গ্রুপিংয়ে স্থবির কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের নীল দল, চাপা ক্ষোভ

মো. ফাহাদ বিন সাঈদ, জাককানইবি
প্রকাশ : ১৪ মার্চ ২০২৩, ২২: ৪৬

সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সমন্বয়হীনতা জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগঠন বঙ্গবন্ধু-নীল দলের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। বঙ্গবন্ধুর জন্ম-মৃত্যু দিবস থেকে শুরু করে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ কোনো দিবসেও নেই তেমন কোনো আয়োজন। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কার্যনির্বাহী পরিষদের নির্বাচনের সময় পেরিয়ে গেলেও নেওয়া হয়নি কোনো পদক্ষেপ।

বিশ্ববিদ্যালয়টিতে নীল দলের সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছে ২০২১ সালের ২৪ মার্চ। এই নির্বাচনে দুই বছর মেয়াদের জন্য সভাপতি হিসেবে অধ্যাপক ড. উজ্জ্বল কুমার প্রধান ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ড. সেলিম আল মামুন নির্বাচিত হন। এ ছাড়াও বিভিন্ন পদে সব মিলিয়ে ১৫ জন শিক্ষক নির্বাচিত হন। তবে নির্দিষ্ট দুই বছর পেরিয়ে গেলেও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের শিক্ষকদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে কোনো অনুষ্ঠান করতে পারেনি এই কমিটি।

এ নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে চরম অসন্তোষ ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। শিক্ষকদের অভিযোগ, জাতীয় দিবসগুলোতে দায়সারাভাবে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা ও মাঝেমধ্যে নিজেদের লোকজন নিয়ে নির্বাহী পরিষদের সভা করা ছাড়া কিছুই করেনি বর্তমান কমিটি।

সংগঠনের গঠনতন্ত্র থেকে জানা যায়, চলতি বছরের মার্চ মাসের ১০ তারিখের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং ৩১ মার্চের মধ্যেই দায়িত্ব হস্তান্তর করতে হবে (অনুচ্ছেদ-৮)। তবে নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে গেলেও নির্বাচন নিয়ে কোনো আলোচনা নেই সংগঠনটির নেতাদের। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ শিক্ষকেরা।

এ ছাড়াও বলা আছে, কার্যনির্বাহী পরিষদ প্রতি দুই মাসে অন্তত একটি সভা আহ্বান করে শিক্ষক সমাজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ ও পরিস্থিতি মূল্যায়নপূর্বক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন (অনুচ্ছেদ ১১.১)। যেটি নিয়মিতভাবে করা হয় না বলে জানা গেছে। এ ছাড়াও গত দুই বছরে একটিও সাধারণ সভা করেনি সংগঠনটি। অথচ গঠনতন্ত্রে প্রতি তিন মাসে একটি সাধারণ সভা করার কথা বলা আছে।

ক্ষুব্ধ শিক্ষকদের অভিযোগ, গ্রুপিং রাজনীতির কারণে স্থবির হয়ে আছে নীল দলের কার্যক্রম। বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক এবং নীলদলের কার্যনির্বাহী পরিষদের সাবেক সদস্য আসিফ ইকবাল আরিফ বলেন, ‘বর্তমান কমিটি গত দুই বছরে একটিও সাধারণ সভা আয়োজন করতে পারেনি। আওয়ামী লীগের অধীনে দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে, তখন মুজিব বর্ষের মতো গুরুত্বপূর্ণ উদ্‌যাপনের মতো ব্যাপারেও এই কমিটি কোনো কার্যক্রম হাতে নেয়নি। যেটি আমাদের জন্য আসলেই হতাশাজনক। শুধু নিয়মরক্ষার জন্য বিশেষ দিবসগুলোতে পুষ্পস্তবক অর্পণ হয়েছে। সেখানেও গ্রুপভিত্তিক কিছু শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর নামে প্রতিষ্ঠিত একটি সংগঠনের এমন আচরণ সত্যিই হতাশাজনক।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিভিন্ন মাধ্যমে একাধিকবার বলেও নেতৃবৃন্দের নিকট থেকে কোনো সাড়া মেলেনি। এমনকি শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নের মাধ্যমে প্রার্থিতা চেয়ে আমি চিঠিও দিয়েছিলাম। তারও জবাব পাইনি। শুধুমাত্র ব্যক্তিস্বার্থকে রক্ষা করার জন্য বর্তমান নেতৃত্ব মূলত ১৮০ জনেরও অধিক শিক্ষকের মতামতকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছেন তারা। এমনকি সর্বশেষ নিয়োগকৃত সম্মানিত শিক্ষক মন্ডলীদেরকে দলীয় সদস্য করার ব্যাপারে নেতৃত্ব পর্যায়ে থাকাদের থেকে কোনো পদক্ষেপ দেখিনি।’

এ ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে নীল দল কর্তৃক মনোনীত প্রার্থী দেওয়ার কথা গঠনতন্ত্রে থাকলেও তাঁর কোনো বাস্তবতা লক্ষ্য করা যায়নি। শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে লড়াই করা দুইটি প্যানেলের সবাই ‘নীলদল অনুসারী শিক্ষক’ বলে চালিয়েছে। উজ্জ্বল-সেলিমের নেতৃত্বে এই কার্যনির্বাহী কমিটি তাদের দুই বছর সময়ে নতুন কোনো সদস্যও যুক্ত করতে পারেনি।

নীল দলের স্থবিরতা নিয়ে বর্তমান কমিটির সহসভাপতি ড. সৈয়দ মামুন রেজা বলেন, ‘গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সাধারণ সভা আহ্বান করে থাকে সাধারণ সম্পাদক। আমি ব্যক্তিগতভাবে একাধিকবার বিভিন্ন সময়ে তাঁকে সাধারণ সভা আহ্বান করতে বলেছি। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। প্রায় দু শ জন শিক্ষকের একটি বৃহৎ সংগঠন হিসেবে দলীয় স্বার্থ বিবেচনা করে হলেও ঐক্যবদ্ধভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা উচিত ছিল। দলমত থাকলেও ঐক্যবদ্ধভাবে কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত ছিল। সবচেয়ে বড় ভূমিকা থাকা দরকার ছিল সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের। তাদের ভেতরে হয়তো কোনো দূরত্ব আছে।’

অভিযোগের বিষয়ে বর্তমান কমিটির সভাপতি ড. উজ্জ্বল কুমার প্রধান বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই। সাধারণ সম্পাদকের কাছে জিজ্ঞেস করেন।’ 

নির্বাচন বিষয়ে সিদ্ধান্ত কী—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এসব সিদ্ধান্ত সাধারণ সভায় হবে।’ সাধারণ সভা কবে হবে—এ প্রশ্নের জবাবে ড. উজ্জ্বল বলেন, ‘আমি গত ফেব্রুয়ারি মাসেই সাধারণ সম্পাদককে সাধারণ সভা আহ্বান করতে বলেছি।’

এসব বিষয়ে জানতে সাধারণ সম্পাদক ড. সেলিম আল মামুনের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হয়। নীল দলের বিষয়ে প্রশ্ন শোনামাত্রই তিনি ‘সভাপতির কাছে যান’ বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আবু সাঈদকে ৪–৫ ঘণ্টা পরে হাসপাতালে নেওয়া হয়—শেখ হাসিনার দাবির সত্যতা কতটুকু

মেট্রোরেল থেকে আমলাদের বিদায়, অগ্রাধিকার প্রকৌশলীদের

সরকারি কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব জমা দেওয়ার সময় বাড়ল

শিক্ষকের নতুন ২০ হাজার পদ, প্রাথমিকে আসছে বড় পরিবর্তন

ব্যাংক খাতে নতুন নীতিমালা: আটকে গেল ২৫৮ কর্মকর্তার জিএম পদে পদোন্নতি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত