মনিরামপুরে প্রশংসাপত্র দিতে টাকা নেওয়ার অভিযোগ প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে

মনিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৭ জুন ২০২৪, ১৪: ২২
আপডেট : ০৭ জুন ২০২৪, ১৫: ১০

যশোরের মনিরামপুরে টেংরামারী সম্মিলনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রশংসাপত্র দিতে টাকা নিচ্ছেন প্রধান শিক্ষক। সদ্য এসএসসি পাস করে কলেজে ভর্তিইচ্ছু শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রশংসাপত্র দেওয়ার নামে ৩০০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে। নির্ধারিত টাকা না দিলে দেওয়া হচ্ছে না প্রশংসাপত্র—বলেন অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা। 

অফিস সহকারী শুকুর আলী ও গার্ড নাজমুল হাসান নয়নের মাধ্যমে এই টাকা নিচ্ছেন প্রধান শিক্ষক প্রভাষ চন্দ্র। এমনকি প্রধান শিক্ষক ৩০০ টাকা করে নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। 

এদিকে অনেক শিক্ষার্থী এ নিয়ে নিজের ফেসবুক পেজে স্ট্যাটাস দিচ্ছে। সুদীপ্ত মণ্ডল নামে এক শিক্ষার্থী নিজের ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়, ‘স্কুলে প্রশংসাপত্র আনতে গিয়ে জানতে পারি, আমার চরিত্রের দাম ৩০০ টাকা।’ 

জয়নাল আবেদীন নামে এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, ‘আমার ছেলে টেংরামারী মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ২০২৪ সালে মানবিক বিভাগে এসএসসি পাস করেছে। ছেলেকে কলেজে ভর্তি করাব। এ জন্য বিদ্যালয় থেকে প্রশংসাপাত্র ও ট্রান্সক্রিপ্ট লাগবে। শিক্ষকেরা ৩০০ টাকা দাবি করেছেন। আমি সম্মানসূচক ১০০ টাকা দিতে চেয়েছি। কিন্তু আমার ছেলেকে ৩০০ টাকা দিয়েই প্রশংসাপত্র আনতে হয়েছে।’ 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই বিদ্যালয় থেকে চলতি বছর ৪০ জন শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ৩৮ জন পাস করেছে। পাস করা শিক্ষার্থীরা অনেকে কলেজে ভর্তি হওয়ার জন্য বিদ্যালয় থেকে প্রশংসাপত্র ও ট্রান্সক্রিপ্ট আনতে গেছে। বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী শুকুর আলী তাদের কাছে ৩০০ টাকা দাবি করেন। দাবি করা টাকা গার্ড নয়নের হাতে দিয়ে প্রশংসাপত্র আনতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। 

নাজমুল হাসান নয়ন বলেন, ‘অফিস সহকারী শুকুর আলী ব্যস্ত থাকায় টাকা তোলার দায়িত্ব আমাকে দিয়েছে। এ পর্যন্ত ২৪ জন শিক্ষার্থী প্রশংসাপত্র নিয়েছে। তার মধ্যে ২২ জন ৩০০ টাকা করে দিয়েছে। একজন দিয়েছে ১৫০ টাকা। একজন কোনো টাকা দেয়নি। যে টাকা উঠেছে, সবটাই হিসাব করে শুকুর আলীর কাছে জমা দিয়েছি।’ 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শুকুর আলী বলেন, ‘আমি কিছু বলতে পারব না। প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলেন। আমাদের চাকরি করতে হয়।’ 

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রভাষ চন্দ্র বলেন, ‘আমরা ট্রান্সক্রিপ্ট বাবদ কোনো টাকা নিচ্ছি না। প্রশংসাপত্রের জন্য ৩০০ করে টাকা নিচ্ছি।’ 
 
প্রশংসাপত্রের ৩০০ টাকা সরকারনির্ধারিত কি না, জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘এটা সরকার নির্ধারণ করে দেয়নি। আমরা নিচ্ছি।’ 
 
টাকা নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক প্রভাষ চন্দ্র বলেন, ‘বিদ্যালয়ে ফ্যান ও বিদ্যুৎ বিল আছে। এসব কারণে টাকা নেওয়া হচ্ছে।’

যেসব শিক্ষার্থী প্রশংসাপত্র নিচ্ছে, তারা তো আর এই বিদ্যালয়ে পড়বে না। তারা বিদ্যুৎ খরচ বহন করবে কেন—এমন প্রশ্নে প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘বিদ্যালয়ের উন্নয়নে ওদের দায়িত্ব আছে।’ 

এ বিষয়ে জানতে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বিকাশ সরকারকে একাধিকবার মোবাইল ফোনে কলা করা হয়েছে। তিনি কল ধরেননি। 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত