৬ বছর ধরে বিদ্যালয়ে যান না যশোর সদর উপজেলা দেয়াড়া ইউনিয়নের চান্দুটিয়া সি এ জি এম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের হিন্দু ধর্মের শিক্ষক লতিকা রানী। তারপরও নিয়মিত বেতন-ভাতা তুলছেন বলে অভিযোগই উঠেছে। দীর্ঘ ছয় বছর ঘটনাটি চলমান থাকলেও তা জানেন না উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তারা। 

একাধিক সূত্রে জানা যায়, চান্দুটিয়া সি এ জি এম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ২০০২ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর হিন্দু ধর্মীয় শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন লতিকা রাণী। হঠাৎ তিনি প্রতিষ্ঠান থেকে ছুটি না নিয়ে ২০১৫ সাল থেকে বিদ্যালয়ে আসা বন্ধ করে দেন। স্কুলে না গিয়েও এখন পর্যন্ত মোট ছয় বছর ধরে নিয়মিত বেতন উত্তোলন করে যাচ্ছেন তিনি। 
 
সরকারি নীতিমালায় দেখা গেছে, যদি কোন শিক্ষক অসুস্থ থাকেন তাহলে ডাক্তারি চিকিৎসার প্রমাণপত্র সহ তিনি ৭ দিনের জন্য ছুটি গ্রহণ করতে পারবেন। এ সময়ে তিনি সুস্থ না হলে পুরো বেতনে ১ মাসের ছুটি নিতে পারবেন। তাতেও তিনি সুস্থ না হলে অর্ধ বেতনে ৩ মাসের ছুটি নিতে পারবেন। এরপর যদি সুস্থ না হন তাহলে বিনা বেতনে ছুটি কাটাতে পারবেন ৩ বছরের জন্য। যার একটিও না মেনে পুরো বেতন ভাতা উত্তোলন করে যাচ্ছেন লতিকা রানী। যা নিয়ে গোটা এলাকায় রীতিমতো হইচই পড়েছে। 

এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এম এ মান্নান জানান, অসুস্থতার অজুহাতে লতিকা রানী দীর্ঘ ছয় বছর বিদ্যালয়ে না এসেও পুরো বেতন ভাতা উত্তোলন করে আসার ঘটনায় তাঁকে তিন দফা শোকজ করা হয়েছে। যার একটিরও সঠিক জবাব দিতে পারেননি শিক্ষিকা লতিকা রানী। বিষয়টি উপজেলা মাধ্যমিক বিদ্যালয় কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগকে মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে। তবে দ্রুতই বিষয়টি লিখিতভাবে জানানো হবে। 

বিদ্যালয়ের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান বলেন, সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণের পর বিষয়টি আমার নজরে এসেছে। দ্রুতই ম্যানেজিং কমিটির সভা ডেকে ওই শিক্ষিকার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

অভিযুক্ত শিক্ষিকা লতিকা রানী দাবি করে বলেন, আমি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সবাইকে মৌখিকভাবে জানিয়ে ছুটিতে আছি। তবে লিখিতভাবে কোন ছুটি নেইনি। 

বেতন উত্তোলনের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। আমার স্বামী বিষয়টি জানেন। 

লতিকা রানীর স্বামী পঙ্কজ কুমার বলেন, আমার স্ত্রী অসুস্থ হলে তাঁর ক্লাস উক্ত বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষককে দিয়ে করিয়ে নিতেন তিনি। যার বিনিময়ে তাঁকে কিছু টাকাও দিতে হয়। তবে বেতন ভাতা উত্তোলনের বিষয়ে জানাতে চাইলে বিষয়টি এড়িয়ে যান তিনি। 

এ ব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিল না। আপনাদের মাধ্যমে জানতে পারলাম। তদন্ত করে সত্যতা পেলে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে নিয়মমাফিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তা ছাড়া এত দিনেও কমিটি বিষয়টি তাঁদের কেনো জানায়নি সেটিও তদন্ত করা হবে। 

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা একেএম গোলাম আযম বলেন, বিষয়টি তদন্তের জন্য উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। রিপোর্ট দেওয়ার পরই এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।