স্ত্রীর মুখ অ্যাসিড দিয়ে ঝলসে দেওয়ার মামলায় স্বামী কারাগারে

নেত্রকোনা প্রতিনিধি
আপডেট : ০৯ জুলাই ২০২৪, ২০: ৪৭
Thumbnail image

নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় স্ত্রী তালাক দেওয়ায় অ্যাসিড ছুড়ে মুখ ঝলসে দেওয়ার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় স্বামী হুমায়ুন কবির বাকিকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে নেত্রকোনা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের (কেন্দুয়া আমলী আদালত) বিচারক শাহরিয়ার সামস্ তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এ দিন আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করেন হুমায়ুন কবির। বিচারক তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান।

কেন্দুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ এনামুল হক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

অভিযুক্ত হুমায়ুন কবির বাকি উপজেলার মাসকা ইউপির মাসকা গ্রামের মৃত জুবেদ আলীর ছেলে। ভুক্তভোগী হাফসা আক্তার একই উপজেলার ব্রাম্মনজাত গ্রামের ফজলুর রহমান খানের মেয়ে হাফসা আক্তার। হাফসা আক্তার গত শনিবার রাতে বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, ১৭ বছর আগে হাফসা আক্তারের সঙ্গে হুমায়ুন কবিরের বিয়ে হয়। বিয়ের পর কিছুদিন ভালো গেলেও স্বামীর শারীরিক অক্ষমতার কারণে তাদের দাম্পত্য জীবনে কলহ শুরু হয়। এইভাবে কেটে যায় প্রায় ১৭ বছর। দেড় মাস ধরে দাম্পত্যকলহের মাত্রা বেড়েছে যায়। ঈদুল আজহার পরদিন হাফসা আক্তার তাঁর বাবার বাড়িতে চলে যান। একপর্যায়ে গত বৃহস্পতিবার কাজী অফিসে গিয়ে স্বামীকে তালাক দেন। এই খবর পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে পরদিন রাতে বাড়িতে গিয়ে হাফসার মুখে অ্যাসিড ছুড়ে মারেন হুমায়ুন। এতে তার মুখের এক পাশ ঝলসে যায়।

পরে স্থানীয়রা তাঁকে উদ্ধার করে কেন্দুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক তাঁকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালে পাঠান।

ভুক্তভোগী হাফসা আক্তার বলেন, ‘বিয়ের পর স্বামীর শারীরিক সমস্যা ধরা পড়ে। ১৭ বছর দাম্পত্যজীবনে সন্তান হয়নি। তাকে বারবার বলার পরে সে চিকিৎসা করে না। উল্টো আমাকে বেধড়ক মারপিট করে। তার সঙ্গেও বাড়ির লোকজনও নির্যাতন করত। এ নিয়ে বেশ কয়েকবার দেনদরবার হয়েছে। চেষ্টা করেও তার সঙ্গে সংসার করতে পারছিলাম না। তার পৈশাচিক আচরণে অতিষ্ঠ হয়ে বৃহস্পতিবার কাজী অফিসের মাধ্যমে তাকে তালাক দিই। এতে সে ক্ষিপ্ত হয়। শুক্রবার রাতে মায়ের সঙ্গে একসঙ্গে খাবার খেতে বসি। এ সময় হুমায়ুন সিরিজ দিয়ে আমার নাকেমুখে অ্যাসিড নিক্ষেপ করে সে পালিয়ে যায়। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।’

ভুক্তভোগী হাফসা আক্তারের খালা প্রীতি খান বলেন, চিকিৎসক নিশ্চিত করেছেন হাফসার মুখে অ্যাসিড ছোড়া হয়েছে। এতে তাঁর মুখের একপাশ ও গলার অনেকটা অংশ ঝলসে গেছে। ঝলসানো মুখ কখনো আগের মতো হবে না। আপাতত সুস্থ হতে আরও কয়েক দিন সময় লাগবে। হাফসা এখনো সেখানে ভর্তি রয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, ‘বিয়ের পর হাফসা জানতে পারে তার স্বামীর শারীরিক সমস্যা রয়েছে। চিকিৎসার জন্য বললেও তিনি কোনো চিকিৎসা নেননি। উল্টো হাফসাকে নির্যাতন করেছে। তবে মেয়েটা ভালো বিধায় ১৭ বছর অপেক্ষা করেছে। আমরা এ ঘটনার যথাযথ বিচার চাই।’

কেন্দুয়া থানার ওসি এনামুল হক বলেন, ঘটনার পরপরই হুমায়ুন কবির এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। আজ আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করলে আদালত হুমায়ুন কবিরের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত