ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন করা মরদেহ উত্তোলন, স্ত্রীর দাবি হত্যা 

যশোর প্রতিনিধি ও চৌগাছা প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, ২১: ০১

ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফনের সাত মাস পর বিপ্লব হোসেন ওরফে বিল্লাল (৪৫) নামের এক ব্যক্তির মরদেহ কবর থেকে উত্তোলন করা হয়েছে। যশোরের চৌগাছা উপজেলার দেবীপুর গ্রামে তাদের পারিবারিক কবরস্থান থেকে তার মরদেহ উত্তোলন করা হয়। এরপর মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য যশোর জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

আজ সোমবার আদালতের নির্দেশে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাজিব হাসান ও তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের উপপরিদর্শক (এসআই) সঞ্জয় বিশ্বাসের উপস্থিতিতে বিল্লালের মরদেহ তোলা হয়। আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন পিবিআই যশোরের পুলিশ সুপার রেশমা শারমিন।

পুলিশ বলছে, চলতি বছরের ১ মার্চ রাত পৌনে ৮টার দিকে চৌগাছা থানা এলাকার চৌগাছা-কোটচাঁদপুর সড়কে মুক্তাদহ মোড়ের উত্তর পাশে সড়ক দুর্ঘটনায় বিপ্লব হোসেন বিল্লালের মৃত্যু হয়েছে দাবি করেন স্বজনেরা। সে সময় মৃতের ভাই রুবেল হোসেন সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন মর্মে বিনা ময়নাতদন্তে মরদেহ দাফনের জন্য চৌগাছা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বরাবর লিখিত আবেদন করেন। বাদীসহ তাদের পরিবারের সদস্যদের কোনো অভিযোগ না থাকায় ওসি বিনা ময়নাতদন্তে মরদেহ দাফনের জন্য পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে। এরপর ১৬ মে যশোরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৫ জনের নামে মামলা করেন মৃতের স্ত্রী নাসরিন আক্তার। মামলায় বিল্লালের চাচাতো ভাই আরিফসহ চারজনের নাম উল্লেখ করা হয়। আদালত মামলাটি তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য যশোর পিবিআইকে নির্দেশ দেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই সঞ্জয় বিশ্বাস পুনরায় কবর থেকে মরদেহ উত্তোলন করে ময়নাতদন্ত করার জন্য আদালতে আবেদন করেন। আদালতের নির্দেশে সোমবার যশোর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কাজী নাজিব হাসানের উপস্থিতিতে পারিবারিক কবরস্থান থেকে মরদেহ উত্তোলন করা হয়। মৃত্যুর সঠিক কারণ অনুসন্ধান করতে মরদেহ ময়নাতদন্ত করার জন্য যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

এ দিকে গত ২৬ জুলাই যশোর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে বিপ্লব হোসেন বিল্লালের স্ত্রী নাসরিন আক্তার দাবি করেন, যশোরের চৌগাছা উপজেলার দেবীপুর গ্রামের বিপ্লব হোসেন সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাননি। তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। খুন করে সড়ক দুর্ঘটনা বলে প্রচার চালায় নিহতের চাচাতো ভাই ও অনুসারীরা। তারাই মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করে, ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ নিয়ে দাফন করেছে। পরে প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা ও এলাকার মানুষের আলোচনায় হত্যার বিষয়টি সামনে এসেছে। অভিযুক্তরা হলেন—চৌগাছা উপজেলার দেবীপুর গ্রামের আরশাদ আলীর ছেলে আরিফ হোসেন, আলামিন ও আরশাদ আলী, রমজান মালিথার ছেলে আরিফুল ইসলাম, নিয়ামতপুর গ্রামের বুদোর ছেলে বিপুল হোসেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে নাসরিন আক্তার বলেছিলেন, ‘বাড়িতে একটি কুকুরের বাচ্চা আসা নিয়ে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আসামিদের সঙ্গে আমার স্বামী বিপ্লব হোসেনের বিরোধ হয়। এই বিরোধ নিয়ে তাদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। বিষয়টি আসামিরা মেনে নিতে পারেনি। ফলে আসামিরা আমার স্বামীকে খুন-জখমের ষড়যন্ত্র করে। গত ১ মার্চ সন্ধ্যায় আমার স্বামী বিপ্লব হোসেন মোটরসাইকেলে তাঁর খালু শ্বশুর বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়। পথে মুক্তদহ গ্রামের মোড়ে (চৌগাছা-কোটচাঁদপুর সড়ক) আসামিরা বিপ্লবের গাড়ির গতিরোধ করে ও মারপিট করে গুরুতর জখম করে। স্থানীয়রা উদ্ধার করে চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করে। এ সময় আসামিরা প্রভাবিত করে থানায় অভিযোগ দিতে বাঁধা দেয়। আমার স্বামীর লাশ ময়নাতদন্ত করতে দেওয়া হয়নি। সে সময় লাশ দাফন হয়ে যায়। পরে খোঁজখবর নিয়ে ও ঘটনার সময় উপস্থিত সাক্ষীদের সঙ্গে কথা বলে হত্যার বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে আমি বাদী হয়ে গত ১৬ মে আদালতে মামলা করেছি।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত