Ajker Patrika

ময়মনসিংহে আজহারীর মাহফিল আজ, ভোরেই কানায় কানায় পূর্ণ সার্কিট হাউস

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
মিজানুর রহমান আজহারী। ছবি: সংগৃহীত
মিজানুর রহমান আজহারী। ছবি: সংগৃহীত

‘ময়মনসিংহ বিভাগের বন্ধুরা, ইনশাআল্লাহ আগামীকাল থাকছি—ময়মনসিংহের ঐতিহাসিক সার্কিট হাউস মাঠে, আল ইসলাম ট্রাস্টের উদ্যোগে আয়োজিত তাফসিরুল কুরআন মাহফিলে। আসুন, দেখা হবে, কথা হবে।’

জনপ্রিয় ইসলামিক স্কলার ড. মিজানুর রহমান আজহারী গতকাল শুক্রবার ময়মনসিংহের সার্কিট হাউস মাঠে তাফসিরুল কোরআন মাহফিল উপলক্ষে এই স্ট্যাটাস দিয়েছেন।

এদিকে আজ শনিবার সকাল থেকেই মাহফিলে মুসল্লিদের ঢল নেমেছে। সকাল ৭টার মধ্যেই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় ঐতিহাসিক সার্কিট হাউস মাঠের গোটা মাহফিল এলাকা। তাফসিরুল কোরআন মাহফিলে বাদ জোহর বয়ান করবেন ড. মিজানুর রহমান আজহারী।

মাহফিলকে ঘিরে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে আয়োজক কমিটি ও প্রশাসন। ময়মনসিংহ জেলা পুলিশের অসংখ্য বিশেষ দল মাহফিলের নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে। এ ছাড়া র‍্যাব, সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা মাঠে তৎপর রয়েছেন।

এ ব্যাপারে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম খান বলেন, এত বিশাল জমায়েতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব। এ জন্য পুলিশের পাশাপাশি অন্যান্য বাহিনীও কাজ করছে।

তাফসির মাহফিলে মিজানুর রহমান আজহারীর পাশাপাশি আরও কয়েকজন জনপ্রিয় ইসলামি বক্তা আলোচনা করবেন। মাহফিল কমিটি জানায়, মাওলানা আজহারী দুপুরের আগেই হেলিকপ্টারযোগে ময়মনসিংহে পৌঁছাবেন। আল ইসলাম ট্রাস্টের আয়োজনে তাফসিরুল কোরআন মাহফিলে সভাপতিত্ব করবেন শায়খুল হাদিস হাফেজ মাওলানা নুরুল ইসলাম।

আজ শনিবার ভোরে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা দলে দলে মাহফিলের ময়দানে আসছেন। ময়মনসিংহ ছাড়াও আশপাশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে মুসল্লিরা এসেছেন। কেউ একা, কেউ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে, কেউ বন্ধুদের নিয়ে, আবার কেউ পরিচিতজনদের সঙ্গে করে নিয়ে এসেছেন।

নেত্রকোনা থেকে এসেছেন আশরাফুল আলম। তিনি বলেন, ‘আমার পছন্দের হুজুর মিজানুর রহমান আজহারী। তাঁর অসংখ্য ওয়াজ ইউটিউবে শুনেছি। সকালে এলে মঞ্চের কাছাকাছি জায়গা পাওয়া সম্ভব না। তাই তাঁকে সরাসরি দেখতে গতকাল বিকেলে এখানে চলে এসেছি।’

জামালপুর সদর থেকে এসেছেন মাজহারুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘মধুর কণ্ঠে বয়ান করেন আজহারী হুজুর। তাঁকে সরাসরি দেখে বয়ান কখনো শুনতে পারিনি। খুব ইচ্ছে তাঁকে সরাসরি দেখে বয়ান শোনার। সম্প্রতি ঢাকার নবাবগঞ্জে হুজুর বয়ান করবে জানতে পেরে সেখানে যেতে চেয়েছিলাম। শেষ পর্যন্ত সেখানে যেতে পারিনি। হুজুরকে দেখে বয়ান শোনার ইচ্ছে ময়মনসিংহে আর মিস করতে চাই না। তাই গত রাতেই মাঠে চলে এসেছি।’

ময়মনসিংহ সার্কিট হাউস মুসল্লিতে কানায় কানায় পূর্ণ। ছবি: সংগৃহীত
ময়মনসিংহ সার্কিট হাউস মুসল্লিতে কানায় কানায় পূর্ণ। ছবি: সংগৃহীত

আয়োজকেরা জানিয়েছেন, মাহফিলে ১০ থেকে ১৫ লাখ মানুষের সমাগম ঘটতে পারে। ২২টি এলইডি স্ক্রিনের মাধ্যমে বয়ান প্রচারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া সার্বক্ষণিক বিদ্যুতের জন্য রয়েছে জেনারেটর। পাশাপাশি ফ্রি ওয়াইফাই, স্যানিটেশন, পর্যাপ্ত সুপেয় পানি, চার শতাধিক অজুখানার ব্যবস্থা, ইন্টারনেট সচল রাখার জন্য বাংলালিংক টাওয়ার, রয়েছে স্বেচ্ছাসেবক দল, রয়েছে তিনটি মেডিকেল ক্যাম্প।

এবার মাহফিলে বিপুলসংখ্যক মানুষ উপস্থিতির কারণে এদিন শহরে যানবাহনের চলাচলেও কিছুটা নিয়ন্ত্রণ থাকবে। শম্ভুগঞ্জ ব্রিজের আগেই বড় যানবাহন আটকে দেওয়া হবে। এ ছাড়া নগরীর মাসকান্দা, আকুয়া বাইপাস ও রহমতপুর বাইপাসে আটকে দেওয়া হবে বড় যানবাহন। তবে শহরের অবস্থা অনুযায়ী ইজিবাইক (অটো) চলাচল করবে। আজ সকালে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা হবে ময়মনসিংহে। সে ক্ষেত্রে পরীক্ষায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের জন্য শহরে চলাচলে কোনো বাধা থাকবে না। তবে মূল শহরে যানজটের আশঙ্কায় সবাইকে বাইপাস ব্যবহারের অনুরোধ জানানো হয়েছে।

আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক কামরুল হাসান মিলন বলেন, ড. মিজানুর রহমান আজহারী একজন জনপ্রিয় ব্যক্তি। তাঁকে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ পছন্দ করেন। বয়ান শুনতে আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করে অসংখ্য ধর্মপ্রাণ মুসল্লি। এরই মধ্যে দেখতে পাচ্ছি মানুষের ঢল নেমেছে। ওয়াজ শুরুর আগপর্যন্ত সময়ে নিশ্চয়ই সমাগম আরও বহুগুণ বাড়বে। আয়োজনের সব ধরনের প্রস্তুতি শুক্রবার বিকেলেই শেষ হয়েছে।

কামরুল হাসান মিলন আরও বলেন, ‘মিজানুর রহমান আজহারী বাংলাদেশের জাতীয় সম্পদ। যেহেতু লাখ লাখ মানুষ উপস্থিত থাকবেন, সেহেতু মানুষের কিছু অসুবিধা হতে পারে। ইসলামের স্বার্থে নগরবাসী এই অসুবিধা মেনে নেবেন বলে আশা করছি।’

আল ইসলাম ট্রাস্টের সদস্য মাহবুব রশিদ ফরাজি বলেন, ‘মাহফিলে যেন মানুষ আসে, সে জন্য যথেষ্ট প্রচার চালানো হয়েছে। এটি ময়মনসিংহের বিভাগীয় মাহফিল। তবে অনেকে বিভাগের বাইরে থেকেও আসছেন।’

এ বিষয়ে ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার কাজী আখতার উল আলম বলেন, ‘মাহফিলে অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ঘটার আশঙ্কা নেই। তবু অগণিত মানুষের নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত