জলাবদ্ধতা নিরসনে ৮০ কোটি টাকা জলে, এবার চোখ নতুন প্রকল্পে

জাহিদ হাসান, যশোর
আপডেট : ০৩ আগস্ট ২০২৩, ১৮: ৩৮
Thumbnail image

যশোর পৌরসভার জলাবদ্ধতা নিরসনে ইতিমধ্যে ৮০ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। কিন্তু তাতেও পৌর শহরের এই সংকট দূর করা সম্ভব হয়নি। জলাবদ্ধতা নিরসনের পথ খুঁজতে এবার বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ৪০ কোটি টাকার নতুন প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে।

যশোর পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, যশোর শহরে ২৫২ কিলোমিটার পয়োনিষ্কাশন নালা (ড্রেন) রয়েছে। এর মধ্যে ৫৫ কিলোমিটার আরসিসি, ৬০ কিলোমিটার ইট, ৫ কিলোমিটার পাইপ ও ১৩০ কিলোমিটার কাঁচা নালা রয়েছে। নগর উন্নয়ন প্রকল্পসহ কয়েকটি প্রকল্পের মাধ্যমে গত ১৪ বছরে ৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪০ কিলোমিটার আরসিসি ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু তাতেও জলাবদ্ধতা নিরসন হয়নি।

গত তিন দিন ধরে ভারী ও হালকা বৃষ্টিপাত হচ্ছে যশোরে। বৃষ্টির কারণে শহরের নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। একবার মাঝারি বৃষ্টি হলে জলাবদ্ধতা দূর হতে সময় লাগে দুই-তিন দিন। ভারী বৃষ্টি হলে জলাবদ্ধতা দূর হতে সপ্তাহখানেক লেগে যায়। কয়েক বছর ধরে এভাবেই চলছে।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে শহরে খড়কি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, শাহ আবদুল করিম সড়কের সরকারি মাইকেল মধুসূদন (এম এম) কলেজের দক্ষিণ ফটক থেকে খড়কি মোড় হয়ে পীরবাড়ি, কবরস্থান ও আপন মোড়ে বৃষ্টির পানি জমেছে। ওই এলাকা দিয়ে চলাচলের সময় মাইক্রোবাসের চাকা পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। জুতা হাতে নিয়ে অনেককে হেঁটে চলাচল করতে দেখা যায়।

স্থানীয় বাসিন্দা ও যশোর সরকারি এম এম কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হামিদুল হক শাহিন বলেন, খড়কি এলাকাটা তুলনামূলক নিচু। রাস্তার পাশে পয়োনিষ্কাশনের নালা দিয়ে অন্য এলাকার পানি আসে। ওই পানি বের হতে পারছে না। পানি জমে থাকায় বিটুমিনের আস্তরণ উঠে রাস্তায় বড় বড় খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে।

যশোর পৌরসভা এলাকায় সামান্য বৃষ্টি হলেও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়হামিদুল হক শাহিন আরও বলেন, পৌরসভার কাছে পানি নিষ্কাশন ও সড়ক সংস্কারের দাবি জানানো হয়েছে। কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না। এই অঞ্চলের প্রধান সমস্যা এখন জলাবদ্ধতায় রূপ নিয়েছে। ভারী বৃষ্টি হলে শহরের নিম্নাঞ্চলের রাস্তাসহ আশপাশের এলাকায় পানির ড্রেন উপচে রাস্তার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। রাস্তার পানি সহজেই ড্রেনে না পড়া এবং বিভিন্ন ড্রেনের কাজ অসমাপ্ত থাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

শহরের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সামান্য বৃষ্টি হলেই শহরের অন্তত ১৫টি সড়কে পানি জমে যায়। খড়কি এলাকার শাহ আবদুল করিম সড়কসহ শহরের পিটিআই, নাজির শংকরপুর, খড়কি রূপকথা মোড় থেকে রেললাইন, বেজপাড়া চিরুনি কল, মিশনপাড়া, আবরপুর ক্যান্টনমেন্ট, বিমানবন্দর, ষষ্ঠীতলাপাড়ার বিভিন্ন সড়কে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।

নাগরিক অধিকার আন্দোলন যশোরের সমন্বয়ক মাসুদুজ্জামান মিঠু ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পৌরসভার উন্নয়নে সঠিক পরিকল্পনার অভাবে শহরের জলাবদ্ধতা দূর হচ্ছে না। সঠিক পরিকল্পনার অভাবে উন্নয়নের নামে অপচয় করা হয়েছে। ড্রেনগুলো রাস্তার চেয়ে নিচু হয়ে গেছে। স্থানীয়দের মতামতের পরিপ্রেক্ষিতে এ বিষয়ে করণীয় নির্ধারণ করা হলে তা টেকসই হতো।

যশোর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম শরীফ হাসান বলেন, শহরবাসীর জলাবদ্ধতা দূরীকরণে নানা প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল; সেগুলো বাস্তবায়নও করা হয়েছে। তবে শহরবাসীর অসচেতনতার কারণেও নালার পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। রাস্তা ও নালা সংস্কার এবং নির্মাণের জন্য এমজিএসপি প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।

এত টাকা খরচ করার পরও জলাবদ্ধতা নিরসন না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে পৌরসভার মেয়র হায়দার গণী খান পলাশ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘জলাবদ্ধতা দূরীকরণে আমরা কাজ করছি। মুক্তেশ্বরীর সঙ্গে সংযোগ খাল স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়েছি। ৪০ কোটি টাকার প্রকল্পটি অর্থায়ন করেছে বিশ্বব্যাংক। আগামী ৯ আগস্ট তাদের প্রতিনিধি দল আসছে। দ্রুতই প্রকল্পের কাজ শুরু হলে শহরের জলাবদ্ধতা দূর হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত