মৌসুমের শুরুতে হিমসাগর আম লন্ডনে রপ্তানির কার্যক্রম শুরু

কলারোয়া (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৯ মে ২০২২, ২০: ৪৩

সাতক্ষীরার কলারোয়া থেকে মৌসুমের শুরুতে ২ হাজার কেজি হিমসাগর আম রপ্তানির কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার ৮ নম্বর কেরেলকাতা ইউনিয়ন ইলিশপুর গ্রামের কবিরুল ইসলাম ডবলুর আমবাগান থেকে এ কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। 

সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ নুরুল ইসলাম বলেন, জেলায় হিমসাগর ১ হাজার ৫৫০ হেক্টর, ল্যাংড়া ৫৬৪ হেক্টর, আম্রপালি ৮৯৯ হেক্টর, গোপালভোগ ২১৯ হেক্টর, গোবিন্দভোগ ৩৫২ হেক্টর, বোম্বাই ৫০ হেক্টর, লতা ১৫৩ হেক্টর, মল্লিকা ৮০ হেক্টর ও ২৩১ হেক্টর জমিতে অন্য জাতের আমের চাষ হয়েছে। আমের বাগান রয়েছে ৫ হাজার ২৯৯ টি। আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪০ হাজার টন। প্রতি হেক্টর জমিতে এ বছর আমের উৎপাদন হয়েছে ১০-১১ টন। জার্মানি, ইতালি, ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সে সর্বমোট আম রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ৬০০ টন। ২০১৬ সাল থেকে সাতক্ষীরার আম প্রথম ইতালিতে রপ্তানি শুরু হয়। বর্তমানে জেলায় চাষির সংখ্যা রয়েছে ১৩ হাজার ১০০ জন। 

সলিডারিডাড নেটওয়ার্ক এশিয়া যশোর ফ্রুটস অ্যান্ড ভেজিটেবল কমোডটি ম্যানেজার ড. নাজমুন নাহার বলেন, সলিডারিডাড নেটওয়ার্ক এশিয়া এবং এর সহযোগী সংস্থা উত্তরণ কর্তৃক বাস্তবায়িত সফল প্রকল্পটি নেদারল্যান্ড দূতাবাসের আর্থিক সহায়তায় উপজেলার মোট ৫০০ জন আমচাষি ২০১৩ সাল থেকে কৃষি চর্চার মাধ্যমে উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে চাষিদের দক্ষতা উন্নয়নে কাজ করছে। সফল প্রকল্পের মাধ্যমে ২০১৬ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ৯৬ দশমিক ১ টন আম জার্মানি, ইতালি, ফ্রান্স ও বাহরাইনে রপ্তানি করা হয়েছে। যার বাজার মূল্য ৭০ লাখ ১৮ হাজার ২৫২ টাকা।

এ বছরও সলিডারিডাড নেটওয়ার্ক এশিয়া ও সহযোগী সংস্থা উত্তরণের বাস্তবায়নে সফল প্রকল্পের ৫০০ জন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত আমচাষির কাছ থেকে শুরু হয়েছে রপ্তানি কার্যক্রম। এ বছরের মে মাসের শুরুতে ১০০ কেজি গোবিন্দভোগ আম পরীক্ষামূলকভাবে হংকংয়ে এসিআই লজিস্টিক লিমিটেডের মাধ্যমে রপ্তানি করা হয়। গত ১৬ মে সাতক্ষীরা থেকে ৪০০ কেজি হিমসাগর আম জিএল ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের মাধ্যমে লন্ডনে রপ্তানি করা হয়। আজ কলারোয়া থেকে ২ হাজার কেজি আম লন্ডনে রপ্তানির জন্য শুভ উদ্বোধন করেছেন জেলা প্রশাসক হ‌ুমায়ূন কবির। প্রতি মণ আম ৩ হাজার ৫০০ টাকা দরে রপ্তানি করা হয়েছে। 

সলিডারিডাড নেটওয়ার্ক এশিয়া সফল প্রকল্পের সাতক্ষীরার প্রোগ্রাম অফিসার ও সাপ্লাই চেইন মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, জেলার ৫০০ জন আমচাষির মধ্যে কলারোয়ার ২৩৯ জনকে নিরাপদ বিষ মুক্ত আম চাষের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। বিশ্ব জুড়ে ভারত, পাকিস্তান ও মিসরের আমের থেকেও কলারোয়ার হিমসাগর আমের সুনাম রয়েছে। এ সকল আম লন্ডন, ইংল্যান্ড, জার্মানি, ইতালি, ফ্রান্স ও ডেনমার্কে যাবে। 

মৌসুমের শুরুতে হিমসাগর আম রপ্তানির কার্যক্রম শুরু হয়েছেকলারোয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (ইউএনও) কৃষিবিদ রফিকুল ইসলাম বলেন, উপজেলার ৬২৫ হেক্টর জমিতে প্রায় ২৪৮ জনের মতো চাষি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতা ও পরামর্শে সুস্বাদু ও বিষমুক্ত আম চাষ করেছেন। গত বছর প্রতিমণ ৩ হাজার ২০০ টাকা দরে ৮৫ টন হিমসাগর আম উত্তরণ সলিডারিডাড নেটওয়ার্ক এশিয়ার ব্যবস্থাপনায় ইউরোপে রপ্তানি করা হয়েছিল। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় প্রতিটি বাগানের আমের মুকুল ৫০ শতাংশ ঝরে পড়েছে। এ ক্ষেত্রে আমের উৎপাদন হ্রাস পাওয়ায় চাষিরাও অনেকটা ক্ষতির মুখে রয়েছে। ন্যায্যমূল্যে আম বিক্রি করতে পারলে চাষিরা ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবেন। 

এ বছর হিমসাগর আম বিদেশে রপ্তানির জন্য প্রতিমণ ৩ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ৩ হাজার ৭০০ টাকা দরে বায়ার কোম্পানির মাধ্যমে বিক্রি করতে পারছে। এ বছর জেলায় ১০০ টন আম রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। পরে গোবিন্দভোগ, ল্যাংড়া ও আম্রপালি নির্দিষ্ট সময়ের পর বিক্রি করা হবে। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুলী বিশ্বাসের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক হ‌ুমায়ূন কবির। তিনি বিষমুক্ত নিরাপদ সুস্বাদু হিমসাগর আম জিয়েল ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড বায়ার কোম্পানির মাধ্যমে লন্ডনে রপ্তানি কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন। এ সময় তিনি বলেন, সাতক্ষীরার সুস্বাদু হিমসাগর আম এখন সাতক্ষীরা জেলার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। অন্যান্য জেলার থেকে সাতক্ষীরা আমের ঘ্রাণ বেশি ও স্বাদ অতি সুস্বাদু। অপরদিকে, ফল নিরাপদ ও বিষমুক্ত হওয়ায় কয়েক বছরের ব্যবধানে বিভিন্ন দেশে সুনাম অর্জন করেছে। এ কারণে এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। 

জেলা প্রশাসক আরও বলেন, আমের সুনাম অক্ষুণ্ন রাখতে চাষি ও বায়ারদের ফরমালিন ব্যবহার না করে নিরাপদ ও বিষ মুক্তভাবেই চাষাবাদ এবং বাজারজাত করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের আগে হিমসাগর আমের বাগান ঘুরে দেখেন জেলা প্রশাসক। পরবর্তীতে আম কেটে পরীক্ষা করে চাষি ও বায়ারদের বাজারজাতকরণের অনুমতি দেন।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন-উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা, কলারোয়া থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাসির উদ্দীন মৃধা, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জেলা মার্কেটিং অফিসার এসএম আব্দুল্লাহ, এনডিসি মহিউদ্দিন, অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট বাপ্পা দত্ত রনি, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সুলতানা জাহান, কেরেলকাতা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোরশেদ আলী ভিপিসহ সলিডারিডাড নেটওয়ার্ক এশিয়া উত্তরণ সফল প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও আমচাষিরা।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত