাদক হাছিবুর রহমান। অভিযুক্তদের মধ্যে শান্ত মাহবুব নৃবিজ্ঞান বিভাগের ৪৬ ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং হাছিবুর রহমান ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের ৪৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী। তাঁরা দুজনই বিশ্ববিদ্যালয়ের পোষ্য কোটায় ভর্তিকৃত শিক্ষার্থী। তবে নিয়মবহির্ভূতভাবে তাঁরা দুজনই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে অবস্থান করেন। তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান ওরফে লিটনের অনুসারী বলে ক্যাম্পাসে পরিচিত।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, দীর্ঘদিন ধরে জাবি ক্যাম্পাসের পেছনে আমবাগান পানধোয়া বাজার এলাকায় ডিশ লাইনের ব্যবসা করে আসছেন ভুক্তভোগী মমিনউল্লাহ মমিন। জাবি ছাত্রলীগের দুই নেতা হাছিবুর রহমান ও শান্ত মাহবুব এবং তাঁদের লোকজন মমিনের কাছে টাকা দাবি করে আসছেন। গত ১৫ এপ্রিল তাঁরা (নেতারা) ৫ লাখ টাকা দাবি করেন। টাকা না দিলে ব্যবসা করতে দেবেন না বলে তাঁদের ডিশের লাইন কেটে দেন অভিযুক্তরা।

 ১ মে (সোমবার) ৫টার দিকে আমবাগান এলাকায় ডিশ লাইনের বিল তুলতে গেলে কর্মচারী মো. খাইরুলকে তুলে নিয়ে যান অভিযুক্তরা। এ সময় ওই কর্মচারীর কাছে থাকা ডিশ লাইনের বিল উত্তোলনের নগদ ৮ হাজার ৫০০ টাকা নিয়ে নেন তাঁরা। এরপর লাইনম্যানদের মারধর করা হয়। এরপর অভিযুক্তরা খাইরুলের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে কল করে এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বলেন।

অভিযোগপত্রে আরও দাবি করা হয়, ৫ মে (শুক্রবার) বিকেলে অভিযুক্তরা তাঁদের ডিশ লাইনের মেশিন কেটে নিয়ে যান। যার আনুমানিক মূল্য দুই লাখ টাকা। পাশাপাশি তাঁদের (ব্যবসায়ী) লোকজনদের প্রাণনাশের হুমকি দেন তাঁরা।

এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী মমিনউল্লাহ মমিন বলেন, ‘অভিযুক্তরা এখন পর্যন্ত আমাদের ১৩টি হাইব্রিড কেব্‌ল অ্যামপ্লিফায়ার নিয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে ৯ জায়গায় তার কেটে ফেলেছে, তার নিয়ে গেছে ২৬ কোরের প্রায় ৫০০ মিটার। আমাদের পাঁচ শতাধিক বাসায় ডিশ দেওয়া আছে, তারা কেউ এখন ডিশের সুবিধা পাচ্ছে না। পুরোপুরিই বন্ধ আছে আমাদের সার্ভিস। তারা (অভিযুক্তরা) বলেছে সার্ভিস বন্ধ রাখতে, এমনকি সার্ভিস চললে আমাদের প্রাণনাশেরও হুমকি দিয়েছে। তাদের সঙ্গে পাঁচটা মোটরসাইকেলে আরও ৭-৮ জন এসেছিল, তাদের নাম জানি না। তারা আমার দোকানের কর্মচারীকে তুলে নিয়ে মারধর করেছে। আমরা ভয়ে আছি, তারা একসঙ্গে ৩০-৩৫ জন করে এসে হুমকি দিয়ে যায়।’

লাইনম্যান খাইরুল ইসলাম বলেন, ‘হাসিব ভাই আমাকে উঠিয়ে নিয়ে যান আল-বেরুনী হলের সামনে। সেখানে গিয়ে আমাকে মারধর করেন এবং আমার পকেটে ৭-৮ হাজার টাকা ছিল তা নিয়ে নেন। আমি যদি ডিশের কাজে আমবাগান এলাকা কিংবা ক্যাম্পাসে যাই তাহলে তাঁরা আমাকে জবাই করে ফেলবে বলে হুমকি দেন।’ 

জানতে চাইলে অভিযুক্ত হাছিবুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এটা একটা ভিত্তিহীন অভিযোগ। আমবাগান এলাকার ডিশের ব্যবসায় গত ৫ ফেব্রুয়ারি আমি একটা অংশীদারত্ব ক্রয় করি। যার পরিপ্রেক্ষিতে আমি সেখানে লাইন দিতে গেলে মমিনের মানুষেরা ঝামেলা করে। এখন তারাই আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে। এমন অভিযোগ প্রমাণ করতে না পারলে আমি মানহানি মামলা দায়ের করব।’ 

এসব বিষয়ে পাথালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পারভেজ দেওয়ান বলেন, ‘গুটি কয়েক ছাত্রের জন্য এলাকাবাসীদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পর্ক খারাপ হচ্ছে। এতে সাধারণ মানুষ ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে। আমার এলাকায় ক্যাম্পাসে অনেক শিক্ষার্থী ভাড়া থাকেন। কিন্তু কিছু শিক্ষার্থী এলাকায় এসে মাঝেমধ্যেই ঝামেলা করেন। আমার এলাকাবাসীকে আমি বুঝিয়ে শান্ত রাখতে পারি, কিন্তু ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা তো সংঘবদ্ধ। তাঁদেরকে কিছু বলা যায় না। এ ধরনের ঘটনা যখন ঘটে, তখন অবশ্যই আমরা শঙ্কাবোধ করি এবং আতঙ্কিত থাকি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটন বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। যদি অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব। তবে যদি অভিযোগ প্রমাণিত না হয়, সে ক্ষেত্রে অভিযোগকারীর শাস্তি দাবি করছি।’

এ বিষয়ে আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘গতকাল রাতে পানধোয়ার এক ডিশ ব্যবসায়ীর অভিযোগ আমরা পেয়েছি। সেখানে দুজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত কয়েকজনের নাম আছে। অভিযোগের ভিত্তিতে আজ আমরা পানধোয়া বাজারে গিয়েছিলাম তদন্ত করার জন্য। পরবর্তীতে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায় সেটা আমরা দেখব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ফাইনালে ভারতের ‘যম’কে খেলানো নিয়ে দোটানায় নিউজিল্যান্ড

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বিলুপ্তের সিদ্ধান্ত হয়নি, নাহিদের মন্তব্যের জবাবে উমামা

আ.লীগ নেতার গ্রেপ্তার নিয়ে রাজশাহীতে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষ

বোনের বাড়িতে ‘ধর্ষণের’ শিকার: ২৪ ঘণ্টা পরও অচেতন শিশু, মূর্ছা যাচ্ছেন মা

আওয়ামী লীগ নেতা ‘ব্যাটারি বাবু’ ভবনে ঢুকে হাওয়া!

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত