প্রতিবন্ধী কার্ড হলেও প্রায় দুই বছর ধরে ভাতা পাচ্ছিলেন না দিল নাহার (৩০)। ভাতা কোথায় যায়, কার কাছে যায় এ নিয়ে অনেক দপ্তরে দৌড়াদৌড়ি করেও কোনো কুল কিনারা করতে পারেননি।

অবশেষে সমাজসেবা অফিসে গিয়ে জানতে পারেন, ভাতা তাঁর নিয়মিতই হচ্ছে। তবে সেই ভাতা চলে যায় অন্য একটি মোবাইল নম্বরে। সেই নম্বরের সূত্র ধরে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, স্থানীয় ইউপি সদস্যের ভাইয়ের নম্বর এটি। পরে বহু দেনদরবার করে একজন সাংবাদিকের সহায়তায় ভাতা ফিরে পেলেন প্রতিবন্ধী দিল নাহার। প্রায় দুই বছরের ভাতা ১৫ হাজার ৭৫০ টাকা একত্রে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা তিনি। 

প্রতিবন্ধী দিল নাহার নেত্রকোনা জেলার বারহাট্টা উপজেলার চিরাম ইউনিয়নের নৈহাটী গ্রামের আজমল হোসেনের মেয়ে। 

আজ রোববার দুপুরে উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়ে কর্মকর্তাদের সামনে প্রায় দুই বছরের ভাতা দিল নাহারকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। এ সময় দিল নাহারের ভাবি শাহানা আক্তার, এলজিইডি সার্ভেয়ার মো. দেলোয়ারসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। 

দিল নাহারের ভাবি নৈহাটী গ্রামের শাহানা আক্তার বলেন, ‘দিল নাহার বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী। সেই কারণে তাঁর বিয়ে হয়নি। বাবার বাড়িতেই থাকেন। দুই বছর আগে তৎকালীন ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলাম দিল নাহারকে প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড করে দেন। কিন্তু কোনো দিনই ভাতা পাননি দিল নাহার। অনেক ঘোরাঘুরি করেও আমরা এর কোনো কুল কিনারা করতে পারছিলাম না। সম্প্রতি স্থানীয় সমাজসেবা অফিসে গিয়ে জানতে পারি নিয়মিত ভাতা পাচ্ছেন দিল নাহার। তবে সেই ভাতা অন্য একটি মোবাইল নম্বরে চলে যাচ্ছে। মোবাইল নম্বর যাচাই করে দেখা যায় এটি স্থানীয় ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলামের চাচাতো ভাই রুহুল আমিনের। পরে এ নিয়ে গ্রাম্য মাতবরেরা দেনদরবার করলে রুহুল আমিন টাকা ফেরত দেন। মোবাইল নম্বরের ব্যক্তিকে খুঁজে বের করে টাকা আদায়ের দেনদরবারসহ সবকিছুতে সহায়তা করেন সাংবাদিক মেহেদি ভাই। তাঁর সাহায্য ছাড়া হয়তো এ টাকা আমরা পেতাম না। তাঁর প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।’

ভাতার টাকা ফেরত দেওয়ার পর সাবেক মেম্বারের চাচাতো ভাই রুহুল আমিন বলেন, ‘আমার মোবাইল নম্বরে কীভাবে টাকা চলে গেছে আমি জানতাম না। টাকা আমার মোবাইলে গেলেও সেটা তুলত অন্য কেউ। আজ সবার সামনে বিগত সময়ে আমার মোবাইলে যাওয়া সমস্ত টাকা ফেরত দিয়েছি।’

দিল বাহারকে ভাতা পেতে সহায়তাকারী সাংবাদিক মেহেদি আকন্দ বলেন, ‘কিছুদিন আগে বারহাট্টা সমাজসেবা অফিসে এসে ওই দুই নারী ভাতা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করছিলেন। তখন এ কথা শুনে আমি এগিয়ে গিয়ে তাঁদের কথা শুনি। সমাজসেবা কর্মকর্তার সহায়তায় দিল নাহারের অ্যাকাউন্ট যাচাই করে দেখি তাঁর ভাতা যাচ্ছে অন্য একটি মোবাইল নম্বরে। সেই নম্বর খুঁজে দেখি স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্যর ভাইয়ের। পরে গ্রামে গিয়ে তাঁদের সঙ্গে অনেকবার দেনদরবার করে টাকা ফেরত দিতে বলি। শেষে টাকা ফেরত দিতে বাধ্য হয়। এই কাজ কোনো ভুলে নয়, ইচ্ছে করেই করেছিল।’

বারহাট্টা এলজিইডির সার্ভেয়ার মো. দেলোয়ার বলেন, ‘একজন প্রতিবন্ধী নারী তাঁর ভাতার টাকা ফেরত পেয়েছেন এটা ভেবে ভালো লাগছে। এই ঘটনার আমরা সাক্ষী হতে পেরে আনন্দিত। টাকা ফেরত পেতে যারা সহায়তা করেছেন তাঁদের ধন্যবাদ জানাই। মানুষ মানুষের জন্য হোক।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চিরাম ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিবন্ধী কার্ড আমার সময়েই করা হয়েছে। তবে সমস্যার বিষয়টি তারা আমাকে জানায়নি। তারা নিজেরা দৌড়ঝাঁপ করেছে। সম্প্রতি জেনেছি, দিল নাহারের টাকা অন্য কোথাও চলে যাচ্ছে। এ পর্যন্ত দুইবারে ১১ হাজার টাকা তুলেছে শুনেছি। তবে টাকা দিল নাহারকে দিয়ে দিবে।’

চিরাম ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান মেম্বার ছন্দু তালুকদার বলেন, ‘ভাতার টাকা সাবেক মেম্বারের চাচাতো ভাইয়ের মোবাইলে গিয়েছে এত দিন। সম্প্রতি এ নিয়ে দেনদরবার করে টাকা ফেরত দিবে বলেছে।’