অ্যান্টিভেনম না পেয়ে হাসপাতালে কাতরাচ্ছিলেন সাপুড়ে, এগিয়ে এলেন ছাত্ররা

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি
আপডেট : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৬: ২২
Thumbnail image

চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গার বাসিন্দা মো. মনি। সাপ ধরা তাঁর পেশা। বিষধর সাপ ধরতে গেলে ছোবলে আহত হন তিনি। ছুটে যান সদর হাসপাতালে। সেখানে বাধে বিপত্তি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায় অ্যান্টিভেনম নেই। বিষের যন্ত্রণায় হাসপাতালের বারান্দায় কাতরাতে থাকেন। এ খবর পান স্থানীয় শিক্ষার্থীরা। এগিয়ে যান তাঁরা। জোগাড় করেন অ্যান্টিভেনম, অন্যত্র পাঠান উন্নত চিকিৎসার জন্য। 

গতকাল সোমবার রাতে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে দেখা যায় একদল শিক্ষার্থী সাপুড়ে বাঁচাতে এগিয়ে এসেছেন। অ্যান্টিভেনম খোঁজার জন্য করছেন ছুটোছুটি। 

ত্রিশ বছর বয়সী সাপুড়ে মনি ঢাকা সাভারের আব্দুল বারেকের ছেলে। স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে গত শনিবার আলমডাঙ্গায় ভাড়া বাড়িতে বসবাস শুরু করেন। সোমবার সন্ধ্যায় সাপ শিকারে বের হয়েছিলেন এ দম্পতি। এ সময় একটি বিষধর গোখরো তাঁর বাম হাতে ছোবল দেয়। 
 
শিক্ষার্থীরা জানান, হাসপাতালে অ্যান্টিভেনম ছিল না। চুয়াডাঙ্গা শহরের দুটি ফার্মেসি অ্যান্টিভেনম রাখে। তবে একটিতে নেই, আরেকটি ছিল বন্ধ। বন্ধ থাকা ফার্মেসি দোকানির সঙ্গে যোগাযোগ করে বাসা থেকে নিয়ে আসেন ছাত্ররা। অ্যান্টিভেনম কেনেন তাঁরা। ১০টি অ্যান্টিভেনম এক ডোজ দেওয়া হলে চিকিৎসক জানায়, আইসিইউ সাপোর্ট ও সমপরিমাণ আরেক ডোজ অ্যান্টিভেনম দেওয়া লাগবে। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর পরামর্শ দেন। রাত তখন ১২টা। শিক্ষার্থীরা অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করে তাঁকে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা তাঁরাই করেন। 

সাপুড়ে মনিরের স্ত্রী জামেলা বেগম বলেন, সাপে কামড়ের সঙ্গে সঙ্গে মনির অসুস্থ হয়ে পড়ে। এ সময় স্থানীদের সাহায্যে তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। জরুরি বিভাগের চিকিৎসক দ্রুত সময়ের মধ্যে রোগীর শরীরে বিষের প্রতিষেধক অ্যান্টিভেনম দিতে বলে। হাসপাতালে এটা ছিল না,১৪ হাজার টাকা দাম। টাকা না থাকায় আমি নিরুপায় হয়ে পড়ি। কিছু ছাত্র এসে সাহায্য করে। 

শিক্ষার্থী সাফ্ফাতুল ইসলাম বলেন, ‘হাসপাতালে অ্যান্টিভেনম ইনজেকশন না থাকা ও রোগীর পরিবার দরিদ্র হওয়ায় বাইরে থেকে তা কিনতে পারছিল না। আমরা মানুষের সাহায্যে বিকাশে ও সরাসরি টাকা সংগ্রহ করে ১০টি ইনজেকশনের একটি অ্যান্টিভেনম ডোজ ব্যবস্থা করি। তবে বিষধর সাপের কামড়ের শিকার হওয়ায় তার আইসিইউ সাপোর্টের প্রয়োজন হয়। চিকিৎসক জানান আরও একটি ডোজের প্রয়োজন হতে পারে। কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাকে রেফার্ড করেন। তখন কুষ্টিয়া বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী ও প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তারা হাসপাতালে খোঁজ নেয় এবং সাপুড়ের জন্য আইসিইউসহ পরবর্তী চিকিৎসার দায়িত্ব নেয়।’ 

কুষ্টিয়ার শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ জানান, রাত সাড়ে ১২টার দিকে তাঁকে অ্যাম্বুলেন্স থেকে নামিয়ে কুষ্টিয়া হাসপাতালের ভর্তির পর আইসিইউতে নেওয়া হয়েছে। চিকিৎসক তাঁকে পর্যবেক্ষণ করছেন। 

এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. ওয়াহিদ মাহমুদ রবিন বলেন, সর্বশেষ সরবরাহে থাকা ১৫টি ইনজেকশন রোগীদের দেওয়া হয়েছে। চাহিদা পত্র পাঠানো হয়েছে। এখন হাসপাতালে কোনো অ্যান্টিভেনম সাপ্লাই নেই। রোগীর আইসিইউ সাপোর্টের প্রয়োজন হওয়ায় কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। 

শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ সময় উপস্থিত ছিলেন—সাফ্ফাতুল ইসলাম, ফাহিম উদ্দিন মভিন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, রেজাউল বাশার প্রমুখ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত