ব্যারিস্টার ছেলের বিরুদ্ধে মায়ের মামলা, সহকর্মী আইনজীবীর সঙ্গে মারামারি

যশোর প্রতিনিধি
আপডেট : ২৮ মার্চ ২০২৩, ১১: ১১
Thumbnail image

ছেলে একজন ব্যারিস্টার। তিনি যে আদালতে প্র্যাকটিস করেন সেখানেই তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করেছেন মা ও ভাই। তাঁদের বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে বাবাকে হাসপাতালে ভর্তি রেখে জমি লিখে নেওয়ার চেষ্টার অভিযোগে দুজনের পৃথক মামলা করেছেন। মায়ের মামলার আইনজীবীকে আপসনামায় স্বাক্ষর করতে চাপ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ব্যারিস্টার ছেলের বিরুদ্ধে। 

এ নিয়ে সোমবার (২৭ মার্চ) বেলা ১টার দিকে যশোর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত চত্বরে আইনজীবীদের দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি হয়। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ব্যারিস্টার একে এম মোর্ত্তজা রাসেল যশোরের চৌগাছা উপজেলার মাকাপুর গ্রামের হায়দার আলীর ছেলে। লন্ডন ফেরত এই ব্যারিস্টারের বিরুদ্ধ অভিযোগ, মা ও ভাইকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে বাবাকে হাসপাতালে ভর্তি রেখে জমি লিখে নেওয়া চেষ্টা করেছেন। এ নিয়ে গত ১২ মার্চ মোর্ত্তজার বিরুদ্ধে যশোর আদালতে মামলা করেন মা এবং ছোট ভাই আল ইমরান। 

সোমবার ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মোর্ত্তজার বিরুদ্ধে তাঁর আপন ভাই ও মা পৃথক দুটি মামলা করেছেন। মায়ের মামলার আইনজীবী অ্যাডভোকেট কাজী ফরিদুল ইসলাম। সোমবার দুপুরে মোর্ত্তজা ১০ / ১২ জনকে সঙ্গে নিয়ে আইনজীবী ফরিদুলের কাছে যান। আপসনামায় স্বাক্ষর করতে বলেন। 

অভিযোগ উঠেছে, স্বাক্ষর দিতে অস্বীকৃতি জানালে ফরিদুলকে ভয়ভীতি দেখান মোর্ত্তজা। বিষয়টি আদালতে উপস্থিত আইনজীবী ও সংশ্লিষ্টদের নজরে এলে তাঁরা প্রতিবাদ করেন। এ নিয়ে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে দু-পক্ষের মধ্যে মারামারি হয়। এ সময় একটি গাড়িও ভাঙচুর করা হয়। পাল্টাপাল্টি ধাওয়ায় আদালত চত্বরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। ব্যারিস্টার গোলাম মোর্ত্তজা ও তাঁর সহযোগীদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।

থানায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জুয়েল ইমরান দুই পক্ষের অভিযোগ শোনেন। এরপর আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু মোর্ত্তজা ছোট এবং সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহানুর আলম শাহীন থানায় যান। ঘটনা শুনে থানা কর্তৃপক্ষকে মীমাংসার আশ্বাস দিয়ে তাঁরা ফিরে আসেন। 

ঘটনার প্রসঙ্গে অ্যাডভোকেট কাজী ফরিদুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাদীর অনুপস্থিতিতে আমাকে মামলার প্রত্যাহারপত্রে স্বাক্ষর করতে বলা হয়। আমি রাজি হইনি। তখন হুমকি দিয়ে মোর্ত্তজা রাসেল বলেন, “আমি ইংল্যান্ডের ব্যারিস্টার, আপনাকে দেখে নিব। ” তখন আমি বলি, আপনার কথায় স্বাক্ষর করব না। তখন তিনি বলেন, “আমার মা আপনাকে বলেছে, আপনি এখানে স্বাক্ষর করেন। ” আমি বলি, না ওখানে স্বাক্ষর করব না। কারণ ওই ড্রাফটটা আমার না। আমি না পড়ে স্বাক্ষর করব না। এরপর সে ১০ থেকে ১২ জন লোক নিয়ে এসে ঘিরে ধরে ভিডিও শুরু করে। তখন জুনিয়ররা (আইনজীবী) এসে ওদের বলে, সিনিয়রের সঙ্গে বেয়াদবি করছ কেন? তখন ওরা বলে, “কিসের সিনিয়র, এখনই ব্যবস্থা নিচ্ছি। ” এরপর পুলিশ চলে আসে।’ 

তবে কাজী ফরিদুলের অভিযোগ অস্বীকার করে ব্যারিস্টার একেএম মোর্ত্তজা বলেন, ‘আমার মায়ের একটি মামলার আইনজীবী ফরিদুল ইসলাম। মাকে নিয়ে তাঁর কাছে গিয়েছিলাম। মামলা প্রত্যাহারের কাগজে বাদী ও আইনজীবীর স্বাক্ষর দরকার হয়। তাঁকে স্বাক্ষর করতে বলা হলে তিনি করেননি। উল্টো হুমকি-ধমকি দেন। একপর্যায়ে ফোন করে লোকজন ডেকে এনে আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। আমার গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে।’ 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জুয়েল ইমরান বলেন, ‘খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে। এ বিষয়ে কোনো পক্ষই অভিযোগ দেয়নি।’ 

জানতে চাইলে জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু মোর্তজা বলেন, ‘বিষয়টি দুঃখজনক ও অনাকাঙ্ক্ষিত। বিকেলে সমিতির কার্যালয়ে উভয় পক্ষকে ডাকা হয়। এ সময় কাজী ফরিদুল ইসলাম ও ব্যারিস্টার মোর্ত্তজার বক্তব্য শুনে উভয়ের ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে সমঝোতা করে দেওয়া হয়েছে। এতে উভয় পক্ষ সন্তুষ্ট হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত