ভৈরবে দুই ইউপি চেয়ারম্যানের দ্বন্দ্বের জেরে সংঘর্ষ, নিহত ২

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে সাবেক ও বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যানের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে দুইজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় উভয় পক্ষের শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। আগের সংঘর্ষে আহত একজনের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সাদেকপুর ইউনিয়নের মৌটুপি গ্রামে ফের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

গত ৯ অক্টোবর দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মহরম আলী নামের একজনের মৃত্যু হয় গতকাল। এর জের ধরে আজ সংঘর্ষে নিহত হন উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের মৌটুপি গ্রামের কাইয়ুম মিয়া। এঘটনায় গুরুতর আহত লিটন মিয়া ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে আছেন।

আজ বৃহস্পতিবারের ঘটনায় আহতদের মধ্যে ১০ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল ও বাজিতপুর জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আহত অন্যদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

এলাকাবাসী জানান, প্রায় পাঁচ দশক ধরে ওই এলাকার সরকারবাড়ি ও কর্তাবাড়ির মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। বর্তমানে সরকারবাড়ি অংশের নেতৃত্বে রয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাদেকপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. সাফায়েত উল্লাহ। অপরদিকে কর্তাবাড়ির নেতৃত্বে রয়েছেন উপজেলা বিএনপির সাবেক জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হক। আধিপত্যের দ্বন্দ্বে এ পর্যন্ত উভয় পক্ষের ১৬ জন খুনের শিকার হয়েছেন। বিভিন্ন সময় দুই পক্ষের মধ্যে হামলা-সংঘর্ষের ঘটনায় এখনো মামলা আছে ডজনখানেক এবং আসামি প্রায় ৫০০ জন।

গত ঈদুল আজহার আগের দিন ফুটবল খেলা নিয়ে সংঘর্ষে আহত কর্তাবাড়ির নাদিম চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১৯ জুন মারা যান। এঘটনায় সরকারি বাড়ির লোকজনকে আসামি করে মামলা করা হয়। এ মামলায় ১২ আগস্ট সরকারবাড়ির ৬৯ জন জামিনে মুক্ত হন। ১৩ আগস্ট দুই পক্ষের মধ্যে আবারও দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর লোকজন এলাকায় দুই পক্ষকে নিয়ে আলোচনার উদ্যোগ নেয়। ১৫ সেপ্টেম্বর সালিসের দিন নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু ১৩ সেপ্টেম্বর জুমার নামাজের পর কর্তাবাড়ির লোকজন দা-বল্লম নিয়ে সরকারবাড়িতে হামলা চালায় বলে অভিযোগ ওঠে। এদিন দুই পক্ষের মধ্যে দুই ঘণ্টা ধরে সংঘর্ষ চলে। একপর্যায়ে সরকারবাড়ির ইকবাল নামের এক ব্যক্তি বল্লমবিদ্ধ হয়ে নিহত হন।

এদিকে মৌটুপি গ্রামে গত ৯ অক্টোবর আবারও সংঘর্ষ বাধে। তাতে সরকারবাড়ি পক্ষের আহত মহরম আলী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল বুধবার বিকেলে মারা যান। আজ সকালে দুই পক্ষে আবারও সংঘর্ষ বাধে। একপর্যায়ে টেঁটাবিদ্ধ হয়ে সরকারবাড়ির কাইয়ুম ঘটনাস্থলেই নিহত হন। এ ঘটনায় উভয় পক্ষের শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে সরকারবাড়ির বাসিন্দা ও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) বর্তমান চেয়ারম্যান মো. সাফায়েত উল্লাহ বলেন, ‘কর্তাবাড়ির নাদিম মারা গেলে আমাদের গোষ্ঠীর কমপক্ষে দুইশ বাড়িঘর ভাঙচুর, লুটপাট ও আগুন লাগানো হয়। ৫২ বছর ধরে তোফাজ্জল হক তাঁর বংশের লোকজন নিয়ে আমাদের অত্যাচার-নির্যাতন করছে, আমার দুই ভাইকে তারা হত্যা করেছে। আজও আমার বংশের কাইয়ুমকে তারা হত্যা করল।’

অপরপক্ষ কর্তাবাড়ির নেতা ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হক বলেন, ‘আজ আমার বংশের লোকজন পলাতক জীবন থেকে বাড়িতে গেলে সরকারবাড়ির লোকজন তাদের ওপর হামলা চালায়। আমরা অত্যাচার-নির্যাতন করি না, বরং সরকারবাড়ির লোকজনের অত্যাচারে আমরা অতিষ্ঠ।’

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. বুলবুল আহমেদ বলেন, মৌটুপি গ্রামের দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় দুপুর থেকে এখন পর্যন্ত শতাধিক আহত ব্যক্তি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে। তাদের মধ্যে গুরুতর আহত ১০ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভৈরব থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. শাহিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত আছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।’