ময়মনসিংহে অনিয়মের মাধ্যমে বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগের অভিযোগ

মহিউদ্দিন রানা, ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) 
প্রকাশ : ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৩: ১৪
আপডেট : ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৩: ৫৮

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে একটি স্কুলে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে এক ইউপি চেয়ারম্যানের চাচাতো বোনকে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি গোপন রেখে ১২ লাখ টাকার বিনিময়ে গভর্নিং বডির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক মিলে এ কাজ করেছেন বলে দাবি স্থানীয় জনসাধারণের। 

স্কুলটির নাম খালবলা বাজার বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। এর গভর্নিং বডির সভাপতি মো. খায়রুল ইসলাম ও প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল আলম। 

এদিকে শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম ও দুর্নীতির তদন্ত করে এমপিও আবেদন স্থগিত করার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। শুধু তাই নয়, এলাকাবাসীর পক্ষে ৫০ জন স্বাক্ষরিত একটি অনুলিপি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে পাঠিয়েছেন তাঁরা। 

অনুলিপি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আরিফুল ইসলাম প্রিন্স বলেন, বিষয়টি তদন্তের জন্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া অনুলিপির কপি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। 

স্থানীয়দের করা অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি খালবলা বাজার বালিকা উচ্চবিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বই বিতরণ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। সেদিন প্রতিষ্ঠানের সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে যোগ দেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান জুবের আলম কবীর রুপকের চাচাতো বোন মাহমুদা আক্তার। কোনো ধরনের নিয়োগ প্রক্রিয়া ছাড়াই কীভাবে তিনি যোগদান করলেন, বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়ভাবে কানাঘুষা শুরু হয়। পরে খোঁজ-খবর নিয়ে বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ সূত্রেই জানতে পারেন ১২ লাখ টাকা উৎকোচ নেওয়ার বিষয়টি।

স্থানীয়দের দাবি, পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সেটি গোপন রাখেন কর্তৃপক্ষ। এরপর ১২ লাখ টাকার বিনিময়ে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক মিলে ওই নারীকে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ দেন। শুধু তাই নয়, পরবর্তী সময়ে যেন এ বিষয়ে কথা না ওঠে, সে জন্য নিজেদের পছন্দের প্রার্থী ছাড়াও সভাপতি, প্রধান শিক্ষক ও নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকের নিকটাত্মীয় চারজন মাহমুদা আক্তারের সঙ্গে নামমাত্র পরীক্ষায় অংশ নেন। 

অভিযোগকারী ও স্থানীয় বাসিন্দা মো. মুন্তাজ আলী, আব্দুর রশিদ, মো. সুলতান ভূঁইয়াসহ একাধিক ব্যক্তি বলেন, ‘কথা নাই, বার্তা নাই, হুট করে শুনি চেয়ারম্যানের চাচাতো বোন বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ পেয়েছে। এরপর গোপন সূত্রে জানতে পারলাম, ওই পদের জন্য বিদ্যালয়ের গভর্নিং বডির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক দুজনে মিলে ১২ লাখ টাকা বাণিজ্য করেছে। এর সুষ্ঠু তদন্ত চাই।’ 

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে খালবলা বাজার বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ পাওয়া মাহমুদা আক্তার বলেন, ‘আমি কোনো টাকা-পয়সা দিইনি। পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে আবেদন করি। এরপর যথারীতি নিয়মের ভিত্তিতেই আমার নিয়োগ হয়েছে।’ 
 
তিনি আরও বলেন, ‘আমি নেত্রকোনা সরকারি কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে নান্দাইল আউলিয়াপাড়া দাখিল মাদ্রাসা সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী শিক্ষক পদে কর্মরত ছিলাম।’ 

আঠারবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জুবের আলম কবীর রুপক বলেন, ‘নিয়োগের বিষয়ে আমি অবগত আছি। আমি বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিসহ সংশ্লিষ্টকে সুপারিশ করেছিলাম, আমার চাচাতো বোন যদি যোগ্য হয়, তাঁরা যেন বিষয়টি বিবেচনায় রাখে। এরপর যোগ্যতার ভিত্তিতেই তাঁর নিয়োগ হয়েছে।’ এ ছাড়া কোনো ধরনের আর্থিক লেনদেন হয়নি বলে দাবি করেন এই ইউপি চেয়ারম্যান। 

খালবলা বাজার বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল আলম বলেন, ‘নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি গোপন রেখে নিয়োগ দেওয়ার তো কোনো সুযোগ নেই। 
এ ধরনের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং বানোয়াট। বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি, সদস্যবৃন্দ ও শিক্ষকদের সম্মতিক্রমে ২০২৩ সালের মার্চের ৬ তারিখ সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে ‘দৈনিক ভোরের ডাক’ এবং ‘অদম্য বাংলা’ পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল। সেখানে পাঁচজন আবেদন করেছিল। তাদের মধ্যে কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে, লিখিত পরীক্ষা এবং ভাইভার মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়।’ 

খালবলা বাজার বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের গভর্নিং বডির সভাপতি মো. খায়রুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা সরকারি নিয়মকানুন মেনেই বিদ্যালয়ে নিয়োগ দিয়েছি। কোনো ধরনের আর্থিক লেনদেন হয়নি। আমাকে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য এ রকম একটি মিথ্যা ও বানোয়াট বিষয় আমার ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে।’ 

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি গোপন রেখে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগের বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’ 

ময়মনসিংহ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোহছিনা খাতুন বলেন, ‘অভিযোগের কপিটি এখনো হাতে পাইনি। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে।’ 

এ প্রসঙ্গে ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অভিযোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। সত্যতা মিললে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত