পরিত্যক্ত নারিকেল মালা দিয়ে হস্তশিল্পের উপকরণ

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৪ জানুয়ারি ২০২২, ১৬: ৩১
আপডেট : ০৪ জানুয়ারি ২০২২, ১৬: ৪১

চুয়াডাঙ্গায় পরিত্যক্ত নারিকেলের মালা দিয়ে তৈরি হচ্ছে হস্তশিল্পের বিভিন্ন উপকরণ। নারকেলের মালা দিয়ে পাখির বাসা, সাবান দানি, ল্যাম্প সেট, লবণ রাখা পাত্র, শোপিস, গয়না, তৈজসপত্র, ফুলদানি, নৌকা, কলমদানি, হারিকেন, কেটলি, চামচ, কাপসহ প্রায় ২৫০ রকমের পণ্য তৈরি করা হচ্ছে। দেশের বাজারে চাহিদা মিটিয়ে ইউরোপ ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে এসব পণ্য। এতে একদিকে যেমন পরিবেশের সুরক্ষা হচ্ছে তেমনি অন্যদিকে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হচ্ছে বেশ কিছু বেকারের। 

এক সময় নারিকেলের শাঁস তুলে নিয়ে মালাগুলো যত্রতত্র ফেলে দিত সাধারণ মানুষ। বর্ষাকালে মালাগুলোতে পানি জমে মশার বংশ বিস্তার হতো। মশা বিভিন্ন রোগের জীবাণু বহন করে। জমে থাকা নারকেলের মালা এডিস মশা বিস্তারের একটি বড় কারণ। এ মশার কামড়ে মানুষের মৃত্যুও হয়। নারকেলের মালা যত্রতত্র ফেলে না দিয়ে ব্যবহার উপযোগী করা যায়। তাহলে মশার বংশবিস্তার রোধ সম্ভব। এতে ঘর সাজানোর পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্যও রক্ষা হয়।

জানা যায়, চুয়াডাঙ্গায় এক তরুণ উদ্যোক্তা মালা দিয়ে তৈরি হস্তশিল্পের পরিকল্পনার উদ্যোগ নেন। তিনি হলেন সাতগাড়ি পাড়ার বাসিন্দা খালিদ বিন ওয়ালিদ। পড়াশোনা করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে। সেখান থেকে বিএসসি (সম্মান), এমএসসি পাস করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় পরিবেশ রসায়ন বিষয় ছিল তাঁর সবচেয়ে প্রিয় বিষয়। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকেই তাঁর মাথায় চিন্তা আসে পরিবেশ নিয়ে কিছু একটা করার। 

নারিকেলের মালা দিয়ে তৈরি হস্তশিল্পসেই ভাবনা থেকে খালিদের পরিবেশবান্ধব পণ্য নিয়ে কাজ করা শুরু হয়। তিনি সাতগাড়ি এলাকায় তৈরি করেন বড় একটি কারখানা। হস্তশিল্পের পণ্য তৈরির জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার শংকরচন্দ্র গ্রামের কাঠমিস্ত্রি আলামিন হোসেনকে প্রস্তাব দেন। কারণ আলামিন হোসেন ছিলেন একজন দক্ষ কারিগর। বরিশাল বিভাগে আলামিন হোসেনকে নিয়ে যান মালা দিয়ে তৈরি জিনিসপত্রের কাজ দেখানোর জন্য। সেখান থেকে তারা কাজের প্রাথমিক ধারণা নেন। এরপর ইউটিউবে বিভিন্ন ধরনের হস্ত শিল্পের কাজ দেখেন। 

এ বিষয়ে কারখানা ম্যানেজার সবুজ সাবিদ বলেন, 'বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা কারখানায় এসে আমাদের উৎপাদিত পণ্য কিনে নিয়ে যান। অনেকে আবার অনলাইনের মাধ্যমে ক্রয়ও করেন এই মালা। ফলে এখন মালার তৈরি জিনিসের চাহিদাও অনেক বেশি।' 

এ বিষয়ে কারিগর আলামিন হোসেন বলেন, 'মালিকের সঙ্গে বরিশাল গিয়ে কারিগরদের কাজ দেখি। এরপর ইউটিউব দেখে পণ্য বানায়। এতে ১০ হাজার টাকার যে বেতন পায় তা দিয়ে ভালোভাবে সংসার চলে যাচ্ছে।' 

রোদো হ্যান্ডিক্র্যাফটসের পরিচালক খালিদ বিন ওয়ালিদ বলেন, 'পরিবেশ রক্ষায় এ উদ্যোগ। নারিকেলের মালা দিয়ে তৈরি বিভিন্ন পণ্য দেশে ও বিদেশে বিক্রি হচ্ছে।  এতে অনেক বেকারের কর্মসংস্থানের হচ্ছে। এ ছাড়া মালা দিয়ে তৈরি উপকরণগুলো দেখতে অনেক সুন্দর হয়। প্রথমে লোকসান দিয়ে চালু করি এ কারখানা। বর্তমানে এ মালার চাহিদা অনেক বেশি। তাই নারিকেলের মালা দিয়ে তৈরি পণ্যের বিক্রি ও ভালো।' 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত