মাদক কাণ্ডে আলোচিত সেই ছাত্রলীগ নেতাকে অব্যাহতি, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক নিযুক্ত

ইসলামপুর (জামালপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৪ জুলাই ২০২৩, ১৮: ৩০
আপডেট : ২৪ জুলাই ২০২৩, ১৯: ৩০

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রাবাসে মাদক বিস্তার, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ নানা অভিযোগে আলোচিত জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আলহাজ মিয়াকে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে জেলা ছাত্রলীগ। একই সঙ্গে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিযুক্ত করাসহ দুজনকে সদস্য পদে সংযুক্ত করা হয়েছে। গতকাল রোববার রাতে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি খাবীরুল ইসলাম খান ও সাধারণ সম্পাদক নাফিউল করিম রাব্বি স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।

জেলা ছাত্রলীগের দলীয় প্যাডে পাঠানো ওই বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ইসলামপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আলহাজ মিয়াকে তাঁর নিজ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গঠনতন্ত্রের ৫ (গ) উপধারায় বর্ণিত বিধান সাপেক্ষে এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. বিশারত হোসেন রাফিকে ২৩ (গ) উপধারায় তাঁদের স্বীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলো। এ ছাড়া যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. ফারুক হোসেন সুমনকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এবং শিমুল পারভেজ জয় ও মো. শাওনকে সদস্য পদে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে সরকারি চাকরিতে নিযুক্ত হওয়ায় আলহাজ মিয়াকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়ে তাঁর জীবনের সর্বাঙ্গীন মঙ্গল এবং সমৃদ্ধি কামনা করা হয়েছে। তা ছাড়া আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে বর্ধিত সভা আয়োজন করে অনতিবিলম্বে উপজেলা ছাত্রলীগের সম্মেলনের প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশও দেওয়া হয়।

গত ১৮ জুলাই দলীয় পদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চেয়ে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বরাবর আবেদন করেন আলহাজ মিয়া। ওই আবেদনে বলা হয়, ২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সম্মেলনে আলহাজ মিয়াকে ইসলামপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। গত ১৬ জুলাই থেকে চাকরিজনিত কারণে সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে স্বেচ্ছায় অব্যাহতির আবেদন করেন তিনি।

উল্লেখ্য, ইসলামপুর শেখ হাসিনা ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজির (আইএইচটি) ছাত্রাবাস থেকে গত ২ জুন গভীর রাতে থানা-পুলিশ ও জামালপুর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সদস্যদের যৌথ অভিযানে মোটরসাইকেল, মাদক গ্রহণের সরঞ্জাম, সাতটি মদের খালি বোতল এবং টবে রোপণ করা একটি গাঁজার গাছ উদ্ধার করা হয়। এ ব্যাপারে জামালপুর মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপপরিদর্শক (এসআই) মোস্তাফিজুর রহমান ইসলামপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।

এ ঘটনায় ছাত্রলীগ নেতা আলহাজ মিয়া জড়িত থাকাসহ তাঁর রোষানল থেকে মুক্তি চেয়ে দায়েমুল ইসলাম জীবন মিয়া এবং রিদোয়ান আল রাফি নামের আইএইচটির দুই শিক্ষার্থী গত ৪ জুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ, জেলা ছাত্রলীগ এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বরাবর লিখিত আবেদন করেন। তবে শুরু থেকেই এসব অভিযোগ মিথ্যা, বানোয়াট ও ষড়যন্ত্রের অংশ বলে দাবি করে আসছেন আলহাজ মিয়া।

ওই দুই শিক্ষার্থীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আলহাজ মিয়ার সংশ্লিষ্টতা খতিয়ে দেখতে গত ৬ জুন রাতে দলীয় কার্যালয়ে এক জরুরি সভা ডেকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুস সালাম তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটির অনুমোদন দেন। এ ছাড়া জেলা ছাত্রলীগও তদন্ত কমিটি গঠন করে। তবে এখনো কোনো তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়নি। আইএইচটির কর্তৃপক্ষ তদন্তসাপেক্ষে ১১ শিক্ষার্থীকে শাস্তি দিলেও ছাত্রলীগ নেতা আলহাজ মিয়ার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি। ফলে একদিকে ছাত্রাবাসে মাদক বিস্তার এবং ক্ষমতার অপব্যবহারে আলহাজ মিয়া জড়িত কিংবা নির্দোষ কিনা তা অন্ধকারেই থাকল। অন্যদিকে অভিযোগের বোঝা মাথায় নিয়ে রাজনীতি ছেড়ে চাকরি জীবনে ঢুকলেন আলহাজ মিয়া।

জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাফিউল করিম রাব্বি বলেন, সম্প্রতি ধর্ম মন্ত্রণালয়ে চাকরি হয়েছে আলহাজ মিয়ার। চাকরিজনিত কারণ দেখিয়ে স্বেচ্ছায় দলীয় পদ থেকে অব্যাহতির আবেদন করায় তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। স্বেচ্ছায় দলীয় পদ থেকে অব্যাহতির আবেদন করায় আলহাজ মিয়ার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

আরও পড়ুন:

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত